মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
নকুল শর্ম্মা
অবসর বিকেলের গল্প
দিনের ক্লান্তি মুছে
ছুটে আসে কিছু নিরিবিলি সময়,
অভিমানী হৃদয় লিখে
ভালোবাসার স্বরলিপি।
নিস্তব্ধ পাহাড়ে বৈকালিক সুর
মনের ময়ূর কল্পনার
পেখমে আঁকে প্রণয়ের চিঠি,
হৃদয়ের কম্পনে শুধু
তোমার অনিন্দ্য বাক্যালাপ।
পড়ন্ত সূর্যের নিভৃতচারিতা
গন্তব্যে ফেরা পাখির ঠোঁটে রাত্রির নীরবতা,
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অব্যক্ত সন্ধ্যার বন্দনা।
অনন্ত সুন্দরের মানসপ্রতিমা
তারার রাজ্যে ধ্রুবতারার আধিপত্য,
সময়ের স্রোতে অনাদিকালের বাসর রচনা।
দৃশ্যদেবী
সুমন শামসুদ্দিন
তোমার ওই–
রেশম-কোমল চুলকে আমি
অনেক বেশি ঈর্ষা করি।
ইচ্ছে করে–
ওই চুলের মতো
আমিও তোমার কপোল ছুঁয়ে
ঘুমিয়ে পড়ি।
চুলের ছোঁয়ায়–
লাজুক-রাঙা কপোল তোমার
মন ভোলানো লাস্যময়ী।
কপোলের ওই মুগ্ধ-চারু
টোল ছুঁয়েছে আমার মনের
হৃদয়-গহিন প্রণয়-কুটির।
তোমারও ওই–
আয়ত-আঁখির
ঐন্দ্রজালিক মোহিনী-দৃষ্টে
আটকে আছি শাশ্বত-কাল!
হতাম যদি রেশমি চুড়ি–
তোমার হাতের স্পর্শ নিয়ে
গ্রহাস্তরের অভিসারে দিতাম পাড়ি।
যখন তুমি–
গান কর ওই মোহন সুরে,
আমার চোখে তুমি ছাড়া
জাগতিক সব অলক্ষিত।
বক্ষ-মরুর রুক্ষপথে
অবশেষে পেলাম খুঁজে–
লৌকিকতার আয়ুষ্কালে
তুমি আমার দৃশ্যদেবী।
বিশৃঙ্খল বেঁচে থাকা
ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়
বেঁচে থাকা আজকাল; বিশৃঙ্খলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হৃদয়ের বেদি ব্যথা, ঘুমের অসুখ, আহারের অরুচি,
বিছানায় ছন্নছাড়া অনিয়মের ছড়াছড়ি—
বয়সের ক্লান্ত লোমে বেড়ে চলেছে ক্রমাগত।
দিন-রাত কবিতার টেবিলে তৈরি হচ্ছে
তোমাকে নিয়ে বাঁচার গল্প!
তবুও স্বপ্নের মধ্যে জেগে থাকার স্মৃতি
তোমার নেপথ্যে নিশীথের হট্টগোল।
ভাঙা চুড়ির আওয়াজ, মোলায়েম স্পর্শ,
দুঃখের ভর সমেত একটি শরীর–
আর বল ক’জন নারীই বা নিতে চাইবে?
কে জানে– কবে শেষ হবে এই দুর্ভেদ্য জীবন!
স্বর্গ ফেরত
ওলি মুন্সী
বাতাসে তোমার গন্ধ
রোদ্রে তোমার রূপ
কালো চুলে মেঘের কারু
প্রকৃতি হয়েছে চুপ।
জোছনা ভরা চক্ষু তোমার
সদ্য হয়েছে ভোর
মুগ্ধ করা রমণী তুমি
স্বর্গ ফেরত হুর।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠাতে বিধিমালা হচ্ছে
সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে এক কর্মস্থলে কেউ আর দীর্ঘদিন থাকতে পারবেন না। এতে মাঠের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা-উপজেলা প্রশাসনে বদলি করা যাবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য সচিবালয়ের কর্মচারীদের মতো নিয়োগবিধি প্রণয়নের প্রস্তাব ওঠে। পর্যায়ক্রমে এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার ‘জনপ্রশাসন এবং মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য গত ৩০ এপ্রিল আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য পৃথক নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪। এই বিধিমালা অনুযায়ী, সচিবালয়ের কর্মচারীরা পদোন্নতির মাধ্যমে উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) হতে পারেন।
আর ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (দশম গ্রেড) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অভিন্ন বিধিমালা হলে একই নিয়মে হবে পদোন্নতি।
এ বিষয়ে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নিয়োগ বিধিমালা-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগির কমিটি বৈঠকে বসবে। আলোচনার পর বোঝা যাবে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। কেন এই বিধিমালা প্রয়োজন, সেটিও পর্যালোচনা করা হবে।’
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসন থেকেও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটা করার। কারণ উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের ধরন একই। তাই এটিকে ভালো উদ্যোগ বলা যায়। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত হলে বদলিসংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানা যাবে।
এক পক্ষের সমালোচনা, আরেক পক্ষের স্বাগত
সচিবালয়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় ১৩ হাজার জন। নন-ক্যাডাররা (প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা এও এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা পিও) পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী সচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব হতে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের পদ দেওয়া হয় না। এজন্য ৫ আগস্টের পর আন্দোলনও করেন কর্মচারীরা। পরে কয়েক দফায় সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি হয় তাদের। এখন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী সচিব ৩৫৬ জন, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ৭৮ জন ও উপসচিব পদে ৯ জন কর্মরত। আরও বেশি পদ সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন চলছে।
ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এও পদ আছে ৮৩১টি। এর মধ্যে কর্মরত ৪৭৫ জন। বাকি পদে পদোন্নতি ও নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতার খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনে ব্রিটিশ আমল থেকে এও পদ থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ২০১৯ সালে সংখ্যা বাড়ানো হয়। মাঠ পর্যায়ে সব মিলে এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন অন্তত ১৫ হাজার।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আন্দোলন করেন কর্মচারীরা। সমস্যার সমাধান হলে কেউ আন্দোলন করবেন না। তিনি বলেন, ‘নন-ক্যাডারদের বান্দরবানে পোস্টিংয়ের ভয় দেখানোর জন্য এ উদ্যোগ। আন্দোলন বন্ধের কৌশল হিসেবে অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা কেউ মানবে না। সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে।’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় এবং মাঠ প্রশাসন এক করলে সমস্যা তৈরি হবে। এজন্য সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাঠে বদলি করা হয় না। সচিবালয়ে এটা করা হলে অন্যান্য দপ্তরে জটিলতা বাড়বে।
বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি এস এম জাহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘সচিবালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি পাচ্ছেন। অথচ আমাদের দশম গ্রেডের পর পদোন্নতির সুযোগ নেই। এটা বৈষম্য। আমরা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছি। সবার সুযোগ-সুবিধা সমান হওয়া উচিত।’