মিস ইউনিভার্সে ব্যাপক বিতর্ক, বর্জন করলেন অনেক প্রতিযোগী
Published: 6th, November 2025 GMT
৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। কারণ, থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে এক কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মিস মেক্সিকো ফাতিমা বোস্ককে অপমান করায় মঞ্চ ছেড়ে প্রতিবাদ জানিয়ে চলে গেছেন বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী। এর মধ্যে বর্তমান মিস ইউনিভার্স ভিক্টোরিয়া কায়ার থেইলভিগও আছেন।
ঘটনাটি ঘটে প্রতিযোগিতার প্রাক্-ইভেন্টে, গত মঙ্গলবার। মিস ইউনিভার্স থাইল্যান্ডের পরিচালক নাওয়াত ইটসারাগ্রিসিল, যিনি আয়োজক দেশের পক্ষ থেকে দায়িত্বে ছিলেন, ফেসবুক লাইভে ফাতিমাকে তিরস্কার করেন। কারণ, মিস মেক্সিকো নাকি থাইল্যান্ডকে প্রচার করে—এমন কোনো কনটেন্ট পোস্ট করেননি। নাওয়াতের মুখ থেকে বের হয় অপমানজনক শব্দ, তিনি ফাতিমাকে ‘বোকা’ বলে উল্লেখ করেন। পুরো ঘটনা চার মিনিটের কম সময়ে ঘটে গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই তা নিয়ে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
নাওয়াত বলেন, ‘মেক্সিকো, তুমি কোথায়? শুনেছি তুমি থাইল্যান্ড-সম্পর্কিত কোনো কিছু সমর্থন করছ না, এটা কি সত্যি?’ এরপর তিনি দাবি করেন, ফাতিমা নাকি থাইল্যান্ডের আয়োজক দলের কথা না শুনে মিস মেক্সিকো সংগঠনের নির্দেশ অনুসরণ করছেন। কথার উত্তরে ফাতিমা শান্তভাবে বলেন, ‘আমি কথা বলছি। কিন্তু আপনি আমাকে একজন নারী হিসেবে সম্মান করছেন না।’
এ উত্তরে ক্ষুব্ধ হয়ে নাওয়াত নিরাপত্তাকর্মী ডেকে ফাতিমাকে বাইরে বের করে দিতে বলেন। কিন্তু দৃশ্যটি অন্য মোড় নেয়। অন্যান্য প্রতিযোগী একে একে মিস মেক্সিকোর পাশে দাঁড়ান। কেউ কেউ সরাসরি নাওয়াতের উদ্দেশে প্রতিবাদ জানান, অনেকে সরাসরি অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে যান।
মিস ডেনমার্ক ও বর্তমান মিস ইউনিভার্স ভিক্টোরিয়া কায়ার থেইলভিগ বলেন, ‘এটা নারীর অধিকারের প্রশ্ন। এভাবে কাউকে অপমান করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এ জন্যই আমি আমার কোট তুলে নিচ্ছি এবং এই অনুষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছি।’
ঘটনার পর মিস ইউনিভার্স সংস্থা এক বিবৃতিতে নাওয়াতের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা জানায় এবং তাঁর দায়িত্ব সীমিত করার ঘোষণা দেয়। সংস্থার প্রেসিডেন্ট রাউল রোচা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি কখনোই নারীর মর্যাদা ও সম্মানের মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হতে দেব না। নাওয়াত ভুলে গেছেন, একজন আয়োজকের আসল দায়িত্ব অতিথিদের সম্মান জানানো, তাঁদের পাশে থাকা এবং মানবিক সদাচরণ নিশ্চিত করা।’ তিনি আরও জানান, সংগঠনটি নাওয়াতের বিরুদ্ধে প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
বিতর্কের মধ্যেই প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। বুধবার ব্যাংককে আরেকটি আনুষ্ঠানিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল রাউন্ড হবে ২১ নভেম্বর। এদিকে নাওয়াত পরে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলাম। কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বিশেষ করে সেদিন উপস্থিত থাকা প্রায় ৭৫ প্রতিযোগীর কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।’
অন্যদিকে মিস মেক্সিকো ফাতিমা নিজের অবস্থানে অনড় থেকে বলেন, ‘আমি কথা বলতে ভয় পাই না। আমি এখানে এসেছি নারীদের প্রতিনিধি হয়ে, আমাদের অধিকার রক্ষার কথা বলার জন্য। আমি কোনো পুতুল নই, যে শুধু সাজবে আর চুপ করে থাকবে। আমি আমার দেশের মেয়েদের হয়ে কথা বলব, এটাই আমার লক্ষ্য।’
এনডিটিভি অবলম্বনে
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ইউন ভ র স অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু নেতার প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানো নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডাকসুর এক নেতার একজন প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমা ওই ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসাচ্ছেন এবং ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলছেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য ওই ব্যক্তির ব্যাগে লাঠি দিয়ে কয়েকবার আঘাত করছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবীণ এক ব্যক্তির সঙ্গে এমন আচরণের প্রতিবাদ জানান। আবার কেউ কেউ এ ঘটনার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সর্বমিত্র চাকমা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে বৃদ্ধ লোকটিকে দেখছেন, আমি শুরুর দিন থেকে এই লোককে সেই মেট্রোস্টেশন থেকে তুলছি প্রতিরাতে। লোকটা ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়-ই না, ওনার সাথে আরেকজন আরও বৃদ্ধ, উনিও মাদকাসক্ত। এই লোকের কাছে এর আগে একবার গাঁজা পাওয়া গেছিল। এই লোকগুলোকে তোলাটা অত্যন্ত কঠিন, তুললে আগায় ৪ কদম। তাই লাঠিসোঁটা ছাড়া বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন না করে তাদের তোলা যায়–ই না।’
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সর্বমিত্র যেই মুরুব্বিকে লাঠি হাতে শাসাচ্ছে, তিনি একজন মাদক কারবারি। বেশভূষা দেখে বোঝার উপায় না থাকলেও সত্য হচ্ছে, তিনি ক্যাম্পাস এরিয়ায় মাদক কারবারের সাথে জড়িত। তাকে বারবার উঠিয়ে দেওয়া হলেও তিনি ক্যাম্পাস এরিয়া ছাড়ছেন না। কারণ, এইখানে তার মাদকের কারবার! সর্বমিত্রের নিজেই লাঠি হাতে নিয়ে মুরুব্বিকে শাসানোর এই অ্যাপ্রোচকে আমি ঠিক মনে করি না। প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে ব্যাপারটা আরও সুন্দর হতো।’
ঘটনার সমালোচনা করেছেন ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইব্রাহিম হোসেন। ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘বাবা, তুমি একটু শান্ত হও, তার হাঁটুর বয়সও হয়নি তোমার। ক্ষমতা পাইছ, তার মানে এই না যে অপব্যবহার করবে। সেদিন তো ছবি তোলা নিয়ে কত জ্ঞান দিলেন—মবের ছবি তোলা নিষিদ্ধ, আজকে কে যেন ভুলে ভিডিও করছে।’