গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট সন্তোষজনক নয়
Published: 8th, May 2025 GMT
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে স্টেক হোল্ডারদের রাখা হয়নি। তারা যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ, সেটা আমরা চাই। গত ১৬ বছর গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। বর্তমান সরকারের আমলে যেন সেটা না হয়।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যম সংস্কার: সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে গণমাধ্যমের ইমেজের ক্ষতি হয়েছে, গণমাধ্যম বিশ্বাষযোগ্যতা হারিয়েছে। এই সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম চতুর্থ স্তম্ভ হতে পারেনি। চতুর্থ স্তম্ভ দাবি করা আগে আমাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ হতে হবে। আগামীতে যে সরকার আসবে সেই সরকার যদি এই সংস্কার না মানে তাহলে আমরা কী করবো সেই পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রের চেয়াম্যান এম আব্দুল্লাহ বলেন, সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে তা নিয়ে সাংবাদিক সংগঠনগুলো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিচ্ছে না। আমরা নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছি। কিন্তু এখানে প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটা চূড়ান্ত হয়ে গেলে সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু তখন আন্দোলন করলে এটা সহসাই পরিবর্তন করা যাবে না। সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের ওপর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ডিআরইউ সহসভাপতি গাজী আনোয়ারের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মিয়া হোসেন।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ডেইলি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বিএফইউজে’র সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য শহিদুল ইসলাম, ডিইউজে সভাপতি শহিদুল ইসলাম, আসিফ শওকত কল্লোল, বাসসের শেখ দিদারুল আলম প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে সোনালী, জনতাসহ ১৪ প্রতিষ্ঠানের জন্য পদোন্নতি নীতিমালা করা হলো
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গতকাল সোমবার দুটি পদোন্নতি নীতিমালা জারি করেছে। একটি হচ্ছে ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২৫ ’, আরেকটির নাম ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২৫।’
উভয় নীতিমালা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২০২৪ সালের ১০ জুলাই দুটি কমিটি গঠন করেছিল। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলির সঙ্গে বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে ভিন্নতা থাকায় কমিটি করা হয়েছিল আলাদা।
কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজটি করছিল ঢিমেতালে। পটপরিবর্তনের পর নাজমা মোবারেক গত বছরের ৩০ অক্টোবর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব হিসেবে যোগ দেন। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে এ বিভাগের সময়াবদ্ধ সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। কাজটি শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল গত ৩০ জুনের মধ্যে, যার এক মাস পাঁচ দিন পর শেষ পর্যন্ত এটি হয়েছে।
জানা গেছে, খসড়া নীতিমালার ওপর চলতি বছরের ১৯ জুন ও ২১ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। খসড়া তৈরিতে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয় এবং সবার মতামতের আলোকে তৈরি করা হয় উভয় নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া। জারি করার আগের দিন এতে সম্মতি দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য যেটি করা হয়েছে, তা প্রযোজ্য হবে সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির (বিডিবিএল) জন্য। অন্যটি প্রযোজ্য ছয় বিশেষায়িত ব্যাংক ও দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য। এগুলো হলো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন গ্রেডে একই সময়ে জনবল নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তাঁদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এত দিন আলাদা নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছিল। সরকার চাচ্ছিল, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা, সামঞ্জস্য ও ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হওয়ার যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে, তা আর হতে দেওয়া যাবে না। পদোন্নতি হবে বরং যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে। আর এর মাধ্যমে সুশৃঙ্খল পদোন্নতি কাঠামো প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে।
উভয় নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে পদোন্নতির জন্য প্রার্থীদের যেকোনো ধরনের তদবির বা সুপারিশ অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপকদের জন্য প্রযোজ্য হবে এটি।
নীতিমালায় বলা আছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সন্তোষজনক চাকরির রেকর্ড, মেধা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রির নিচে কেউ পদোন্নতির যোগ্য হবেন না। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ফিডার পদে চাকরিকাল গণনা করার জন্য প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর হবে পদোন্নতির ভিত্তিকাল। বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভিত্তিকাল ৩০ জুন।
কোনো কর্মচারীর ফিডার পদে সর্বশেষ তিন বছরের যেকোনো বছরের চাকরি সন্তোষজনক না হলে, অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকলে পরের পদের জন্য বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে, বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ও দণ্ডকাল বহাল থাকলে ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে বা দণ্ড পেলে তাঁকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে না।
পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত ১০০ নম্বরের মধ্যে এসিআরের ৫ বছরের গড় নম্বর ৪৫। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতায় ১৫, ফিডার পদে চাকরিকালে ১৫, ফিডার পদে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতায় ৪, ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় (ব্যাংকিং ডিপ্লোমা) ১০, দুর্গম এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতায় ১, শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে ফিডার পদে কাজের অর্জন ২ ও সাক্ষাৎকার বা মৌখিক পরীক্ষায় ৮ নম্বর। বাকি ৯২ নম্বরের মধ্যে পদোন্নতিপ্রত্যাশী প্রার্থীকে কমপক্ষে ৭৫ পেতে হবে। উভয় নম্বর যোগ করে তৈরি করা হবে মেধাতালিকা।
কেমন হলো নীতিমালা, এমন প্রশ্নের জবাবে জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটার দরকার ছিল। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’
যাঁরা আগে যেকোনোভাবে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁরাই তো এখন এগিয়ে থাকবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জনতা ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘আমরা নীতিমালাটি বিচার-বিশ্লেষণ করছি। সমস্যা পেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাব।’