৪২ বছরের অভিজ্ঞতায় টানা দুবার দেশসেরা চা চয়নকারী জেসমিন
Published: 28th, May 2025 GMT
১৬ বছর বয়সে চা-শ্রমিক আবদুল বারেকের সঙ্গে বিয়ে হয় জেসমিন আকতারের (৫৮)। দরিদ্র স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা আনতে বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাগানে চা-পাতা তোলার কাজ নেন। ৪২ বছর ধরে সে কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি চা–পাতা তোলায় দেশসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন এই চা–শ্রমিক।
শ্রেষ্ঠ চা-পাতা চয়নকারী শ্রমিক হিসেবে জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নেপচুন চা–বাগানের চা–শ্রমিক জেসমিন আকতার। জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে গত ২১ মার্চ (বুধবার) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শুধু এবারই নয়, ২০২৪ সালেও শ্রেষ্ঠ চা-পাতা চয়নকারীর স্বীকৃতি পেয়েছিলেন জেসমিন আকতার।
জেসমিনের সাফল্যের গল্প জানতে গত সোমবার বিকেলে নেপচুন চা-বাগানের ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বাগানে চা-পাতা তোলার কাজ করছেন জেসমিন। কার্যালয়ে পাওয়া যায় তাঁর বড় ছেলে একই বাগানের শ্রমিক মুহাম্মদ আলামিনকে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাগানের পথ ধরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখা হয় জেসমিন আকতারের সঙ্গে। পাহাড়ের ঢালুতে বাগানে তখন তিনি ১০-১৫ জন সহকর্মীর সঙ্গে দু-হাত চালিয়ে পাতা তোলায় ব্যস্ত। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই একটি কুঁড়ি দুটি পাতা ঘিরে বহমান জীবনের গল্প শোনালেন তিনি।
বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাগানে যোগদানজেসমিন আকতারের বাবার বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়। স্বামীর বাড়ি একই জেলার মুরাদনগরে। তবে স্বামী ছিলেন নেপচুন চা-বাগানের নৈশপ্রহরী। বিয়ের পর জেসমিনকে স্বামীর সঙ্গে চলে আসতে হয় বাগানে। মাস তিনেক পর স্বামীর কষ্ট দেখে স্থির করলেন তিনি নিজেও বাগানে কাজ করবেন। স্বামীর হাত ধরে একদিন বাগান ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে চা চয়নকারী হিসেবে যোগ দেন।
কথায় কথায় জেসমিন যেন পুরোনো দিনে ফিরে যান। বলেন, শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির লোকজন গরিব ছিলেন। স্বামী একা সব সামলাতে কষ্ট পাচ্ছিলেন। দুজন মিলে আয় করে সংসারে সচ্ছলতা আনার চিন্তা থেকে নববধূ অবস্থায় বাগানে যান তিনি। কোনো বাধাবিপত্তি এসেছে কি না জানতে চাইলে জেসমিন বলেন, মাতৃত্বকালীন সময়ে কিছুটা সমস্যা হয় কয়েক মাস, তবে বাধা আসেনি। ওই সময়ে বাগান কর্তৃপক্ষ শিশুকে দেখভালের ব্যবস্থা করে। এভাবে তাঁরা বাগানে কাজ করতেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছ থেকে সেরা চা চয়নকারীর পুরস্কার গ্রহণ করছেন জেসমিন আকতার। গত ২১ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফিরিয়ে দাও’ থেকে ‘ধূসর সময়’: সিডনিতে একই মঞ্চে মাইলস ও আর্টসেল
সিডনির বসন্তের সন্ধ্যা। লিভারপুলের হুইটল্যাম লেজার সেন্টারের বাইরে তখন লম্বা লাইন—হাতে পতাকা, কাঁধে ব্যাগ, চোখে প্রত্যাশা। সাউন্ডচেকের শব্দ ভেসে আসছে বাইরে। ভেতরে যেন উন্মুখ এক ‘সাগর’, যেখানে মিশে আছে দুই প্রজন্মের মুখ, কণ্ঠ আর স্মৃতি। শনিবার রাতটি হয়ে উঠেছিল প্রবাসী বাঙালিদের জন্য এক ব্যতিক্রমী উৎসব—বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের দুই যুগের দুই প্রতীক, মাইলস ও আর্টসেল; প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে গান করল সিডনিতে।
‘গ্রিনফিল্ড এন্টারটেইনমেন্ট’ আয়োজিত এই ‘মিউজিক ফেস্ট’ ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা যেন উপচে পড়ল সেই রাতে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরপরই সব শেষ। অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিম উপশহর লিভারপুলের রাস্তাগুলো ভরে গেল গানের ভক্তে।
আয়োজনের আগে ভিডিও বার্তায় মাইলস জানায় তাদের উচ্ছ্বাস। ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ বলেন, ‘সিডনি বরাবরই আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। সম্ভবত ১৯৯৬ সালে আমরাই প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় পারফর্ম করি। এরপর এ নিয়ে অন্তত পঞ্চমবারের মতো সিডনিতে এলাম। এখানকার দর্শকদের ভালোবাসা সব সময়ই অবিশ্বাস্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতাম এটি স্মরণীয় একটি আয়োজন হতে যাচ্ছে। আমরা চেয়েছি সবাই একসঙ্গে গাইবে, চিৎকার করবে—ভক্তরা সেটাই করেছেন।’ গিটারিস্ট তুজো যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি শহরে ট্যুর করছি, কিন্তু সিডনির আবহ একেবারেই আলাদা। দর্শকেরা আমাদের রাতটিকে স্মরণীয় করে দিয়েছেন।’
মঞ্চে আর্টসেল