শাহবাগে জাতীয় সংগীতের অবমাননা করার অভিযোগে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলমসহ কয়েকজন শিক্ষক ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

আয়োজকেরা জানান, ১০ মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজনকে জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে তাঁরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজন করেন।

জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা তাবাসসুম (ফারাবী) প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আশা করেছিলাম, একটা সাম্যের রাষ্ট্র হবে। কিছুদিন আগে শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ফেসবুকেও আমরা দেখতে পাই, জাতীয় সংগীত “সোনার বাংলা” থাকবে কি থাকবে না, সেসব নিয়ে কথা উঠছে। এ সমস্ত বিষয়ে সারা দেশে যেভাবে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এ আয়োজন করা হয়েছে।’

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আদৃতা রায় বলেন, গত ৫ আগস্টের পর ১৯৭১ ও ২০২৪-কে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে কিছু গোষ্ঠী এটিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। কয়েক দিন আগে শাহাবাগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় একটি পক্ষ বাধা দেয়। আবার চিহ্নিত রাজাকারকে নিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই জায়গা থেকে আমাদের নিজেদের আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এই কর্মসূচি। ২৪-এর যে যুদ্ধে দাঁড়াতে পারছি, সেটা শিখছি আসলে আগের ৩০ লাখ শহীদের কাছ থেকে, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আজকের এ আয়োজন।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম বলেন, জাতীয় সংগীত তাঁদের অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। যে দেশে তাঁরা বসবাস করেন, সেই দেশের পরিচয় হচ্ছে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত। যারা বা যে পক্ষই হোক না কেন, কিছু মীমাংসিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো কারণ নেই। মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তাঁদের কোনো দ্বিধা নেই। নির্দ্বিধায়, নির্বিঘ্নে যেকোনো জায়গায় দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, ২০১৯-২০ অর্থবৎসরে উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২৬ সহস্রাধিক হেক্টর, যাহা ২০২৫ সালে দাঁড়াইয়াছে ২৩ সহস্র হেক্টর অপেক্ষা কিছু বেশি। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বৎসরে নাসিরনগর উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি হ্রাস পাইয়াছে প্রায় তিন সহস্র হেক্টর। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কারণ ইহার সরাসরি ফল হইবে কৃষি উৎপাদন হ্রাস এবং প্রধান খাদ্যশস্য চাউলসহ প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের জন্য বিদেশমুখাপেক্ষিতা বৃদ্ধি। এক কথায় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ইহা এক প্রকার অশনিসংকেত বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। প্রসঙ্গত, কৃষিজমি হ্রাসের সমস্যা নাসিরনগরেই সীমাবদ্ধ নহে। সমগ্র দেশেই বিবিধ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের কৃষি শুমারি-২০১৯ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, প্রতিবৎসর দেশে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাইতেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে। উক্ত শুমারিমতে, ২০০৮ সালে দেশে নিট আবাদি জমি ছিল ১ কোটি ৯০ লক্ষ ৯৭ সহস্র হেক্টর। ২০১৯ সালে উহা হ্রাস পাইয়া দাঁড়ায় ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৮১ সহস্র হেক্টরে। তৎসহিত ন্যায্যমূল্য হইতে ধারাবাহিকভাবে বঞ্চিত হইবার কারণে কৃষকদের মধ্যে বিশেষত ধান উৎপাদনে উৎসাহের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাইতেছে। বহু তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিতে যুক্ত হইয়াছেন সত্য। তবে উহাদের প্রায় সকলেই মৎস্য বা অন্য কোনো অর্থকরী ফসলের চাষ করিতেছেন। কেহ কেহ রপ্তানির কথা বিবেচনায় লইয়া আলু, ভুট্টা, গম ও টমেটোর ন্যায় ফসল চাষে যুক্ত। রবিশস্যের জমিতে তিল বা সরিষা চাষ হইতেছে। এই অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন যে ক্রমশ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িতেছে, তাহা সাধারণ দৃষ্টিতেই বোঝা যায়। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাইতেছে, উচ্চফলনশীল বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে ধানসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন গত কয়েক দশকে বৃদ্ধি পাইলেও প্রতি বৎসর খাদ্যপণ্য আমদানিও বৃদ্ধি পাইতেছে। ফলস্বরূপ বিশ্ববাজারে চাউল বা অন্য কৃষিপণ্যের বাজার অস্থির হইলে তাহা আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষিজমি বিদ্যমান হারে হ্রাস পাইতে থাকিলে ভবিষ্যতে একরপ্রতি ফসল উৎপাদন দুই গুণ বা তিন গুণ বৃদ্ধি পাইলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হইবে না।

প্রতিবেদনমতে, নাসিরনগরে ফসলি জমি হ্রাসের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে আছে জলবাযু পরিবর্তন, নদীভাঙন, যত্রতত্র ইটভাটা, সরকারি বিভিন্ন আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, আবাসন সংকট ও বাণিজ্যিক পুকুর খনন। এই কারণসমূহ সমগ্র দেশেই বিদ্যমান। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন এই সমস্যাকে জটিল করিয়া তুলিতেছে। দুঃখজনক হইল, সমস্যাটি নীতিনির্ধারকদের খুব একটা ভাবাইতেছে বলিয়া মনে হইতেছে না। কৃষিজমি রক্ষায় আইন ও সরকারি বিধিবিধান রহিয়াছে। কিন্তু কোনোটারই কার্যকর কোনো প্রয়োগ নাই। তিন ফসলি জমির অকৃষি ব্যবহার বন্ধে গত কয়েক বৎসরে আমরা সরকারের শীর্ষমহলে যতটা বাগাড়ম্বর দেখিয়াছি, তদনুযায়ী কোনো কাজ হইতে দেখা যায় নাই। বর্তমানেও যদি একই ঔদাসীন্য বজায় থাকে, তাহা হইলে আমাদের হতাশার কোনো শেষ থাকিবে না। 
আমরা জানি, বিশেষত করোনাকালে যখন শিল্পোৎপাদন ও সেবা খাত প্রায় স্থবির হইয়া পড়িয়াছিল, তখনও কৃষি এই দেশকে রক্ষা করিয়াছে। অর্থনীতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে হ্রাস পাইলেও এখনও তাহা উল্লেখযোগ্য। কর্মসংস্থানের দিক দিয়াও কৃষির সম্ভাবনা উপেক্ষণীয় নহে। কৃষিজমি রক্ষার বিষয়টি তাই এই সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ কৃষি খাত লইয়া একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। তাহারই অংশ হিসাবে আবাদি জমি সংরক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হইতে পারে। সরকার অবিলম্বে এই লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হইবে, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাবিতে ছাত্রদলের হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম
  • ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে পুলক এখন সফল ফ্রিল্যান্সার, মাসে আয় কত জানেন?
  • খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত