শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৩৫৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেই সঙ্গে এই ৯ মাসের জন্য শেয়ারধারীদের ১৮ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত এই লভ্যাংশবাবদ কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ১ টাকা ৮০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে।

কোম্পানিটির পর্ষদের গতকাল মঙ্গলবারের সভায় চলতি বছরের ৯ মাসের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করে লভ্যাংশের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পর্ষদ সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানিটি মুনাফা ও লভ্যাংশের এই তথ্য জানিয়েছে।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ২৫ কোটি টাকা বা সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৩৩১ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৬ কোটি টাকায়। এর মধ্যে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মুনাফা করেছে ১২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে কোম্পানিটির ৯ মাসের মুনাফার প্রায় ৩৪ শতাংশই এসেছে এই তিন মাসে। আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে লাফার্জহোলসিমের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৮৮ কোটি টাকা।

এদিকে কোম্পানিটি অন্তর্বর্তীকালীন যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে লভ্যাংশবাবদ বিতরণ করা হবে প্রায় ২০৯ কোটি টাকা। ঘোষিত এই লভ্যাংশের বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। লভ্যাংশবাবদ তাঁরা পাবেন প্রায় ১৩২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। কারণ, গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ৬৩ শতাংশের বেশি ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। ঘোষিত লভ্যাংশবাবদ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লভ্যাংশ পাবেন কোম্পানিটির শেয়ারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের সোয়া ২২ শতাংশের বেশি ছিল তাঁদের হাতে। সেই হিসাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশবাবদ পাবেন প্রায় ৪৭ কোটি টাকা। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ বাবদ ২৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা পাবেন। গত সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ ছিল ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর কোম্পানিটির শেয়ারের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ বাবদ পাবেন ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

* শেয়ারধারীদের জন্য ১৮ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি।
* ঘোষিত লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটি বিতরণ করবে ২০৯ কোটি টাকার বেশি।
* গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে লাফার্জহোলসিম ২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৯৭ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশের বেশি। ব্যবসা যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে উৎপাদন খরচ। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ ছিল ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৯৭ কোটি টাকার বিক্রি বৃদ্ধির বিপরীতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১২৭ কোটি টাকা। তবে চলতি বছরের ৯ মাসে কোম্পানিটির আর্থিক খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সুদ আয়। এ কারণে কোম্পানিটির মুনাফাও বেড়েছে।

গত বছরের চেয়ে ভালো মুনাফা ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধির বিষয়ে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও বলেন, সরকারি খাতের বিনিয়োগে মন্দা ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণে নির্মাণশিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। তা সত্ত্বেও লাফার্জহোলসিমের ব্যবসায় ভালো করেছে। লাফার্জহোলসিমের পণ্য ও সেবার প্রতি ক্রেতাদের আস্থার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লাফার্জহোলসিমের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫১ টাকা ২০ পয়সা। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০ পয়সা কমেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ৯ ম স জ ল ই স প ট ম বর ট ক র ব যবস গত বছর র আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

ছেলেমেয়েকে ২০ কোটি টাকার শেয়ার উপহার দিলেন বাবা

নিজের দুই সন্তানকে ২০ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ার উপহার দিলেন বাবা। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ক্রাউন সিমেন্টের উদ্যোক্তা–পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল তাঁর দুই সন্তানকে কোম্পানিটির ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ শেয়ার উপহার দিয়েছেন। এরই মধ্যে এই শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে আজ সোমবার উপহারের এই শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি জানিয়েছে ক্রাউন সিমেন্ট উদ্যোক্তা–পরিচালক আলমাস শিমুল। বর্তমানে তিনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছেন। জানা যায়, দ্বিতীয় প্রজন্মকে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের হাতের শেয়ারের একটি অংশ সন্তানদের মধ্যে হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আলমাস শিমুল তাঁর ছেলে সায়হাম সাদিক পিয়াল ও মেয়ে শোভা সোহাকে ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ শেয়ার উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেছেন। ঢাকার বাজারে আজ সোমবার ক্রাউন সিমেন্টের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫১ টাকা। সেই হিসাবে ৪০ লাখ শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

শেয়ার উপহার দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আলমাস শিমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যবসায় সক্রিয় থাকতে থাকতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ব্যবসার উত্তরাধিকার হিসেবে যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে চাই। এ কারণে তাদের মধ্যে শেয়ারের ন্যূনতম মালিকানা হস্তান্তরের পাশাপাশি ব্যবসায়ও যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা দেশ ও কোম্পানির জন্য এখন থেকেই যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের ব্যবসার পরিধিও এখন অনেক বড় হয়েছে। তাই আমরা তাদের ওপর কিছু দায়িত্ব দিয়ে নতুন নতুন ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিতে বেশি মনোযোগী হতে চাই।’

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে উত্তরাধিকার নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সহজে হয়ে থাকে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রাউন সিমেন্টের অন্য পরিচালকেরাও শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে তাঁদের একাধিক সন্তানকে ব্যবসায় যুক্ত করেছেন।

জানা যায়, আলমাস শিমুলের ছেলে সায়হাম সাদিক কানাডা থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে এরই মধ্যে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। আর মেয়ে শোভা সোহা মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওই কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। তাই ক্রাউন সিমেন্টের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিদের পর্ষদে আসতে হলে ওই কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার তাঁদের হাতে থাকতে হবে। আর ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের এই শর্ত পূরণ করতে হলে বর্তমানে কোম্পানিটির ২৯ লাখ শেয়ারের দরকার হবে।

ক্রাউন সিমেন্ট ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির শেয়ারের অর্থাৎ মালিকানার ৫২ শতাংশের বেশি রয়েছে উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। আর ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ শেয়ার। বাকি প্রায় ১৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ