মানিকগঞ্জ শহরে এক ব্যবসায়ীকে হাতকড়া পরিয়ে চোখ ও মুখ বেঁধে অপহরণের পর টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার রাতে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম জাফর আলী (৪৪)। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং ও ফটোকপির দোকান আছে। তাঁর বাড়ি জেলা সদরের দীঘি গ্রামে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি যাচ্ছিলেন জাফর। এ সময় তাঁর সঙ্গে সম্রাট (১৭) নামের দোকানের একজন কর্মচারী ছিল। রাত পৌনে ১১টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় পাশ থেকে চার থেকে পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাঁকে ডাক দেয়। মোটরসাইকেলটি থামালে তারা হাতকড়া পরিয়ে জাফরকে একটি গাড়িতে তোলে। এ সময় ওই কর্মচারীকেও গাড়িতে তোলা হয়। পরে ওই ব্যবসায়ীর হাত ও চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর থানার তেতুইবাড়ী এলাকায় তাঁদের ফেলে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাফর আলীর দোকানে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জাফর বলেন, প্রায় ৮০ হাজার টাকাসহ দুটি মুঠোফোন নিয়ে নেয় অপহরণকারীরা। মুক্ত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়েও তিনি মোটরসাইকেল পাননি। মোটরসাইকেল খোয়া যাওয়ার বিষয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন।

মামলা করবেন না কেন, জানতে চাইলে জাফর বলেন, অপহরণকারীরা তাঁকে ও তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চেনে। মামলা করলে তারা (অপহরণকারীরা) ভবিষ্যতে ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপহরণক র র ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহরণ’, ফেনী থেকে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ

২০১৯ সালের ৭ মে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহৃত’ হয়েছিলেন কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদ (৪৬)। এরপর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের দাবি, আবদুল আহাদের মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের মুক্তিপণও দিয়েছিল তারা। তবে ফেরত পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত ছয় বছর পর গতকাল বুধবার আহাদের মরদেহ মিলেছে ফেনীতে।

পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে আহাদের মরদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের ধারণা ছিল, আহাদ দিনমজুরের কাজ করেন। তবে তাঁর পকেটে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আসল পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ পরিবারকে খবর দেয়।

নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার ভূইগাঁও ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো. ইমানি মিয়ার ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রথমে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন।

নিহত আহাদের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই চট্টগ্রামে একাই থাকতেন। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন। ২০১৯ সালের ৭ মে ভোরে তাঁর ভাবিকে মুঠোফোনে জানানো হয় ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীদের তাঁর ভাবি মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকাও দেন। তবে তাঁর ভাইকে ফেরত পাওয়া যায়নি।

নাঈমা নাসরিন দাবি করেন, তাঁর ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তবে দলীয় কোনো পদে ছিলেন না। তাঁর ভাইকে কেন অপহরণ করা হয়েছে, কেন গুম করা হয়েছে তাঁরা জানেন না। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।

লাশ ফেনীতে কীভাবে এল, জানে না পুলিশ

নিহত আবদুল আহাদের ফেনীর ছাগলনাইয়া কীভাবে এসেছে, তা আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি এত দিন আহাদ কোথায় ছিলেন, এর কোনো ব্যাখ্যাও তাঁরা দিতে পারেনি। পুলিশের দাবি, আহাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা।

নিহত আহাদের ভাগনে মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণের ঘটনার পর তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তবে তাঁর মামার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার শাস্তি চান।

জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহ আলম বলেন, নিহত কাস্টম কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে ছয় বছর আগে অপহরণের যে বিষয়টি জানানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরায় ৮ দিনেও খোঁজ মেলেনি অপহৃত কিশোরীর
  • ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহরণ’, ফেনী থেকে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ