বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে নাসিরনগর। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার ১২৮ গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। এ কারণে দাপ্তরিক কাজকর্ম ও জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে আকাশে সামান্য মেঘ দেখা যায়। এর পর উপজেলা সদর ছাড়া প্রায় ১২০টি গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। রাত ১১টার দিকে উপজেলা সদরের বিদ্যুৎও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাত পেরিয়ে সকাল, এর পর বিকেল হলেও বিদ্যুৎ আর আসেনি। কখন আসবে, সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না তারা।
উপজেলা সদরের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, কম্পিউটার চালু না থাকায় কাজ বন্ধ। ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রগুলো বন্ধ। অফিসগুলোতে কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা নাসরিন বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় অফিসে কোনো কাজই করতে পারছি না। চরম হতাশা কাজ করছে। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।’
জানা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া, ফ্যান চালানো, খাবার সংরক্ষণ– সবকিছু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলাবাসী। গোকর্ণ ইউনিয়নের গৃহবধূ মমতা আক্তার জানান, বাচ্চা ঘুমাতে পারে না। ঘরে গরমে দম বন্ধ হয়ে আসে। দুই দিন ধরে তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই।
চাতলপাড়ের বাসিন্দা মীর আবুল আনসারির দাবি, দুই দিন ধরে তাদের ইউনিয়ন বিদ্যুৎহীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, কিছু দিন ধরে আকাশে সামান্য মেঘ করলেই বিদ্যুৎ থাকে না। গত ২০ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় হাটবাজারের দোকানিরা জানিয়েছেন, ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ ক্ষতিপূরণও চাচ্ছেন। তাদের দাবি, কোনো নোটিশ না দিয়ে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কারণ জানাতে হবে। না হলে সবার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সেবাপ্রত্যাশীরা বারান্দায় ঘোরাফেরা করছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালের এক নার্স বলেন, ‘২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় স্যালাইন পাম্প, অক্সিজেন সাপোর্ট সব ঝুঁকিতে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) প্রকৌশলী আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, গত বুধবার রাতে নাসিরনগর বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তাদের টেকনিক্যাল টিম রাতেই কাজ শুরু করেছে। যেহেতু বর্ষার পানি চলে এসেছে এবং এলাকাটি হাওরবেষ্টিত, তাই একটু বেশি সময় লাগছে।
তাঁর কথার সঙ্গে একমত নন নাগরিক অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি, ট্রান্সফরমার পুরোনো, লাইন রক্ষণাবেক্ষণে নেই জরুরি পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা। প্রতিবারই ভেঙে পড়ে পুরো ব্যবস্থা। এটা কোনো আধুনিক ব্যবস্থা হতে পারে না; বললেন স্থানীয় সাংবাদিক শামীম ভূঁইয়া।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব দ য ৎ সরবর হ ব যবস থ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী