কাপড়, তুলা, সুগন্ধিযুক্ত প্যাডে বাড়ছে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি
Published: 28th, May 2025 GMT
দেশের মাত্র ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী পিরিয়ড বা মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। বাকিদের ভরসা পুরোনো কাপড় ও তুলার মতো অস্বাস্থ্যকর কিছু। অথচ পুরোনো কাপড়, তুলা কিংবা রাসায়নিক সুগন্ধিযুক্ত ভ্যাজাইনাল প্রোডাক্ট ব্যবহারের কারণে ৯৭ শতাংশ নারীই জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময় সার্ভিক্যাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হন। নারীর মাসিক স্বাস্থ্য বিধানের ওপর ক্যান্টারের ২০২৪ সালের হাউসহোল্ড পেনিট্রেশনের গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ উপলক্ষে মাসিক সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো এবং ওই সময়ে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে দেশের বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করেছে। ২০১৪ সালের ২৮ মে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। এ বছর দিবসটির স্লোগান– মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়ি একসঙ্গে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীর স্বাভাবিক শারীরিক এক ক্রিয়া পিরিয়ড বা মাসিক। অথচ পরিবার কিংবা প্রতিষ্ঠান– কোথাও এ নিয়ে কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। এতে নারীর সুস্থতা যেমন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, একইভাবে পেশাগত ও আর্থিক ক্ষেত্রেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। নারীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিতে তাই প্রয়োজন সম্মিলিত সহযোগিতা।
ক্যান্টারের গবেষণায়ও এই সময়ে নারীর শিক্ষা ও পেশাগত ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪০ শতাংশ স্কুলছাত্রী মাসিকের সময় গড়ে তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, তাদের শিক্ষাজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, পোশাক শিল্পে কর্মরত প্রায় ৬০ লাখ নারী কর্মী মাসিকের সময় গড়ে ছয় দিন কাজে অনুপস্থিত থাকেন। এটি তাদের আর্থিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতাকেও ব্যাহত করে।
এ নিয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী মাহিন সমকালকে বলেন, কাজের প্রয়োজনে প্রায়ই তাঁকে থাকতে হয় অফিসের বাইরে– মাঠ পর্যায়ে। এ জন্য মাসের বিশেষ কয়েক দিন অর্থাৎ মাসিক চলার ওই সময় নিয়ে আতঙ্কে থাকেন তিনি। এর বড় কারণ, মাঠ পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার নানা কুসংস্কারের কারণেও পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
আরেক চাকরিজীবী ইসরাত জানান, অফিস বা বাসায় তেমন অসুবিধায় না পড়লেও দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মাহিন ও ইসরাতের মতো শিক্ষিত ও কর্মজীবী নারীদের যখন এ অবস্থা, তখন স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিশোরীদের এ সময়ের সংকট মোকাবিলা করা হয়ে ওঠে আরও কঠিন।
এ বিষয়ে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ান বলেন, বাংলাদেশের নারীরা মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে। দেশে এখনও মানসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই কম। আবার যারা এটি ব্যবহার করেন, তারাও সঠিক ব্যবহার ও সময় সম্পর্কে সচেতন নয়। একই প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করলে নারীর জরায়ুমুখের ত্বকে নানা সমস্যা ছাড়াও জরায়ু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। সেই সঙ্গে অনেক কিশোরী শিক্ষা ও সামাজিক সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।