গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন এক প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় আরও কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

গতকাল শনিবার কাতারের দোহায় নতুন করে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনায় হামাস এই প্রস্তাব দেয়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় নতুন করে বড় ধরনের অভিযান শুরু করার কয়েক ঘণ্টা পর দোহায় আলোচনা শুরু হয়।

এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে নতুন করে ৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে।

একই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় প্রতিদিন ৪০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাবে। চিকিৎসার জন্য রোগীদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। বিনিময়ে ইসরায়েল অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবিত থাকার প্রমাণসহ বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কারণ, ১০ সপ্তাহ ধরে গাজায় খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।

দোহায় কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নতুন এই যুদ্ধবিরতির আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল স্থানীয় সময় বিকেলে আলোচনা শুরু হয়।

প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আলোচনা শুরুর আগে ইসরায়েল বলেছিল, তারা গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না, কিংবা যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেবে না। প্রস্তাবিত চুক্তিতে এই বিষয়গুলো থাকবে না বলে জানতে পেরেছে বিবিসি।

গতকালই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন গিডিয়নস চ্যারিয়ট’ নামে গাজায় নতুন সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়।

প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আলোচনা শুরুর আগে ইসরায়েল বলেছিল, তারা গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না। কিংবা যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেবে না।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে গাজার উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন হাসপাতালসহ শরণার্থীশিবিরে চালানো ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সবশেষ যুদ্ধবিরতি দুই মাস স্থায়ী হয়েছিল। গত ১৮ মার্চ এই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। সেদিন থেকে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত এক শিশুর মরদেহ নিয়ে যাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত চ ক ত র ইসর য় ল য় নত ন ত ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

কক্সবাজারে ৮০ শতাংশ মাদক আসে সাগরপথে: বিজিবি 

এর আগে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন আরফান হোসেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।’’

আরফান হোসেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনটারী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নুর ইসলাম দিনমজুর ও মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। পরিবারের অন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে জাহান উদ্দিন স্নাতক পড়ছেন এবং আক্কাস আলী পড়ছেন এইচএসসিতে। দুই বোন মালেকা খাতুন ও কাজলী আক্তারের বিয়ে হয়েছে।

আরফান হোসেন বলেন, ‘‘ফেলানী হত্যার পর সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তখন থেকে ইচ্ছে ছিল; বিজিবিতে চাকরি করব। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’’

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ‘‘ভারত থেকে ফেরার পথে আমার নাবালিকা মেয়েকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। তবে, দেশবাসী আর বিজিবি সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।’’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।

ঢাকা/সৈকত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ