মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা খরচের নিরীক্ষা অনিষ্পন্ন আছে। কিন্তু তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক পলাতক। তাই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। এমন তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু পিডিবি নেয় মাত্র ১৮৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো সক্ষমতা ব্যবহার না হওয়া দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে সপ্তাহে দুবার কয়লা আমদানি করতে হয়। এত দিন নিম্নমানের কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হতো। এখন সেই নিম্নমানের কয়লা পরীক্ষার জন্য ব্যাংককে পাঠানো হয়েছে। এখন যাঁরা পাঠিয়েছেন, তাঁরা পরীক্ষার প্রতিবেদন আনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে মাতারবাড়ী এলাকায় একটি সড়ক বানাতে অত্যধিক খরচের সংবাদ এসেছে। প্রতি কিলোমিটারে রেকর্ড পরিমাণ হওয়ার কথাও উঠে আসে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব সরেজমিনে ঘুরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, সড়কটির বেশির ভাগ অংশ উঁচু–নিচু। সেখানে সেতু-কালভার্ট বানাতে হয়েছে। সড়কের দৈর্ঘ্যের অর্ধেকের বেশি সেতু-কালভার্ট। তাই খরচ খুব বেশি হয়নি।

এ ছাড়া প্রকল্প যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে কি না, তা দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা।

আজকের একনেক সভায় ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার ৯টি প্রকল্প পাস করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় প রকল প উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

২১ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

২১ দফা দাবিতে রংপুর কারমাইকেল কলেজে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় কয়েকশ শিক্ষার্থী নগরীর লালবাগ এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন।

রোববার সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এরপর তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে সড়কে অবস্থান নেন। এতে করে রাস্তার দু’পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন যাতায়াতকারীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী সদস্যরা লালবাগ রেলক্রসিংয়ে যান। আন্দোলনকারীদের সরিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক করেন। 

এরপর কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার তোফায়েল আহমেদসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেন।

শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন, আরমিলা জাহান ও মনীষা ইসলাম জানান, উত্তরের অক্সফোর্ডখ্যাত কারমাইকেল কলেজ শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা। রংপুরের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও এখানে আধুনিক ক্লাস রুম নেই, পরিবহন ব্যবস্থা নেই, বিশাল কলেজের নিরাপত্তার জন্য কোনো পুলিশ বক্স নেই। এমন নানা অপ্রাপ্তির মাঝে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের ২১ দফা দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ফ্যান, বেঞ্চ, পর্যাপ্ত আলো, হোয়াইট বোর্ড নিশ্চিত করা, প্রতি বিভাগে প্রজেক্টরের মধ্যে ক্লাস পরিচালনার ব্যবস্থা করা, মাসিক পরীক্ষার আয়োজন করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জারি করা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, প্রতি ক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচন করা ও শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ওয়ার্কের ব্যবস্থা করা, কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশ ও শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, কলেজে নতুন বিভাগ সংযোজন করা, শতাব্দী ভবনে ক্লাস শুরু করা ও ক্লাস রুমের সংখ্যা বাড়ান, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড নিশ্চিত করা, পুলিশ বক্স নির্মাণ, যাতায়াতের জন্য বাস কেনা, অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণকাজ শেষ করা, ছাত্র ও ছাত্রী বিশ্রামাগার মেরামত ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, ওসমানী হল সংস্কার করে দ্রুত সিট বরাদ্দ, সিএম হলের পরিবর্তে নতুন হল নির্মাণ, হেল্পলাইন নম্বর চালু, আইসিটি ভবনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের সুবিধা নিশ্চিত করা, আর্থিক কার্যক্রমে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু, কলেজের দখল হওয়া জায়গা উদ্ধার, কলেজের প্রধান ফটক নির্মাণ, লাইব্রেরি ও সেমিনারে পর্যাপ্ত বই সরবরাহ, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কলেজে কম্পিউটার, ফটোকপি, অফিস স্টেশনারি দোকানের ব্যবস্থা করা।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি পূরণে কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার দপ্তরসহ কলেজের বিভিন্ন বিভাগে তালা লাগিয়েছিল। পরে প্রশাসন ও পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার মাধ্যমে দাবি পূরণের ঘোষণা না এলে তারা কলেজে আবারও শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ