ভারতের ২৫ সেনা নিহত হয়েছে: পাকপ্রতিরক্ষামন্ত্রী
Published: 9th, May 2025 GMT
নিয়ন্ত্রণ রেখায় গত কয়েক দিন ধরে সংঘাতে ভারতের ২৫ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। শুক্রবার বিবিসিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছিলেন, তাদের হামলায় ৪০-৫০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। তবে তার এ দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এই মুহূর্তে ভারতও তার হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেন। তাই দুই দেশের সংঘাতে সেনাদের হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।
শুক্রবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
৭ পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীকে হত্যার দাবি ভারতের
ভারতের ৭৭টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি পাকিস্তানের
খাজা আসিফ স্বীকার করেছেন, ভারতের হামলায় পাকিস্তানও ‘ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, ভারত যুদ্ধ শুরু করেছে এবং ভারতের দুটি ব্রিগেড সদর দপ্তর পাকিস্তানি হামলায় ধ্বংস হয়েছে। দিল্লি এই দুটি দাবিই অস্বীকার করেছে।
বিবিসি স্বাধীনভাবে এই দাবিগুলো যাচাই করতে পারেনি।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিবিসিকে জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো হতাহতের বিষয়ে তারা কোনো সংবাদ পায়নি।
এর আগে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা ভারতীয় প্রতিরক্ষা অবকাঠামোতে হামলাকারী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিস্ক্রিয় করেছে এবং কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দরপত্র কারসাজিতে গচ্চা সরকারি ১০ লাখ টাকা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ক্রয়ের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সর্বনিম্ন মূল্যের দরপত্র দাখিলকারীকে বাদ দিয়ে তিন নম্বরে থাকা কোম্পানিকে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ১০ লাখ টাকা গচ্চা গেছে। আবার দরপত্রে অংশ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে আদালতে মামলা করেছে ওয়ালটন।
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের জন্য গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ৪৫টি কম্পিউটারের দরপত্র আহ্বান করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। দরপত্রে অংশ নেয় ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সফট-টেক, স্মার্ট টেকনোলজি (বিডি) লিমিটেড, ক্রিয়েচার কম্পিউটারস, গ্লোবাল ব্র্যান্ড লিমিটেডসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান। কম্পিউটার সরবরাহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকারকে প্রধান করে সাত সদস্যের স্পেসিফিকেশন কমিটি গঠন করে গত বছরের ১৭ অক্টোবর। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্র্যান্ড, মডেল, প্রসেসর, মেমরি, স্টোরেজ, গ্রাফিক্সসহ ১৭টি বিষয় উল্লেখ করে একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয় ওই কমিটি।
অথচ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ এর ২৯(৩) ধারায় আছে– কারিগরি টেন্ডার আহ্বানে স্পেসিফিকেশনে ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট, নকশা, উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না। কিন্তু এসব বিধানের তোয়াক্কা না করে মডেল, স্পেসিফিকেশন ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করে দরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করেন স্পেসিফিকেশন কমিটি ও সিনিয়র প্রোগ্রামার নাসির উদ্দিন।
এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভালো জিনিস কিনতে গ্লোবাল কোম্পানির নাম উল্লেখ করেছি।’
এদিকে কম্পিউটার ক্রয়ের কারিগরি স্পেসিফিকেশন মূল্যায়নের জন্য ২ সদস্যের মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। তারা সাত কোম্পানির জিনিসপত্র মূল্যায়ন করে মতামত দেন। বলা হয়, ওয়ালটন ডিজি-টেক বাংলাদেশি ব্র্যান্ড। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বলেছেন ডেল বা এইচপির সমমানের তারা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া শর্ত পূরণ করতে পারেনি ওয়ালটন। শর্ত অনুযায়ী ওয়ালটনকে বাদ দিতে পারেন।
কারিগরি স্পেসিফিকেশন মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সাইফুর রহমান বলেন, ‘কে শর্ত পূরণ করেছে সেটা আমাদের বিষয় না। আমরা শুধু যেসব মানদণ্ড নির্ধারণ করা আছে, সে অনুযায়ী টেকনিক্যাল দিকগুলো যাচাই করেছি।’
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এর ৪৮(২) ধারা অনুযায়ী টেন্ডার পেয়ে থাকে সবচেয়ে কম মূল্যের দরপত্র দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান। কুবির কম্পিউটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম দরপত্র ছিল ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রির, যা ৪৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এ কোম্পানিকে টেন্ডার না দিয়ে তিন নম্বরে থাকা স্মার্ট টেকনোলজিকে দেওয়া হয়। যাদের দরপত্র ছিল ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকার।
সর্বনিম্ন দরপত্র হওয়ার পরও ওয়ালটন কোম্পানিকে টেন্ডার না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির চিফ বিজনেস অফিসার তৌহিদুর রহমান রাদ বলেন, ‘আমরা সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের টেন্ডার দেয়নি। এ বিষয়ে সিনিয়র প্রোগ্রামারের (নাসির) কাছে কয়েকবার চিঠি ও ই-মেইল করে জানতে চাইলেও কোনো রেসপন্স করেননি। এতে আমাদের কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
ওয়ালটনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির আপিল বিভাগের রিভিউ প্যানেল জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ক্রয়ের বিনির্দেশে কয়েকটি ব্র্যান্ড উল্লেখ করলেও সমতুল্য শব্দটি যোগ করায় প্রসেসর ও গ্রাফিক্স ব্যতীত অন্যত্র বড় ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে হয়নি। তবে প্রশাসনের কাছে ওয়ালটন কারণ জানতে চাইলে তাদের ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ ধরনের মাইনর ডেভিয়েশনকে উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরপত্র উপেক্ষা করে নন-রেসপনসিভ হিসেবে মূল্যায়িত করে সরকারের ৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এ ক্ষতির দায় টেকনিক্যাল কমিটির তিন সদস্যের ওপর বর্তায়। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ এর ৬০(৩)ঙ বিধি মোতাবেক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে ওয়াল্টন। এ ছাড়া আপিলকারীর নিরাপত্তা জামানত ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
ওয়ালটনের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদুর রহমান রাদ বলেন, কোম্পানি একটি দরপত্রকে কেন্দ্র করে অনেক টাকা বিনিয়োগ করে। এই টাকার সুদ আসে। তবে টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
দরপত্র কম হওয়ার পরও কাজ না পাওয়ার বিষয়ে টেন্ডারের প্রকিউরমেন্ট কমিটির এনটিটি ও সিনিয়র প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যে শর্ত উল্লেখ করেছিল তা ওয়ালটন ডিজি-টেক পূরণ করতে পারেনি। এ ছাড়া ২ নম্বরে থাকা সফট টিচের ব্যবসায়িক ছাড়পত্র না থাকায় তাদের দেওয়া হয়নি। স্মার্ট টেকনোলজি শর্ত পূরণ করায় তাদের টেন্ডার দেওয়া হয়।
ওয়ালটন ডিজি-টেক কোম্পানিকে কেন নন-রেসপন্স করা হয়েছে, জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, দরপত্র চলাকালীন তারা (ওয়ালটন) বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তাদের জিনিসগুলো ক্রয় করার জন্য বলেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
তিন নম্বরে থাকা কোম্পানিকে কেন টেন্ডার দেওয়া হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন কমিটির মানদণ্ডের আলোকে কম্পিউটার ক্রয়ের কারিগরি স্পেসিফিকেশন মূল্যায়ন কমিটি যেভাবে মতামত দিয়েছে সেভাবে নির্ধারণ করেছেন তারা।