বাবাকে হত্যায় আদালতে মেয়ের দায় স্বীকার
Published: 9th, May 2025 GMT
ঢাকার সাভারে বাবাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ছুরি মেরে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মেয়ে জান্নাতুল জাহান শিফা আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা সুলতানা সুইটির আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আজ শুক্রবার আদালতের সাভার থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা উপপরিদর্শক বিশ্ব কুমার দেব নাথ এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই তরুণীর মা নিহত ব্যক্তি আবদুস সাত্তারের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন। তরুণীর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তার মা মারা যান। ২০১৯ সাল থেকে বাবা তাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালে অভিযুক্ত তরুণী বাবার বিরুদ্ধে নাটোরে আদালতে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এরপর বিভিন্ন সময় মেয়েকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন বাবা। একপর্যায়ে মেয়ের বিরুদ্ধে চুরির মামলাও করেন। পরে সাভারে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন ওই বাবা। চলতি বছরের শুরুর দিকে ওই বাসায় আসেন মেয়েটি। এর পর থেকে মেয়েকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন সময়ে চাপ দিতে থাকেন তিনি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
জবানবন্দিতে বলা হয়, গত বুধবার রাতে মেয়েটি খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবাকে খাওয়ান। ভোররাত চারটার দিকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি মেরে বাবাকে হত্যা করেন তিনি। মেয়েটি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করে বাবাকে হত্যার কথা জানান।
পরে সাভার মডেল থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান শিক্ষককে বের করে দিয়ে কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে গাছের মাথায়
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারাকে টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করে তালা ঝুলিয়েছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতার অনুসারীরা। পরে তার চেয়ারটি ঝুলিয়ে রাখেন গাছের মাথায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দৃশ্য দেখা যায় স্কুলটির সামনে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মঞ্জু মনোয়ারা সমকালকে বলেন, ‘সভাপতি করার জন্য মাইনুল ইসলাম, বকুল ও মামুনুর রশীদ নামের তিনজনের নাম ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। পরে জেলা প্রশাসকের সুপারিশে শিক্ষা বোর্ড ৩ মার্চ মামুনুর রশীদকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেয়। এরপর মাইনুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বিদ্যালয় খোলার পর ৬ মে মিটিং ছিল। সেখানে মাইনুল ইসলামের লোকজন এসে আমার ওপর চড়াও হয়। মাইনুলের ভাই জমসেদ আলী ও বাবা আতর আলীসহ কয়েকজন আমাকে টেনেহিঁচড়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। এতে আমি বেশ আঘাতও পেয়েছি। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে আমার চেয়ার প্রথমে ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর স্কুলের সামনের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ এবং তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের একটি গাছে ঝুলছে। স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা জানিয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুইটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপির স্থানীয় নেতা মামুন অর রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন।
অন্যদিকে, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাইনুল ইসলাম এই কমিটি মেনে নেননি। তিনি পৌর বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। ওই সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন প্রধান শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে চারটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। পরে তা গাছের মাথায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনার পর বুধবার প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. আতাউর, বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. মকসেদ আলী, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং বাগধানী গ্রামের মাইনুলের ভাই জমসেদ ও বাবা আতর আলীর নাম রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাধা দিলে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কক্ষে তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান এবং প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটা বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তালার কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন অর রশিদ বলেন, মঙ্গলবার ছিল কমিটির সভা। আমরা যাওয়ার আগেই ওই ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অফিস রুম তালাবদ্ধ।
সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, বাগধানীর স্কুলে বাগধানীর বাইরের লোককে সভাপতি বানানো ঠিক হয়নি। আমরা কোনো তালা মারিনি, কোনো ভাঙচুরও করিনি।
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, পরিচালনা কমিটির সভায় দুপক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।