ঢাকাইয়া আকবরকে খুনের মামলায় ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের ভাই ও ভাগনে গ্রেপ্তার
Published: 27th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামে ‘সন্ত্রাসী’ আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে খুনের মামলায় বিদেশে পলাতক ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের ভাই ও ভাগনেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের পৃথক অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সাজ্জাদ আলীর ভাইয়ের নাম ওসমান আলী। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পতেঙ্গা থানা-পুলিশ। অন্যদিকে সাজ্জাদের ভাগনে মো.
গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায় আলী আকবরকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আকবরের স্ত্রী রূপালী বেগম বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে ওসমান আলী ও আলভিনের নাম রয়েছে।
২০০০ সালের ১২ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ব্রাশফায়ারে ছয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ আটজন নিহত হন। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় সাজা পেলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান সাজ্জাদ আলী। আট খুনের পর জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান তিনি। কিন্তু থেমে থাকেনি তাঁর সন্ত্রাসী কার্যক্রম। বিদেশে বসে নিজের বাহিনীদের মাধ্যমে নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে আসছেন।
সাজ্জাদ আলীর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত বায়েজিদ এলাকায় ‘সন্ত্রাসী’ সারোয়ার হোসেন ও আকবর আলী। একসময় তাঁরা সাজ্জাদের হয়ে কাজ করলেও বছর দু-এক আগে তাঁরা দল থেকে বেরিয়ে যান। সাজ্জাদ আলীর বাহিনীর এখন নেতৃত্বে রয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। ১৫ মার্চ সাজ্জাদ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তাঁকে গ্রেপ্তারের জেরে গত ২৯ মার্চ নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডে একটি প্রাইভেট কারে গুলি করে দুজনকে খুনের ঘটনা ঘটে। প্রাইভেট কারটিতে ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন থাকলেও তিনি বেঁচে যান। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার এক আসামি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, এলাকায় ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়াসহ পাঁচ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সরোয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গুলি করে ঢাকাইয়া আকবরকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স জ জ দ আল নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।