মানহীন সিমেন্টের দলায় খোয়া, সস্তায় বিক্রি
Published: 5th, May 2025 GMT
পরিত্যক্ত সিমেন্টের দলা ভেঙে তৈরি করা খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী হিসেবে। এমন মানহীন সামগ্রী ব্যবহারে ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণকাজ চলছে কমলগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে।
বস্তাবন্দি সিমেন্ট দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলে সেগুলো শুকিয়ে জমাট বেঁধে শক্ত যায়। মূলত মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্টে থাকা ক্লিঙ্কার এভাবে জমাট বেঁধে পাথরে পরিণত হয়। সেই দলা ভেঙে পাথরের খোয়া হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মাণকাজে। এতে করে ভালো মানের ইট বা পাথর থেকে আসল খোয়ার মতো দীর্ঘস্থায়িত্ব পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় নির্মিত ভবন নিয়ে ঝুঁকির আশঙ্কা প্রবল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের উসমানগড় এলাকায় মূলত মেয়াদোত্তীর্ণ এই পাথরের খোয়া উৎপাদন করা হচ্ছে। সেই খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ভবন নির্মাণে।
জানা যায়, খোয়া মূলত কংক্রিট তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘস্থায়ী ও মজবুত স্থাপনার জন্য প্রথম শ্রেণির মানসম্পন্ন পাথর বা ইটের খোয়া ব্যবহার করা নিরাপদ। এমনটাই বলছেন অভিজ্ঞ নির্মাণ শ্রমিকরা। সেখানে মানহীন খোয়া ব্যবহার হলে স্থাপনা ঝুঁকিতে থাকে।
বস্তাভর্তি সিমেন্ট পরিত্যক্ত অবস্থা বছরের পর বছর মাটির মধ্যে থাকার এক পর্যায়ে সিমেন্টের উপকরণগুলোর মান নষ্ট হয়ে সেগুলো দলা বেঁধে শক্ত হয়ে যায়। এভাবে সিমেন্টে থাকা অন্যতম উপকরণ ক্লিঙ্কার জমাট বেঁধে শক্ত পাথরের মতো দলায় পরিণত হয়। সেসব পাথর সংগ্রহ করে একটি মহল উসমানগড় এলাকায় তৈরি করছে খোয়া।
মেয়াদ উত্তীর্ণ পাথর দিয়ে খোয়া তৈরির বিষয়ে উসমানগড়ে অবস্থিত কারখানার ব্যবস্থাপক সুমন মিয়া বলেন, শমশেরনগরে অবস্থিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ইউনিট থেকে ১৪ লাখ টাকায় এগুলো কিনে আনা হয়েছে। এখন খোয়া তৈরি করা হচ্ছে। যারা কাজে লাগাবেন তারা পাথরের খোয়া দেখেশুনে কিনে নিচ্ছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো.
গেলে সেটি তাদের বিষয়। সূত্র বলছে, অনেক স্থানে রাস্তা মেরামতের কাজে গোপনে মানহীন এ খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত তাদের কাছে আসেনি। এ ছাড়া এমন কিছু সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
লাউয়াছড়ায় পর্যটকের ভিড়ে ‘বিঘ্নিত’ বন্য প্রাণীর জীবন
ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জনপ্রিয় গন্তব্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। বিরল প্রজাতির নানা জাতের গাছ ও প্রাণীতে ভরা সংরক্ষিত বন এটি। তবে পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত ভিড় ও হইহুল্লোড় ‘উৎপাত’ হিসেবে দেখা দেয়।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটি, ট্যুর গাইড ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চা-বাগান, পাহাড়-প্রকৃতি, হাওর-বাঁওড়ের কারণে মৌলভীবাজার একটি পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত। তবে কিছু এলাকা আছে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য স্পর্শকাতর। এর মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি। এবারের দীর্ঘ ছুটিতে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সাত দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৫৮১ জন দর্শনার্থী ঘুরতে গেছেন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৫ টাকা।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। সরকার ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। উদ্যানটি ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।
লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, পর্যটনের ক্ষেত্রে লাউয়াছড়ার বন্য প্রাণী, পরিবেশ-প্রকৃতির এই বাস্তবতাকে অনেকটাই বিবেচনায় রাখা হয় না। পর্যটকেরা অন্য স্থানের মতো এখানেও ঘোরার আনন্দতে হইহুল্লোড় করেন। বেশির ভাগ পর্যটকদের মধ্যে গাইড সঙ্গে নিতে অনীহা আছে। বনের ভেতর করণীয় আচরণ অনুসরণ করেন না অনেকে। অনেক পর্যটক ব্লুটুথ স্পিকারে গান বাজিয়ে বনে ঘুরেন। বন্য প্রাণী বিশেষ করে বানরকে উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। প্লাস্টিক প্যাকেট নির্ধারিত স্থানে না ফেলে যেখানে-সেখানে ফেলে রাখেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে গাড়িগুলো উচ্চ গতিতে হর্ন বাজিয়ে চলাচল করে। সব মিলিয়ে বনের নির্জনতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
পর্যটকের ভিড়, হইহল্লোড়ের কারণে যে প্রাণীদের অসুবিধা হয়, সেটা স্বীকার করে নিলেন পর্যটক সুভাষ বড়ুয়া।
পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, মানুষের উপস্থিতি, শব্দ—এসবে আতঙ্কিত বন্য প্রাণী অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়ে। গভীর বনের মধ্যে আত্মগোপনে চলে যায়। কিছু বানর ছাড়া আর তেমন কোনো প্রাণীর দেখা মিলে না। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।
প্রাণপ্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরবর্তী সময়ের একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর লাউয়াছড়ার আরেক সর্বনাশ করেছে অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক পর্যটন। এই বনের পর্যটক ধারণক্ষমতাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণে মানুষ ঢুকেন এখানে। এটি এখানকার বন্য প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস, চলাচল ও প্রজননে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। একই সঙ্গে বনের ভেতর রেলপথ, ব্যস্ত সড়কপথ প্রতিদিন বন্য প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাউয়াছড়া কোনো একক বিচ্ছিন্ন বাস্তুতন্ত্র নয়। এর আশপাশের চা-বাগান, জলাভূমি, গ্রাম, বন—সবকিছু মিলিয়েই এর সীমানা নির্ধারণ এবং স্থানীয় বননির্ভর জনগণকে সমন্বয় করে বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক বনব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার।
লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও মনিটরিং দলের সদস্য জনক দেববর্মা মনে করেন, বনে গণপর্যটন বন্ধ করলে বনের উপকার হবে। আর পর্যটকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার কাজী নাজমুল হক বলেন, লাউয়াছড়ায় পর্যটক সীমিত করতে টিকিটের ফি বাড়ানো হয়েছে। কীভাবে পর্যটক সীমিত করা যায়, বিকল্প কী তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে। সড়কে ২০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা, কিন্তু তা কেউ মানতে চান না। এখানে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ দরকার। বন্য প্রাণী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের বিচরণে বন্য প্রাণীরা একটু আড়ালে থাকে।