জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হলো জাতীয় সংগীত
Published: 14th, May 2025 GMT
শাহবাগে জাতীয় সংগীতের অবমাননা করার অভিযোগে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলমসহ কয়েকজন শিক্ষক ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
আয়োজকেরা জানান, ১০ মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজনকে জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে তাঁরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজন করেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা তাবাসসুম (ফারাবী) প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আশা করেছিলাম, একটা সাম্যের রাষ্ট্র হবে। কিছুদিন আগে শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ফেসবুকেও আমরা দেখতে পাই, জাতীয় সংগীত “সোনার বাংলা” থাকবে কি থাকবে না, সেসব নিয়ে কথা উঠছে। এ সমস্ত বিষয়ে সারা দেশে যেভাবে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এ আয়োজন করা হয়েছে।’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আদৃতা রায় বলেন, গত ৫ আগস্টের পর ১৯৭১ ও ২০২৪-কে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে কিছু গোষ্ঠী এটিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। কয়েক দিন আগে শাহাবাগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় একটি পক্ষ বাধা দেয়। আবার চিহ্নিত রাজাকারকে নিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই জায়গা থেকে আমাদের নিজেদের আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এই কর্মসূচি। ২৪-এর যে যুদ্ধে দাঁড়াতে পারছি, সেটা শিখছি আসলে আগের ৩০ লাখ শহীদের কাছ থেকে, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আজকের এ আয়োজন।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম বলেন, জাতীয় সংগীত তাঁদের অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। যে দেশে তাঁরা বসবাস করেন, সেই দেশের পরিচয় হচ্ছে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত। যারা বা যে পক্ষই হোক না কেন, কিছু মীমাংসিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো কারণ নেই। মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তাঁদের কোনো দ্বিধা নেই। নির্দ্বিধায়, নির্বিঘ্নে যেকোনো জায়গায় দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সামিয়া ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল, তবে কখনো কোচিং বা প্রাইভেটের ওপর নির্ভর করেননি। বাবার হাত ধরেই তৈরি হয়েছে তাঁর শিক্ষাভিত্তি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এবার তিনি যাচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডে। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়বেন সেখানে।
ঢাবি থেকে জাবি, সেখান থেকে অক্সফোর্ড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সামিয়া ইসলাম। কিন্তু তাঁর মনে ছিল অর্থনীতি নিয়ে পড়ার স্বপ্ন। তাই এক বছর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বের প্রথম সারির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। স্নাতকোত্তরের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই তৈরি করতে শুরু করেছিলেন নিজের প্রোফাইল। অক্সফোর্ড ছাড়াও ইয়েল, ওয়ারউইক ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডাক দিয়েছিল। তবে তত্ত্বীয় অর্থনীতিতে বিশেষ আগ্রহ ও গবেষণার পরিবেশ বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত অক্সফোর্ডকেই বেছে নেন।
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
শুরু থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন সামিয়া ইসলাম। স্নাতকে ৩.৯২ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৯১ সিজিপিএ অর্জন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুব পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলাম না। পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়তাম। তবে ক্লাস কখনো মিস করিনি। নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাই আমাকে ভালো ফল করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।’
একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত গবেষণা কার্যক্রমেও। ইন্টার্নশিপ করেছেন, ভাষাগত পরীক্ষা (আইএলটিএস এবং জিআরই) প্রস্তুতিও নিয়েছেন আগেভাগেই। সব মিলিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাঁকে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো. শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম
গবেষণার ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিলেন সামিয়া ইসলাম। ইতিমধ্যে তাঁর একটি গবেষণাপত্র ও কনফারেন্স পেপার প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে। এ ছাড়া সানেমে ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পড়াশোনার বাইরে সক্রিয় ছিলেন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (জিইউডিএস) সহসাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় ছাত্র সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মতে, এসব কার্যক্রম ব্যক্তিগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, পাশাপাশি নতুন সুযোগ তৈরি করে।
আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা২২ ঘণ্টা আগেপরিবারের প্রেরণা
শৈশব থেকেই কোচিং-প্রাইভেটের বদলে বাবার কাছে পড়াশোনা করেছেন সামিয়া ইসলাম। বাবাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মনে করেন। সামিয়া বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সময় নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আসার ব্যাপারে প্রথমে তাঁর আপত্তি ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তকেই সম্মান করেছেন। এতে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।’
নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তাও সামিয়ার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি। সামিয়া বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা পড়াশোনা ও গবেষণার প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা কঠিন হতো।’
আরও পড়ুনবেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে ক্ষমতা হারাল পরিচালনা পর্ষদ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫তরুণদের জন্য শিক্ষা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সামিয়ার অভিজ্ঞতা একটি পথনির্দেশের মতো। তিনি মনে করেন, আগে ঠিক করতে হবে কোনো বিষয়ে পড়তে চান, তারপর সেই অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক ফল ভালো হলে সুযোগ অনেক বেড়ে যায়, তবে গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত থাকা জরুরি। আবেদনপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এসওপি–স্টেটমেন্ট অব পারপোজ, যা মনোযোগ দিয়ে লিখতে হবে। আর ভাষাগত পরীক্ষাগুলো আগেভাগেই দিয়ে রাখা উচিত, নয়তো শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োতে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বিশেষ পরামর্শ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
সামিয়া ইসলাম এখনো চূড়ান্তভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি অর্থনীতির জগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চান। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল অর্থনীতিবিদ হওয়ার। পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিবারের সমর্থনে সামিয়ার এ অর্জন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীর কাছে।