আগামীকাল সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব দপ্তরে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতায় থাকবে না। এ ছাড়া ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম আমদানিও কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।

আজ রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নেতারা। এ সময় বক্তব্য দেন উপকমিশনার আবদুল কাইয়ুম, উপকর কমিশনার রইসুন নেসা।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে আজ সারা দিন আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি চলেছে। বেশির ভাগ শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআরের নিচতলায় প্রধান ফটকের পাশেই সারা দিন অবস্থান নিয়েছেন। বন্ধ থাকে প্রবেশের প্রধান দুই ফটক। ফলে এনবিআরের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে।

আজ সকাল থেকে সরেজমিনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। আজ চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ভোমরা স্থলবন্দরসহ দেশের অন্যান্য শুল্ক স্টেশনেও কর্মবিরতি চলেছে। কয়েক দিন ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ আন্দোলন চলছে।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি মূলত চারটি। প্রথমত, জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; তিন, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; চার, এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে রাজস্বব্যবস্থার সংস্কার নিশ্চিত করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ‘নাকাল’ কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক অবকাঠামো ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পরও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই নিজস্ব প্রধান সাব-স্টেশন অথবা কোনো কার্যকর জেনারেটর। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কুবির প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা, অনলাইন ক্লাস, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেটসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটছে। এমনকি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক আবহাওয়াতেও দিনে সাত-আটবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

আরো পড়ুন:

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়সসীমা থাকছে না

জাবিতে গাঁজা সেবনকালে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীসহ আটক ৪

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আবাসিক হল ও বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকট দেখা দেয়, বন্ধ হয়ে যায় ওয়াইফাই। এতে অনলাইন ক্লাস ও গবেষণার কাজ স্থবির হয়ে পড়ে।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, সামান্য বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ সমস্যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষকদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষাকার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। তাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করতে হবে। 

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন নিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মায়া ইসলাম বলেন, “প্রায় প্রতিদিন লোডশেডিং হয়। এতে খাবার পানি সংগ্রহ থেকে শুরু করে অনলাইন ক্লাসেও অংশ নিতে পারি না।”

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিনই বিদ্যুৎ চলে যায়, ভোল্টেজ থাকে কম। এতে ইন্টারনেটও বারবার বিচ্ছিন্ন হয়। ক্লাস, টিউশনি শেষে হলে ফিরে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি না।”

শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, শিক্ষকরাও এ সমস্যায় ভুগছেন। ক্লাস চলাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম অচল হয়ে যায়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সংকটের পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন ও শিক্ষাচর্চায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।”

বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। এরপর শনিবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ আসে কোটবাড়ি সাব-স্টেশন থেকে। সেখান থেকে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়। ফলে যেকোনো মেরামত বা দুর্যোগে একযোগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বৈদ্যুতিক) মো. জাকির হোসেন বলেন, “হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা রাইস কুকার, হিটার, ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করেন, যা নির্ধারিত ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ টানে। এ অতিরিক্ত লোডের কারণে সার্কিট পুড়ে যায় এবং লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমরা সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি তুলেছি। লাইনটি বনজঙ্গল ঘেরা এলাকায় হওয়ায় সামান্য ঝড়বৃষ্টিতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিংয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি।”

তবে জেনারেটর স্থাপন নিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো জেনারেটর স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিষয়টি আপাতত বিবেচনায় নেই।”

কোটবাড়ি সাব-স্টেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. পিন্টু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। তবে নিজস্ব প্রধান সাব-স্টেশন স্থাপন করতে হলে কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ চাহিদা উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ