ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু এপ্রিলে দ্বিগুণ
Published: 3rd, May 2025 GMT
এবার মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে। মার্চের চেয়ে এপ্রিলে আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে। রোগী বাড়তে থাকলেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এ কারণে শুধু রাজধানীতে নয়, ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। মোট রোগীর ৫৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ ঢাকার বাইরের। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হয়ে আনাচে-কানাচে পানি জমে থাকায় বাড়ছে মশার বিস্তার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৩৬ জন। গত এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৭০১। মার্চে ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর এপ্রিলের চেয়ে এবার একই সময়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। গত বছর এপ্রিলে রোগী ছিল ৫০৪ জন, মারা যান দু’জন।
ডেঙ্গু রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২ হাজার ৬১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। রোগীর ১ হাজার ৪৮৮ জন ঢাকার বাইরের। সে হিসাবে রাজধানীর বাইরের রোগী ৫৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গত বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। মোট রোগীর ৬২ শতাংশ ছিলেন ঢাকা নগরীর বাইরের।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এবার মশক নিধন কার্যক্রমেও গতি নেই। জুলাই আন্দোলনের পর নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও আগের কাঠামোতেই রয়েছে। এতে নতুন করে ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বৃষ্টির পর ডেঙ্গুর ঝুঁকি আরও বেড়েছে। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা কাজ করছে না। এ ছাড়া বৃষ্টিতে নানা জায়গায় পানি জমে থাকে। পানি যদি দুই থেকে তিন দিন জমে, তাহলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। আগামীতে ডেঙ্গু আরও বাড়তে পারে।
এবার মশার ঘনত্ব বেশি
গত বছর এপ্রিলের চেয়ে এবার মশার ঘনত্ব বেশি। গত এপ্রিলে মশার ঘনত্ব ছিল ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। ‘মশা জরিপ ও ডেঙ্গু পূর্বাভাস’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য মিলেছে। এই জরিপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
তাদের জরিপে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহে মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া যাচ্ছে। মশা নিধন কার্যক্রম কার্যকর করা না গেলে এসব এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার সমকালকে বলেন, জরিপে যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেসব এলাকায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো সক্রিয় করে কার্যকর কর্মসূচি নিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে।
এদিকে রাজধানীর মহাখালীর বিশেষায়িত কভিড-১৯ হাসপাতালটি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমাতে সব হাসপাতালকে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মশার গতিপ্রকৃতি দেখতে জরিপ করা হয়েছে। ডেঙ্গুর গাইডলাইন হালনাগাদ করা হয়েছে। এই গাইডলাইনের ওপর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ চলছে।
নেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম
আগের বছরগুলোতে ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালাত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেন। এতে বড় ভূমিকা রাখতেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম নামাজের পর মুসল্লিকে এবং পূজা-অর্চনার পর পুরোহিতরা পূজারিকে সচেতন করতেন। এবার এমন কার্যক্রম একেবারেই নেই।
লার্ভিসাইডিং ও এডাল্ডিসাইডিংয়ের কাজও সকাল-বিকেল স্থানীয়দের সমন্বয়ে কাউন্সিলররা তদারকি করতেন। এবার মশক কর্মীদের কার্যক্রম কার্যত নেই। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা কাগুজে দায়িত্ব পালন করলেও প্রয়োজনীয় তদারকি করতে পারছেন না। ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ডের নানা কার্যক্রম একজন কর্মকর্তার পক্ষে দেখভাল করা অসম্ভব।
ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করার কথা। এবার সেটা করা হয়নি। লিফলেট বিতরণ, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসংযোগ, গণমাধ্যমে ডেঙ্গু সচেতনতা প্রচারসহ জনসচেতনতামূলক কোনো কর্মসূচি এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। খালে যাতে মশা জন্মাতে না পারে, সে জন্য পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলত। এবার ছয়টি ছাড়া বাকি খালের দিকে তেমন নজর নেই। আগে ড্রোন দিয়ে মশার উৎসস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এবার ড্রোনের ব্যবহার বন্ধ।
এ ছাড়া জলাশয়ে হাঁস, গাপ্পি মাছ, ব্যাঙ ছাড়ার মাধ্যমেও মশার লার্ভা নিধনের কাজ চলেছে। এবার এ তিনটি কার্যক্রমের কোনোটিই নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে জোরেশোরে যে জনসচেতনতা কার্যক্রম চলত, এবার সেটা চলছে ঢিমেতালে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর একযোগে সব মেয়র ও কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করার পর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কার্যক্রমে শুরু হয় ধীরগতি। এমনিতেই অতি প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ জন্য মশক নিয়ন্ত্রণের কাজে তারা সময় দিতে পারছেন কম। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দুই সিটি করপোরেশনের শতাধিক যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়ার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমও চলছে অনেকটা ধীরলয়ে। আর বর্জ্য অপসারণ সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে মশার বংশ বিস্তার বেড়ে যায়। অতীতে মশার বংশ বিস্তার উপযোগী যেমন ডাবের খোসা, টব, বেসিন, কমোড ইত্যাদি জিনিসপত্র যাতে যত্রতত্র পড়ে না থাকে, এ জন্য সিটি করপোরেশন সেগুলো কিনে নিত। এবার সেই উদ্যোগও অনুপস্থিত। উত্তরের জলাশয়গুলোতে নোভালরুন ট্যাবলেট দেওয়া হলেও দক্ষিণে সেটাও মিলছে না।
ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার অস্তিত্ব বা লার্ভা পাওয়া গেলেই মালিককে জরিমানা করা হতো। এবার সেই কার্যক্রমেও হাত গুটিয়ে আছে সিটি করপোরেশন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যে স্থবির হয়ে পড়েছে, তা মানতে নারাজ রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে বড় পরিসরে জনসচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে স্কুলে স্কুলে সচেতনতা কার্যক্রম চলছে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত শিগগিরই যাতে চালানো যায়, সে প্রস্তুতিও নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘অতীতে ভালো ফল না মেলায় এবার আমরা ড্রোন ব্যবহার করছি না। তবে মশক নিয়ন্ত্রণে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেছি, যা শিগগির দেখা যাবে। ডেঙ্গু বিষয়ে একটি ড্যাশবোর্ড ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে। ইউটিউবে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর কর মকর ত করপ র শ গত বছর ত কর র ন র পর দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নিট মুনাফা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে
বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় ২ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড অতিক্রম করলেও নিট মুনাফায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে ৪৭৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে, ২০২৩ সালে যা ছিল ৮০২ কোটি টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটি শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ব্যাংকটি সূত্রে জানা গেছে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ২০২৪ সালে ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ওই বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৮০২ কোটি টাকা; যা ছিল দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে গত বছরে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হয়েছে ৪৭৩ কোটি টাকা।
ব্যাংকটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে জানিয়েছে, ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করায় মুনাফা কমে গেছে; যা ভবিষ্যতে ব্যাংকটির স্বাস্থ্য উন্নতি করতে ভূমিকা রাখবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, এবার পরিচালন মুনাফা অনেক হলেও চাহিদামতো ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতের ঝুঁকি চিন্তা করে ব্যাংকের ভিত্তি শক্তিশালী করার পদক্ষেপ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য মুনাফা কমে গেছে। তবে শেয়ারধারীদের ঠিকই ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে।