শামীম হাসান সরকারের জনপ্রিয়তা বনাম বিতর্ক
Published: 8th, May 2025 GMT
টেলিভিশন নাটকের আলোচিত নাম শামীম হাসান সরকার। মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও স্বল্প সময়ে টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। সহজাত অভিনয়শৈলী আর হাস্যরসাত্মক চরিত্র রূপায়নের দক্ষতা তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। ওয়েব সিরিজ, মঞ্চ নাটক এবং বিজ্ঞাপনেও রেখেছেন সফল পদচারণা। কিন্তু জনপ্রিয়তার আলোচনার পাশাপাশি বিতর্কের কাঁটাতার যেন তাকে ঘিরে রেখেছে।
সম্প্রতি উদীয়মান অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রিয়া অভিনেতা শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে উত্তাল শোবিজ অঙ্গন। তাছাড়া কয়েকজন নাট্য নির্মাতাও এই অভিযোগের পালে হাওয়া দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন নাট্যনির্মাতা শামীম হাসানের বিরুদ্ধে নানা অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছেন। নির্মাতা সরদার রোকন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন। এ পরিচালক ফেসবুকে লিখেন, “দুইদিন পরপর তোমাকে নিয়েই এত বিতর্ক কেন ভাই?”
শামীম হাসান সরকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্মাতা সরদার রোকন। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, “তার সঙ্গে বেশ আগে আমার একবারই কাজ হয়েছিল। একবারের কাজের অভিজ্ঞতাই অনেক খারাপ। নির্মাতাদের সঙ্গে তার ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। সে যেন কাউকে মানুষই মনে করে না। ইন্ডাস্ট্রিতে অপূর্ব, নিশো, জোভান, তৌসিফদের মতো শিল্পীও রয়েছে, যারা কিনা জনপ্রিয়তার চূড়ায় থেকেও সবার সঙ্গে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কথা বলে কিন্তু শামীম এ রকম না। আমার যতদূর মনে হয়, ওর সঙ্গে যে দুই-তিনজন নির্মাতা কাজ করে তাদের ছাড়া আর কাউকে সে নির্মাতা বলে মনেই করে না। নির্মাতা তো পরে, মানুষ বলেই মনে করে না, এত বাজে আচরণ করে। ও যে সেটে কাজ করে সেই সেটের সবার সঙ্গেই খুব বাজে আচরণ করে, এটা তাদের জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে। একজন শিল্পীর আচরণ কখনো এমন হওয়া উচিত নয়।”
আরো পড়ুন:
‘মুসলিমদের বাড়ি ভাড়া দিই না’
ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো কিছু করিনি: শামীম হাসান সরকার
প্রেম, ব্যক্তিগত জীবন, শুটিং সেটে অসৎ আচরণ ও মাদক সেবনের মতো ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে শামীমের বিরুদ্ধে। অভিনেতা শামীম হাসান সরকার ও অভিনেত্রী অহনা রহমান একসঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন। মাঝে দু’জনার প্রেমের সম্পর্কের গুঞ্জনও উঠেছিল। যদিও বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তারা। তবে কয়েক দিন আগে শামীম হাসান সরকার জানান, অহনার সঙ্গে ৭ মাসের সম্পর্ক ছিল।
এদিকে, বেশ কিছু দিন ধরেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ‘প্রাক্তন’-কে ‘জানোয়া’ সম্বোধনসহ নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায় অহনাকে। এ অভিনেত্রীর মন্তব্যের কারণে নেটিজেনরা মনে করেন, শামীম হাসান সরকারের দিকেই তির ছুড়েছেন অহনা। ফলে এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন অভিনেতা। এ জন্য প্রিয়াঙ্কা প্রিয়ার অভিযোগের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অহনার প্রসঙ্গে ওঠে।
এ সময় তিনি জানান, প্রাক্তন বলতে অহনা যার কথা বুঝিয়েছেন, সেই ব্যক্তি তিনি (শামীম হাসান সরকার) নন। অহনার প্রাক্তন বলতে যার কথা দাবি করেছেন, তিনি হচ্ছেন ‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়। তার সঙ্গে ৬-৭ বছরের সম্পর্ক ছিল। মাঝে অহনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলাম আমি, তখনো তার (মেহেদী) সঙ্গে রিলেশন ছিল। এ কারণেই ওর (অহনা রহমান) সঙ্গে সম্পর্ক টিকেনি আমার।
শামীম হাসানের এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাট্যনির্মাতা জিয়া উদ্দিন আলম ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “একটা মানুষ নিজের দোষ ঢাকতে গিয়ে আরো দুজন মানুষকে বিপদে ফেলা, সেটা কি অপরাধের খাতায় পড়ে না? এইটা কোন কথারে ভাই!”
তার অপেশাদার এবং অশালীন আচরণ নিয়ে অভিযোগ তুলে এই নির্মাতা গণমাধ্যমে বলেন, “সে নিজেকে কর্মজীবী মনে করে, অথচ নির্মাতারা তাকে দুপুর ১২টায় কল দিলে সে বলে, তোমরা গরিব, ছোটলোক, এত সকালে কেউ কাউকে ফোন দেয়? এগুলো কেমন ধরনের ব্যবহার? একজন শিল্পীর ব্যবহার এমন হতে পারে? এর চেয়েও আরো জঘন্য শব্দে সে কথা বলে নির্মাতাদের সঙ্গে। তার ফোন ধরতে ইচ্ছে নাহলে নাই ধরতে পারে কিন্তু কারো সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারে না।”
অভিনেতার আচরণকে অশ্লীল দাবি করে জিয়া উদ্দিন আলম বলেন, “ওর আচরণ যে কত খারাপ সেটা ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে। সে নির্মাতাদের গরিব, ছোটলোক বলে গালাগালি করে যেটা সে কখনো কারো সঙ্গে করতে পারে না। তার আচরণ এত খারাপ যেগুলো মুখেও আনা যায় না।”
শুধু নির্মাতাদের অভিযোগই নয়, কয়েক বছর আগে প্রোডাকশন বয় রাব্বির মুখে গরম চা ঢেলে দেয়ার অভিযোগও ওঠেছিল এই অভিনেতার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ টেলিভিশন মিডিয়া প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো.
প্রিয়াঙ্কা প্রিয়ার মাদক সেবনের অভিযোগের জবাবে শামীম হাসান সরকার সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি সিগারেট খান এবং বিয়ের আগে গাঁজা সেবন করলেও এখন এসব থেকে দূরে। তিনি আরো দাবি করেন, নাট্যাঙ্গনের এক অভিনেত্রীর সঙ্গেও অতীতে এসব করতেন। শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কা প্রিয়ার যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে অস্বীকার করেন শামীম হাসান।
২০২০ সালে শামীম হাসান সরকারের শুটিং সেটে এক ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং সেট ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা নিয়েও সমালোচনা হয়। পরে এই বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে শামীম বলেন, “সেটে কাজের চাপের কারণে মুহূর্তের উত্তেজনায় এমন ঘটনা ঘটেছে।”
এতসব বিতর্কের মধ্যেও শামীম হাসান সরকারের পেশাগত অবস্থান এখনো শক্ত। অভিনয়ে তার দক্ষতা এবং চরিত্র রূপায়ণে সাবলীলতা দর্শকদের মন জয় করেই চলেছে। যদিও অনেক দর্শক অভিযোগ করেন, তিনি একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন, যার ফলে বৈচিত্র্যের অভাব দেখা দিচ্ছে।
বিনোদন জগতের তারকাদের নিয়ে গুঞ্জন নতুন কিছু নয়। শামীম হাসান সরকারও এর বাইরে নন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তবে এতসব বিতর্কের মাঝেও ব্যক্তিগত জীবন আড়াল রেখে পেশাগত কাজ চালিয়ে যাওয়াই এখন তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জনপ্রিয়তা ধরে রাখা এবং বিতর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে পেশাদারিত্বের উদাহরণ তৈরি করাই হবে শামীম হাসান সরকারের আগামী দিনের বড় লড়াই।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক শ ম ম হ স ন সরক র র ব যবহ র র আচরণ জনপ র অহন র
এছাড়াও পড়ুন:
নাটোরে ক্রীড়া উপদেষ্টার স্টেডিয়াম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে বিএনপি
নাটোর জেলা বিএনপি ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়ার সদর উপজেলা স্টেডিয়াম উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। পুলিশ প্রশাসনের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে তারা আজ শনিবার সকালে অনুষ্ঠানটি বর্জন করে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপদেষ্টা শহরের কানাইখালি এলাকায় উপস্থিত হয়ে স্টেডিয়ামটি সরাসরি উদ্বোধন করেন এবং ভার্চুয়ালি দেশের অন্য ১৩টি মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন থেকে চিঠি দিয়ে বিএনপি নেতাদের সদর উপজেলা স্টেডিয়াম উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সে মোতাবেক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামানসহ কয়েকজন নেতা শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে কানাইখালি মিনি স্টেডিয়ামে যান। তাঁরা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হাসিবুল্লাহ হাসিব বাধা দেন। পরিচয় দিয়ে আমন্ত্রণ স্মরণ করিয়ে দিলেও তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের চিনি, ভেতরে যাওয়া যাবে না।’ এ ঘটনার পর বিএনপি নেতারা অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন এবং বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমন্ত্রিত অতিথি। আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু ডিবির ওসির খারাপ আচরণ সহ্য করার মতো নয়। আমরা চরম অপমানিত হয়েছি। এর প্রতিবাদে স্টেডিয়াম উদ্বোধন ও আলোচনা সভা বয়কট করেছি। এ ছাড়া আমরা স্টেডিয়ামের নাম শহীদ সুজনের নামে করার অনুরোধ করেছিলাম, যা প্রশাসন গ্রহণ করেনি। এর প্রতিবাদও জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন ও ডিবির ওসিকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।