এবার মৌসুমের আগেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে। মার্চের চেয়ে এপ্রিলে আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে। রোগী বাড়তে থাকলেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এ কারণে শুধু রাজধানীতে নয়, ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। মোট রোগীর ৫৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ ঢাকার বাইরের। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হয়ে আনাচে-কানাচে পানি জমে থাকায় বাড়ছে মশার বিস্তার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৩৬ জন। গত এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৭০১। মার্চে ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এপ্রিলে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর এপ্রিলের চেয়ে এবার একই সময়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। গত বছর এপ্রিলে রোগী ছিল ৫০৪ জন, মারা যান দু’জন। 

ডেঙ্গু রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২ হাজার ৬১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। রোগীর ১ হাজার ৪৮৮ জন ঢাকার বাইরের। সে হিসাবে রাজধানীর বাইরের রোগী ৫৬ দশমিক ৯৮  শতাংশ। গত বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। মোট রোগীর ৬২ শতাংশ ছিলেন ঢাকা নগরীর বাইরের।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এবার মশক নিধন কার্যক্রমেও গতি নেই। জুলাই আন্দোলনের পর নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও আগের কাঠামোতেই রয়েছে। এতে নতুন করে ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বৃষ্টির পর ডেঙ্গুর ঝুঁকি আরও বেড়েছে। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা কাজ করছে না। এ ছাড়া বৃষ্টিতে নানা জায়গায় পানি জমে থাকে। পানি যদি দুই থেকে তিন দিন জমে, তাহলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। আগামীতে ডেঙ্গু আরও বাড়তে পারে। 

এবার মশার ঘনত্ব বেশি 
গত বছর এপ্রিলের চেয়ে এবার মশার ঘনত্ব বেশি। গত এপ্রিলে মশার ঘনত্ব ছিল ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। ‘মশা জরিপ ও ডেঙ্গু পূর্বাভাস’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য মিলেছে। এই জরিপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.

কবিরুল বাশার। এডিস মশার গতিপ্রকৃতি দেখার জন্য রাজধানীসহ দেশের নির্ধারিত কিছু জায়গায় যন্ত্র বসিয়ে প্রতিদিন তথ্য সংগ্রহ করছে এই গবেষক দল।
তাদের জরিপে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, বরগুনা, বরিশাল, চাঁদপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহে মশার ঘনত্ব বেশি পাওয়া যাচ্ছে। মশা নিধন কার্যক্রম কার্যকর করা না গেলে এসব এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার সমকালকে বলেন, জরিপে যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেসব এলাকায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো সক্রিয় করে কার্যকর কর্মসূচি নিতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে।

এদিকে রাজধানীর মহাখালীর বিশেষায়িত কভিড-১৯ হাসপাতালটি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমাতে সব হাসপাতালকে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর সমকালকে বলেন, ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মশার গতিপ্রকৃতি দেখতে জরিপ করা হয়েছে। ডেঙ্গুর গাইডলাইন হালনাগাদ করা হয়েছে। এই গাইডলাইনের ওপর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ চলছে। 

নেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম
আগের বছরগুলোতে ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালাত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশেন। এতে বড় ভূমিকা রাখতেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। এ ব্যাপারে মসজিদের ইমাম নামাজের পর মুসল্লিকে এবং পূজা-অর্চনার পর পুরোহিতরা পূজারিকে সচেতন করতেন। এবার এমন কার্যক্রম একেবারেই নেই। 

লার্ভিসাইডিং ও এডাল্ডিসাইডিংয়ের কাজও সকাল-বিকেল স্থানীয়দের সমন্বয়ে কাউন্সিলররা তদারকি করতেন। এবার মশক কর্মীদের কার্যক্রম কার্যত নেই। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা কাগুজে দায়িত্ব পালন করলেও প্রয়োজনীয় তদারকি করতে পারছেন না। ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ডের নানা কার্যক্রম একজন কর্মকর্তার পক্ষে দেখভাল করা অসম্ভব। 
ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করার কথা। এবার সেটা করা হয়নি। লিফলেট বিতরণ, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসংযোগ, গণমাধ্যমে ডেঙ্গু সচেতনতা প্রচারসহ জনসচেতনতামূলক কোনো কর্মসূচি এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। খালে যাতে মশা জন্মাতে না পারে, সে জন্য পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চলত। এবার ছয়টি ছাড়া বাকি খালের দিকে তেমন নজর নেই। আগে ড্রোন দিয়ে মশার উৎসস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এবার ড্রোনের ব্যবহার বন্ধ। 

এ ছাড়া জলাশয়ে হাঁস, গাপ্পি মাছ, ব্যাঙ ছাড়ার মাধ্যমেও মশার লার্ভা নিধনের কাজ চলেছে। এবার এ তিনটি কার্যক্রমের কোনোটিই নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে জোরেশোরে যে জনসচেতনতা কার্যক্রম চলত, এবার সেটা চলছে ঢিমেতালে। 

জুলাই অভ্যুত্থানের পর একযোগে সব মেয়র ও কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করার পর সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কার্যক্রমে শুরু হয় ধীরগতি। এমনিতেই অতি প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এ জন্য মশক নিয়ন্ত্রণের কাজে তারা সময় দিতে পারছেন কম। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দুই সিটি করপোরেশনের শতাধিক যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়ার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমও চলছে অনেকটা ধীরলয়ে। আর বর্জ্য অপসারণ সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে মশার বংশ বিস্তার বেড়ে যায়। অতীতে মশার বংশ বিস্তার উপযোগী যেমন ডাবের খোসা, টব, বেসিন, কমোড ইত্যাদি জিনিসপত্র যাতে যত্রতত্র পড়ে না থাকে, এ জন্য সিটি করপোরেশন সেগুলো কিনে নিত। এবার সেই উদ্যোগও অনুপস্থিত। উত্তরের জলাশয়গুলোতে নোভালরুন ট্যাবলেট দেওয়া হলেও দক্ষিণে সেটাও মিলছে না। 
ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাসাবাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে মশার অস্তিত্ব বা লার্ভা পাওয়া গেলেই মালিককে জরিমানা করা হতো। এবার সেই কার্যক্রমেও হাত গুটিয়ে আছে সিটি করপোরেশন। 

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যে স্থবির হয়ে পড়েছে, তা মানতে নারাজ রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে বড় পরিসরে জনসচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে স্কুলে স্কুলে সচেতনতা কার্যক্রম চলছে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত শিগগিরই যাতে চালানো যায়, সে প্রস্তুতিও নিচ্ছি।’ 
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘অতীতে ভালো ফল না মেলায় এবার আমরা ড্রোন ব্যবহার করছি না। তবে মশক নিয়ন্ত্রণে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেছি, যা শিগগির দেখা যাবে। ডেঙ্গু বিষয়ে একটি ড্যাশবোর্ড ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হবে। ইউটিউবে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে।’ 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর কর মকর ত করপ র শ গত বছর ত কর র ন র পর দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ