চীনা নারী পেং হুইফাং কাজ করছিলেন ১২ তলায়। সঙ্গে নিরাপত্তা সরঞ্জাম না থাকায় হঠাৎ তিনি নিচে পড়ে যান। কিন্তু ৪৪ বছর বয়সী এই নারী বিস্ময়করভাবে বেঁচে যান। চিকিৎসকেরা আশা করছেন, ছয় মাসের মধ্যে তিনি আবার হাঁটতে পারবেন।

ঘটনাটি ঘটেছে ১৩ মে, চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংসির লেপিং শহরে। হুইফাং একটি কারখানায় পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন তিনি স্বামীর ফোন পেয়ে তাঁকে সহায়তা করতে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী জানালার ব্যবসা করেন। এক গ্রাহকের বারান্দায় জানালা লাগাতে গিয়ে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন।

ক্রেন দিয়ে ১২ তলায় কয়েক শ কেজি ওজনের একটি জানালা তোলা হচ্ছিল। ১২ তলার ব্যালকনি থেকে দূর নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাহায্যে সেটি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন হুইফাং। একপর্যায়ে জানালাটি একটি গাছের ডালে আটকে দ্রুত নিচে পড়ে যায়। জানালার সঙ্গে টান খেয়ে হুইফাংও নিচে পড়ে যান।

হুইফাং বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, আমি মরে যাচ্ছি। আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’ তবে নিচে পড়ে টের পান, তিনি বেঁচে আছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি স্বামীর উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি এখনো মরিনি, ১২০-এ ফোন করো!’

হুইফাংকে দ্রুত নানচাং বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ডান পা, বাঁ পা ও পিঠে আঘাত লাগে। তবে ওপরের অংশে মন কোনো চোট লাগেনি। তাঁর আবার অস্ত্রোপচার করা হবে।

হুইফাংয়ের আঘাত আরও গুরুতর হতে পারত। কিন্তু তিনি সরাসরি মাটিতে না পড়ে একটি ছাউনিতে পড়েন। সেখান থেকে মাটিতে পড়েন। মূলত এ কারণেই তিনি গুরুতর আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

নিরাপত্তা সরঞ্জাম না পরার জন্য নিজেকেই দায়ী করছেন হুইফাং। তাঁর চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে ৭০ হাজার ইউয়ান (১০ হাজার ডলার) খরচ হয়েছে। এখন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে হুইফাংয়ের পরিবার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সবাই হুইফাংর জন্য প্রার্থনা করছেন। অনেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। একজন লিখেছেন, ‘মহাবিপদের পর মহাভাগ্য। দ্রুত সুস্থ হোন হুইফাং।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মৃতপ্রায় ভুলুয়া, বন্যা আতঙ্কে পাড়বাসী

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার খরস্রোতা ভুলুয়া নদী, এখন মৃত প্রায়। নাব্য সংকট ও অবৈধ দখল আর প্রভাবশালীদের বাঁধের কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর প্রশস্ততা। 

২০২৪ এর ভয়াবহ বন্যার প্রধান কারণ ছিল এই নদীটি। এখন বর্ষার মৌসুম চলে আসায় আবারও বন্যার আতঙ্কে ভুলুয়া নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। অপরদিকে দীর্ঘ বছর ধরে খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি শুকিয়ে যায়। এতে চাষাবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নোয়াখালীর সূবর্ণচর ও বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে খরস্রোতা ভুলুয়া নদী। এ নদীর দৈর্ঘ্য ছিল ৭৬ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ছিল ৫০০ মিটার। দখল, অবৈধ বাঁধ নির্মাণ আর পলি জমে নদীর প্রস্থ এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮৫ মিটারে। নদীটি খনন না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে হেঁটেই পার হওয়া যায়। পানির অভাবে হুমকির মুখে মাছসহ নদীকেন্দ্রীক সমস্ত জীববৈচিত্র। কমে গেছে আশেপাশের কৃষি উৎপাদনও।

আরো পড়ুন:

বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি, বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি

শেরপুরে কমেছে সব নদীর পানি, বাঁধে ফাটল থাকায় আতঙ্ক

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুলুয়াতে এখন হাঁটুপানিও নেই। বৈশাখের বৃষ্টির আগেও ভুলুয়ার বিভিন্ন স্থান শুকিয়ে চৌচির হয়ে ছিল। এখনকার ভুলুয়া দেখে বোঝার উপায় নেই, কয়েক মাস আগেও রাক্ষসী রুপে আর্বিভূত হয়ে ঘরবাড়ি, ফসলি মাঠ ভাসিয়েছে নদীটি। 

ভুলুয়ার এই দশার পিছনে দায়ি করা হচ্ছে স্থানীয়দের দখলদার আর মাছ শিকারের বাঁধকে। দীর্ঘ সময় ধরে ভুলুয়ার দখলদারিত্ব উচ্ছেদ কিংবা পুনঃখননে নেওয়া হয়নি কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ। সেই সুযোগে নদীকে যেন এক প্রকার ‘গলা টিপে’ হত্যা করা হয়েছে। 

ভুলুয়ার এমন করুণ দশার কারণে একদিকে যেমন বন্যার কবলে পড়ছে বাসিন্দারা, অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। তবে পরিকল্পিত খননে ভুলুয়ায় ফিরতে পারে প্রাণ, বর্ষায় বাসিন্দারা রক্ষা পেতে পারেন বন্যা থেকে। ভুলুয়ার পানি দিয়ে অনাবাদি জমিতে সোনালী ফসল ফলাতে পারবেন কৃষকেরা। এমনটাই মনে করছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং নদীর দুই পাড়বাসী।

চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা গ্রামের নাসির আহমেদ, আবুল খায়ের, ইয়াসিন ও মন্তাজ মিয়া জানান, গেল বর্ষা মৌসুমে যখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে, ঠিক তখনই ভুলুয়া পুনরুদ্ধার এবং খননের জন্য আন্দোলন শুরু করেন আব্দুস সাত্তার পলোয়ান নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। এ লক্ষ্যে উচ্চ আদালতে রিট করেন তিনি। বন্যাকালীন নিজেই ভুলুয়াতে নেমে পড়েন বাঁধ ও মাছ শিকারে পেতে রাখা অবৈধ বাঁধ ও জাল অপসারণে। 

গেলবারের ভয়াবহ বন্যায় ভুলুয়ার সংকট যখন সামনে চলে আসে, তখন নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বন্যার অতিরিক্ত পানির কারণে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। দ্রুত অবৈধ বাঁধ ও প্রভাবশালীদের থেকে জবরদখল মুক্ত করার দাবি জানান ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, ভুলুয়া নদীর বেশিরভাগ অংশ জুড়েই মৎস্য শিকারীদের অবৈধ বাঁধ। এতে নদীর মাঝ অংশ সংকুচিত হয়ে আছে। বাঁধের কারণে নদীর বিভিন্ন অংশে চর জেগেছে। ভুলুয়ার রামগতি অংশের আজাদনগর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দুইপাশ দখল করে বসতি স্থাপন করেছে দখলদাররা। নদীর ভেতর ভরাট করে মৎস্য খামার (পুকুর) কিংবা বাগান তৈরি করছে অনেকে। অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটার জন্য মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু। 

নদীটির কমলনগর এবং রামগতি অংশে ছোটবড় অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। বন্যার সময় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, নিচু কালভার্টের কারণে বন্যার পানি প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঠিকমতো পানি নামতে না পারায় অতিরিক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। 

গেলো বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে ভয়াবহ বন্যার কবলে ছিল ভুলুয়ার রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বাসিন্দারা। ফেনীতে যখন উজানের পানি চাপ দেয়, সেই পানি নোয়াখালীর উপর দিয়ে ভুলুয়া নদী হয়ে রামগতির মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীর তলদেশ ভরাট, অবৈধ দখল, মাছ ধরার বাঁধ-জাল, নিচু ব্রিজের রেলিংয়ের কারণে পানি প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। 

এসব কারণে পানি মেঘনায় প্রবাহিত না হয়ে নদীর দুইকূলের লোকালয়ে প্লাবিত হয়েছে। এতে ডুবেছে বসতবাড়ি, মৎস্য খামার, আর ফসলি জমি। কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের একাংশ, চরকাদিরা ইউনিয়নের পূর্ব অংশ, রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা, চর আলগী, চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল ছিল বন্যা কবলিত। 

এক থেকে দেড় মাস, কোথাও আবার দুই পর্যন্ত পানিবন্দি ছিল লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার কবলে পড়ায় দুর্গতদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করা গেছে। বন্যায় ফসলের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমন ক্ষতি হয়েছে বসতঘরেরও। ভেসে গেছে পুকুর-জলাশয়ের মাছ। গবাদিপশু নিয়েও দুর্ভোগে ছিলেন গৃহস্থরা। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষিতেও। 

কৃষকরা জানান, বন্যা যখন শুরু হয় তখন ক্ষেতে আমনের বীজতলা ছিল। আবার কোন কোন ক্ষেতে সদ্য আমনের চারা লাগানো ছিল। বিভিন্ন শাকসবজির আবাদও ছিল জমিতে। বন্যার পানিতে সবই তলিয়ে যায়। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, “বিগত কয়েক দশক ধরে নদীর তলদেশে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি জমা হয়ে ভরাট হয়ে গেছে। এতে নদীর পানি পরিবহন হ্রাস পেয়ে নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে কৃষি উৎপাদন, জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সুবিধা গুরুতরভাবে ধস নেমেছে। দীর্ঘ সময় নদী ড্রেজিং বা খনন না করায় নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। এতে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য পানির অপ্রাপ্যতা ও বর্ষা মৌসুমে পোল্ডার অভ্যন্তরীণ নিচু এলাকার পানি নিষ্কাশনে অপ্রাচুর্যতা সৃষ্টি হয়। পুনঃখনন না করায় নদীতে অবৈধ দখল ও দূষণের ফলে পানি প্রবাহ হ্রাস পেয়ে ভরাট হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “ভুলুয়ার পুনঃখননের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে মিষ্টি পানি ধরে রাখার মাধ্যমে পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৫২৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সেচ সুবিধায় আসবে। এতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভুলুয়া খনন হলে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে। বর্ষা মৌসুমে উপরের পানি নদীতে গিয়ে পড়বে। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি ভুলুয়াতে ঢুকবে। এতে একদিকে যেমন বন্যা বা জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে, অন্যদিকে কৃষিকাজেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় বাসিন্দারা নানাভাবে উপকৃত হবে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ