বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার, পাশে পড়ে ছিল তার কাটার সরঞ্জাম
Published: 23rd, May 2025 GMT
প্রতীকী ছবি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবহেলার ফল
চট্টগ্রামে ঘরে ঘরে শিশুরা জ্বরাক্রান্ত হইতেছে বলিয়া শুক্রবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহাকে বিশেষত সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য এক সতর্ক সংকেতরূপে দেখিলে ভুল হইবে না। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, তাহাদের নিকট কিছুদিন যাবৎ চিকিৎসা গ্রহণ করিতে আগত শিশুর ৬০ শতাংশই তীব্র জ্বরে আক্রান্ত, তন্মধ্যে ২ হইতে ৮ বৎসর বয়সীই অধিক। এমনকি চার মাস হইতে ১ বৎসরের শিশুও রহিয়াছে। অধিকতর চিন্তার বিষয়, যদ্রূপ একই পরিবারের একাধিক শিশু আক্রান্ত হইতেছে, তদ্রূপ আক্রান্ত অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করিতে হইতেছে। ফলে বাসা আর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করিতে গিয়া সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে অতিরিক্ত ভোগান্তিতে পড়িতে হইতেছে– আর্থিকের সহিত শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি। অন্যদিকে শয্যা অপেক্ষা রোগীর সংখ্যা অধিক হইবার কারণে হাসপাতালগুলিতে এক শয্যায় একাধিক শিশুকে চিকিৎসা লইতে হইতেছে। গত কয়েক দিনে জ্বরাক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কয়েক গুণ হইয়াছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। শিশু ওয়ার্ডের ৮০ শয্যায় প্রতিদিনই রোগী ভর্তি থাকিতেছে ২০০ জনের উপরে। গত ১৮ মে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৭২ রোগী ভর্তি ছিল; ১৯ মে ছিল ২৪১; ১৭ মে ছিল ২৪০ রোগী। জ্বরের সহিত কাশিও যুক্ত থাকায় আক্রান্ত শিশুদের কষ্ট দ্বিগুণ হইয়া পড়িয়াছে।
প্রতিবেদনে শুধু চট্টগ্রামের সংবাদ থাকিলেও রাজধানীর চিত্রও কমবেশি একই রকম। এখানেও চিকিৎসকের চেম্বার এবং হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীরে ব্যথা লইয়া আগত রোগীর ভিড় কম নহে। রোগীদের মধ্যে সকল বয়সের মানুষ থাকিলেও শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই অধিক। সাধারণত এই দুই বয়সসীমার মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিক কারণেই অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ নানা প্রকার ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এই দুই বয়সীদের মধ্যে অধিক দেখা যায়। আরেক বিষয় হইল, এমন নহে যে কেবল এই বৎসরই এহেন জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটিল। বস্তুত প্রতি বৎসরই এই সময়ে ইহার আধিক্য ঘটে। চট্টগ্রামের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ সমকালকে বলিয়াছেন, দিবাভাগে গরমের তীব্রতা অধিক এবং রাত্রিভাগে কিংবা ভোরের দিকে বৃষ্টির কারণে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হইতেছে। পরিবেশের এমন তারতম্য শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতেছে। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্য বয়সী রোগীরাও একই পরিস্থিতির শিকার। অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সহিত উক্ত রোগের উপসর্গগুলি ব্যাপক হারে দেখা দিতেছে। তবে ইহাও লক্ষণীয়, পল্লি অঞ্চল অপেক্ষা নগর ও শহরগুলিতেই এহেন জ্বরের প্রকোপ অধিকতর হারে ঘটিয়া থাকে। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং নিয়ম লঙ্ঘন করিয়া নির্মাণকাজ পরিচালনার কারণে বাতাসে ধুলা-বালির পরিমাণ প্রায় সমগ্র বৎসরই শহর ও নগরাঞ্চলে অধিক থাকে। যান্ত্রিক যানবাহনের আধিক্যের কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস মিশ্রিত ধোঁয়াও মাত্রাতিরিক্ত হয়। এই সকল কারণে কয়েক বৎসর যাবৎ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলিতে বিশুদ্ধ বায়ু প্রায় বিরল হইয়া পড়িয়াছে। এমনকি জাতীয় ও বৈশ্বিক বিবিধ সূচক অনুসারে, বিশেষত রাজধানীর বায়ুর মান অনেক সময় নিকৃষ্টতম অবস্থায় থাকে। মে-জুন মাসে বৃষ্টিপাত কিছু মাত্রায় হইলেও প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে। তাই বাতাসে ধুলা-বালিও সম্পূর্ণ থিতাইয়া যায় না। অন্যদিকে বিশেষত ঘরের বাহিরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মান্য করিবার প্রবণতাও নগরবাসীর মধ্যে যথেষ্ট নহে।
এই সকল কিছু মিলাইয়া আলোচ্য সমস্যাকে জনস্বাস্থ্যগত বলিলেও ভুল হয় না। তাই ইহা প্রশমনে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের বহু কিছু করণীয় রহিয়াছে বলিয়া আমরা মনে করি। একদিকে আক্রান্তদের দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসা যদ্রূপ নিশ্চিত করিতে হইবে, তদ্রূপ রোগ প্রতিরোধের পদক্ষেপ হিসাবে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরাইয়া আনাও গুরুত্বপূর্ণ। জনসচেতনতা গড়িয়া তোলার কাজও এই সকল সংস্থাকে করিতে হইবে।