সাহিত্যিক মাহবুব–উল আলম (১৮৯৮-১৯৮১) বহুদিন ধরেই ইতিহাসে ঠাঁই নিয়েছেন, যদিও তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য অন্তত আত্মজৈবনিক উপন্যাস মোমেনের জবানবন্দী (১৯৪৬), উপন্যাসিকা (অনেকের বিচারে বড় গল্প) মফিজন (১৯৪৬), স্মৃতিকথা পল্টনজীবনের স্মৃতি (১৯৪০) এবং কয়েকটি ছোটগল্প বহু সমালোচকের মতে কালোত্তীর্ণ রচনা। ইদানীং তাঁর বই দুষ্প্রাপ্য, কিছু বই পারিবারিকভাবে প্রকাশিত হলেও, তা বিতরণ-বিপণনে পিছিয়ে এবং তাই পাঠে ও আলোচনায় প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ তার একজন শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পীকে ভুলেই থাকল।
এ রকম একটা সময়ে তাঁকে নিয়ে গবেষক-প্রাবন্ধিক মোরশেদ শফিউল হাসানের চারটি প্রবন্ধের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এই লেখক তাঁর বিভিন্ন লেখা ও বইয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাহিত্যবিচারে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি মাহবুব–উল আলমের দৌহিত্র হলেও অপক্ষপাত থেকেই নিঃসংশয়ে তাঁর সাহিত্যিক উচ্চতা এবং সেই সঙ্গে মোরশেদের তাঁকে বিচারের যোগ্যতা উভয় বিষয়েই গভীর আস্থা পোষণ করি।
মোরশেদের বইটির মূল শিরোনাম মাহবুব–উল আলম এবং উপশিরোনাম একজন সত্যসন্ধ লেখকের প্রতিকৃতি। শুরুর প্রবন্ধটি তাঁর জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং তাই ১৯৯৮ সালে রচিত। সূচনাতেই মাহবুব-উল আলমকে ‘আমাদের পুরোধা শিল্পী’ আখ্যায়িত করে মোরশেদের মূল্যায়ন: ‘আমাদের কথাসাহিত্যের সাবালকত্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এককভাবে তাঁর অবদান মনে হয় সর্বাধিক।’ কিন্তু তবু কেন তিনি পাঠক-সমালোচকের মনোযোগ পেলন না, তার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন লেখক। রাজধানীর বাইরে বসবাস, কোনো দল বা গোষ্ঠীভুক্ত না হওয়া এবং তৃতীয় কারণটি উদ্ধৃত করে জানাচ্ছি, ‘জীবনবোধ ও শিল্পদৃষ্টির দিক থেকে তিনি ছিলেন সেই মহতের লেখক, সমকাল কমই যাঁদের বুঝতে পারে।’
মোরশেদ শফিউল হাসানের আলোচনা পড়তে পড়তে মনে হয় মাহবুব-উল আলমের গদ্যশৈলীর বৈশিষ্ট্য, ভাবের গভীরতা ও প্রকাশের বাক্সময় গতি যেন তাঁর লেখায়ও ভর করেছে। পল্টনজীবনের স্মৃতি সম্পর্কে মোরশেদের মন্তব্য, ‘একজন সৈনিকের স্মৃতিচারণ মাত্র নয়, বাঙালি মুসলমানের আত্মবিশ্বাসের ইতিহাস সম্পর্কে বীরত্বগাথাও বটে।’ তাঁর সঙ্গে এ মন্তব্যেও আমি একমত যে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটেও তাঁর আত্মজৈবনিক উপন্যাস মোমনের জবানবন্দী, উপন্যাসোপম বড় গল্প মফিজন কিংবা স্মৃতিকথা পল্টনজীবনের স্মৃতিকে বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকৃতী হিসেবেই গণ্য করা যায়। অন্নদাশঙ্কর রায় বন্ধু মাহবুবকে চিঠিতে (৪ জুলাই ১৯৫২) লিখেছেন, ‘পূর্ববঙ্গে যে সাহিত্য জন্ম নেবে, তার দিকে আমরা বুকভরা প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছি। আপনি তার একজন দিকপাল ও দিশারী। আমার মতে আপনার চেয়ে বড় ওখানে আর কেউ নেই।’ (আলাপ)
মাহবুব-উল আলম নিজেও স্বীকার করেছেন এবং অন্নদাশঙ্কর রায়ও লিখেছেন যে তাঁর সাহিত্য এলিমেন্টাল প্রকৃতির মতো খোলামেলা তার বর্ণনা এবং তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের মুখ্য চরিত্রগুলোও চলে ও বলে খোলামনে। নাগরিক কৃত্রিমতা থেকে মুক্ত সহজ স্বচ্ছন্দ সাবলীল মানব–মানবীই তাঁর লেখার উপজীব্য। তাঁর অনুসন্ধান এবং বয়ানও মাটি বা জল–হাওয়ার মতোই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত। সহজে তিনি খোলস পরান না কাউকে, কোনো ঘটনাকেও না। বরং আলো যেভাবে ছায়া ও অন্ধকারের খোলস সরিয়ে নগ্ন বাস্তবকে তুলে ধরে, তাঁর লেখাও যেন আলোকোজ্জ্বল সাবলীলতায় নগ্ন সত্যকে উদ্ঘাটিত করে। তাতে অনেক সময় আদিরস বা অশ্লীলতার অভিযোগ তাঁকে শুনতে হয়েছে। সেটা মোমেনের জবানবন্দীর জন্য যেমন, তেমনি মফিজন–এর জন্যও। জবানবন্দী প্রসঙ্গে মোরশেদ লিখেছেন, ‘কিন্তু এ “নিষিদ্ধ”, “যৌনতা গন্ধী” বিষয়গুলোর ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমার মনে হয় রচনাটির সত্য ও সৌন্দর্যমূল্যকে খানিকটা উপেক্ষাই করেছি।’ এ কারণে তাঁর মতে, ‘বইটি আজও তার প্রাপ্য মূল্য পায়নি।’ মফিজন–এর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগের সোজাসাপ্টা জবাব দিয়েছেন আলোচ্য গ্রন্থের লেখক ‘আমাদের মধ্যযুগের কবি বা ইউরোপের রেনেসাঁস যুগের শিল্পীদের মতই মফিজন-এর স৶ষ্টাও মানবদেহকে বন্দনা করেছেন পবিত্র ও সুন্দর জ্ঞানে।’
সাধারণত মাহবুব-উল আলমের সাহিত্যকর্ম, বিশেষত আলোচিত তিনটি বই ও কিছু ছোটগল্পের বাইরে অন্যান্য সৃষ্টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। এর কারণ হয়তো তিনি প্রথম জীবনেই মূলত সৃষ্টিশীল সাহিত্য রচনা করেছেন এবং উত্তরকালে স্থানীয় ইতিহাস রচনা ও সামাজিক দায় পালনে অধিকতর মনোযোগী ছিলেন। এর ফলে তিনি নিজের সাহিত্যে সৃষ্টির ক্ষতি করেছেন এমন অভিযোগ জানিয়েছেন অন্নদাশঙ্কর রায়সহ সমকালীন ও পরবর্তীকালের অনেক সাহিত্যিক ও সাহিত্যের অনেক পাঠক।
মাহবুব-উল আলমের সমাজ ও সংস্কৃতিচিন্তা বিভিন্ন লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর প্রথম বই সংকট কেটে যাচ্ছে (১৯৫৪), যেখানে কুমিল্লা প্রগতি মজলিস আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনে ও ঢাকায় তমদ্দুন মজলিস আয়োজিত সেমিনারে পঠিত প্রবন্ধসহ কয়েকটি লেখা সংকলিত হয়েছে। তাতে তাঁর পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা এবং তা প্রকাশে দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার মৌলিকত্ব, স্বকীয়তা এবং তাই স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্য মনোযোগ দাবি করে। তবে এদিক থেকে বহুকাল দুষ্প্রাপ্য এবং অধুনা বিস্মৃত ভিন্নধর্মী বই মাহবুব-উল আলম ও অন্নদাশঙ্কর রায়ের পত্রালাপের সংকলন আলাপ (১৯৫২)। বইটি নিয়ে মোরশেদের বিস্তারিত আলোচনা সাতচল্লিশের দেশ ও সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে বলে আমার মনে হয়। দুই বঙ্গের দুই ধর্মের মুক্তমনের মৌলিক চিন্তার সংবেদনশীল দুই বর্ষীয়ান সাহিত্যিকের আলাপে উঠে এসেছে দেশভাগ, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মতো অতি প্রাসঙ্গিক, স্পর্শকাতর, অপরিহার্য বিষয়ে স্পষ্ট, সৎ, বলিষ্ঠ অভিমত।
এ আলোচনায় বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁরা মতান্তরে জড়ান, কিন্তু আলোচনা থেকে সরে যান না, পরস্পরের প্রতি প্রীতি ও শ্রদ্ধাও হারান না। সংলাপ যে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাতে যে একে অপরের ভুল ধারণা যেমন কাটাতে পারছেন, তেমনি কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত সত্ত্বেও বন্ধুত্ব ও সহযাত্রাও যে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, তা স্বীকার ও তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন এই দুই মনীষী। চিঠিতে একধরনের চাপান-উতোর চলতে থাকে প্রধানত হিন্দু-মুসলমানের পার্থক্য এবং পার্থক্য সত্ত্বেও মিলনের সম্ভাবনার পথগুলো নিয়ে। এর মধ্যেই নানা বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলিষ্ঠ মতামত প্রকাশ করেছেন দুজনেই। এ লেখাটি মূলত মাহবুব-উল আলম সম্পর্কে বলেই তাঁর কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি। একটি আধুনিক রাষ্ট্রে ধর্ম প্রসঙ্গে মাহবুব-উল আলম লিখেছেন, ‘যে কোন আধুনিক রাষ্ট্রে ধর্ম একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ভারত ও পাকিস্তানেও ইহার ব্যতিক্রম হইতে পারে না। কারণ আধুনিক পৃথিবীতে ধর্ম অপেক্ষাও বড় এবং আশু সমস্যা হইতেছে মানুষের পেটের ভাত এবং পিঠের কাপড় এবং রাষ্ট্রগুলি এই সমস্যার সমাধানেই এখন পর্যন্ত গলদ্ঘর্ম।’ তবে এই প্রসঙ্গে সংকট কেটে যাচ্ছে গ্রন্থে ব্যক্ত তাঁর বক্তব্য বিবেচনায় রাখা দরকার ‘পেটের ক্ষুধা, পিঠের কাপড় আর যৌন-বোধই মানুষের সবখানি নয়। অবশ্য, মানুষের বস্তুতান্ত্রিক চেহারার এইগুলিই প্রধান উপাদান। কিন্তু, এরও আড়ালে এবং উপরে রয়েছে যে মানুষ নৈতিক জয়ের মাধ্যমে যে মানুষ সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন অগ্রগতির ইতিহাস লিখে চলেছে সে মানুষকে আমরা যেন ক্রমেই ভুলে যাচ্ছি। সাহিত্যেও তার দেখা মিলছে ক্বচিৎ।’
এ কথা সত্যি মানবের বামনায়ন চলছে একালে। একদিকে নানা কৃত্রিম ভাবনা, আভরণ, আচার, প্রথা এবং অন্যদিকে অবিশ্বাস, সন্দেহ, ঘৃণা, সংঘাত উভয়ই কেবল বাড়ছে। এর আড়ালে মানুষের সত্যরূপ, শাশ্বত ভূমিকা, মহৎ উদ্ভাস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাহবুব-উল আলমের চরিত্রে যুগপৎ ‘অন্তরের সবল প্রসন্নতা’ (কাজী আবদুল ওদুদ ১৮৯৪-১৯৭০) এবং ‘চিত্তের অসাধারণ দৃঢ়তা’র (আহমদ শরীফ ১৯২১-১৯৯৯) সমন্বয় ঘটেছিল। আর অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) পেয়েছেন তার মধ্যে আদিম প্রকৃতির নিরাভরণ বলিষ্ঠ সততার নিদর্শন। তাঁর কিছু বিশ্বাস, ব্যাখ্যা, দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সহমত না হলেও মাহবুব-উল আলমের চারিত্রিক মাহাত্ম্য ও সাহিত্যিক সততা এবং নৈতিক মানবতা একালের পাঠককেও আকৃষ্ট ঋদ্ধ করবে বলেই আমাদের ধারণা। মোরশেদ শফিউল হাসানের পরিশ্রমের মূল্য পরিশোধ হবে তখনই, যখন এ বইয়ের সূত্রে হলেও, একালের পাঠক আমাদের সাহিত্যের এক ‘দিকপাল’ ও ‘দিশারির’ (অন্নদাশঙ্কর রায়) প্রতি দৃষ্টি ফেরাবে।
মাহবুব-উল আলম: একজন সত্যসন্ধ লেখকের প্রতিকৃতি
মোরশেদ শফিউল হাসান,
প্রকাশক: টইটম্বুর, ঢাকা
প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
দাম: ২৫০ টাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপন য স প রক শ কর ছ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আরিফ-মুক্তাদিরের আসনে জোবাইদার পোস্টার
সিলেট-১ আসনে দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তারা দু’জন আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এদিকে ‘ডা. জোবাইদা রহমানকে সাংসদ হিসাবে দেখতে চাই’ লেখা পোস্টার নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকে বলছেন, সিলেটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা বলেছেন, এটি বেনামি পোস্টার। বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানা নেই।
গত মঙ্গলবার রাত ১১টার পর হঠাৎ নগরীতে দেখা মেলে ডা. জোবাইদা রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার। এতে জোবাইদা রহমান ছাড়াও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি আছে। এতে লেখা রয়েছে– ‘বাংলাদেশের অহংকার সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জোবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই’। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, লামাবাজার, শাহি ঈদগাহ, সোবহানীঘাট, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এই পোস্টার।
গত বুধবার পোস্টার সাঁটানোর সময় নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকা থেকে আটক করা হয় চা দোকানি আব্দুল কাদিরকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব কাদির দীর্ঘদিন ধরে পোস্টার সাঁটানোর কাজ করে আসছিলেন। তাঁকে আটক করে নগর ছাত্রদলের কিছু নেতা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। এমনকি কাদিরের ভাষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আপলোড করা হয়। এ নিয়ে ছাত্রদলের একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে। তবে কে বা কারা পোস্টারটি করেছে, তা জানা যায়নি।
এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় এই পোস্টার দেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। কারা হঠাৎ এসব পোস্টার সাঁটাল, তাদের খুঁজতে থাকেন বিএনপির লোকজন। এখানে নির্বাচন করার জন্য মুক্তাদির ও আরিফুলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। অনেকের ধারণা, সিলেট বিএনপিতে বিভক্তি থাকায় জিয়া পরিবারের বাইরে কেউ এই আসনে নির্বাচন করলে পরাজয়ের আশঙ্কা আছে।
আরিফুল হক সম্প্রতি লন্ডন সফরে যান। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে, মুক্তাদির যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে লন্ডন যাবেন। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন।
ডা. জোবাইদার পোস্টার নগরীজুড়ে সাঁটানোর পর অনেকেই ফেসবুকে তাঁকে সিলেটের অভিভাবক হিসেবে আখ্যায়িত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ডা. জোবাইদা সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করলে ঐক্যবদ্ধ হবে সিলেটের বিএনপি।
আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডন থেকে আসার পর নিজ বাসায় নেতাকর্মীকে বলেন, ‘তারেক রহমান সিলেটের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আগামী নির্বাচনে দলকে সিলেটের ১৯ আসন উপহার দিতে চাই। এ জন্য সিলেটের একজন অভিভাবক দরকার। আমি নেতার কাছে দাবি করেছি, এমন একজন নেতা দরকার, যাকে ঘিরে সিলেটে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সিলেট বিভাগের মানুষ আশার আলো দেখবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাউকে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছি। এতে সিলেটবাসীর ১৭ বছরের বঞ্চনার অবসান হবে।’
পোস্টার প্রসঙ্গে নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ডা. জোবাইদা রহমান সিলেটের কৃতীসন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসা, নির্বাচন করা অথবা সিলেট-১ আসন চাওয়াটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু পরিচয়বিহীন পোস্টার লাগিয়ে তাঁকে প্রার্থী করার দাবি জানানোর প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট। নগরীজুড়ে সাঁটানো পোস্টারগুলো বেনামি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সিলেট বিএনপি এই মুহূর্তে দু’ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আরেক পক্ষে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তারা দু’জনেই হাল ধরে আছেন বিএনপির। একজন দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। আরেকজন ছিলেন দু’বারের মেয়র। এ অবস্থায় তাদের প্রকাশ্য বিরোধ থামাতে হলে জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন করলে সিলেটের রাজনীতির সমীকরণ অনেকটা পাল্টে যাবে। সিলেট হবে বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি।