প্রফেসর ইউনূসের মূল আইডিয়া হচ্ছে বাংলাদেশকে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ করা: প্রেস সচিব
Published: 2nd, May 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের মূল আইডিয়াটা হচ্ছে বাংলাদেশকে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’ করা- এমন মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন যে জায়গায় আছে, এখন যদি নতুন করে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করতে হয়, যেটা ইয়াং ছেলে-মেয়েদের প্রচুর জব দরকার...। বাংলাদেশের ইকোনমিক উন্নতি নতুন উচ্চতায় নিতে হলে এ দেশকে ম্যানুফেকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ম্যানুফেকচারিং হাবটা হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে সামনে রেখে।’
শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান প্রমুখ।
এ সময় শফিকুল আলম বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়, এটা পুরো রিজিওনের ৩০-৪০ কোটি লোকের জন্য। যে পণ্য এখানে তৈরি হবে, যে পণ্য মানুষজন এসে বানাবেন, সেই পণ্য শুধু বাংলাদেশ ও আশপাশের দেশে বিক্রি করবেন না, তারা তা বিদেশেও রপ্তানি করবেন। এ রপ্তানির জন্য সক্ষম বন্দর দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে যত টার্মিনাল আছে, লালদিয়া, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর, পুরো অঞ্চলটা বন্দরের জন্য উপযোগী। চট্টগ্রামের পোর্ট সিস্টেমকে সক্ষম করতে হবে। কারণ এটা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে হবে।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরেন একজন আমেরিকান রপ্তানিকারক বাংলাদেশে পণ্য বানিয়ে নিজের দেশে নিয়ে যাবে। সে তো চাইবে কত দ্রুত বানিয়ে পণ্য নিয়ে যেতে। এখানে বানাতে আসবে, কারণ এখানে কস্ট অব প্রডাকশন কম, বেতন দিতে হবে কম। বানানোর পর যত দ্রুত রপ্তানি করা যায়, এর জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এই জন্য বিদেশি সবচেয়ে ভালো কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলছি আমরা, যাতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ে।’
চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও আশপাশের টার্মিনালগুলোর সক্ষমতা ১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন টিইইউএস (২০ ফুট দীর্ঘ) কনটেইনার। এ সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে- ২০৩০ এর মধ্যে এটা ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টিইইউএসে নেওয়া, মানে ছয় গুণ বাড়ানো। বাংলাদেশকে ইকোনমিক হাব, ম্যানুফেকচারিং হাব করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নাম্বার ওয়ান, পূর্বশর্ত।’
এসময় দেশি অপারেটররা টার্মিনাল হ্যান্ডলিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে, বিশেষজ্ঞ লাগবে সেটি দেশি কারও নেই। উন্নত বিশ্বের অনেক বড় বড় বন্দর অভিজ্ঞ প্রাইভেট কোম্পানিকে দিয়েছে। আমাদের সেই বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নেই।’
মানবিক করিডোর নিয়েও কথা বলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘মানবিক করিডোরে আমরা ইচ্ছুক, যদি ইউএন চিন্তাভাবনা করে। পুরো জিনিসটা হবে দুইটি দেশের সঙ্গে কথা বলে। ইউএন যখন কাজ করবে মায়ানমার সরকার ও আমাদের সঙ্গে কথা বলে তারপর সিদ্ধান্তে আসবে। রাখাইনে আরও যারা আছে তাদের সঙ্গেও কথা বলবে। এটা সর্বসম্মতিক্রমে হবে। আমরা মনে করি, এটা এখনও অনেক অনেক দূরের বিষয়। আমরা তো বলেছি, যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে আসবে তখন সবার সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত হবে।’ এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের দ্বিচারিতা নিয়েও কথা বলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ইউন স প রসঙ গ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।