ময়মনসিংহ শহর ঘেঁষে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র। এই নদের তীরে বুড়াপীরের মাজার। মাজারের পেছন দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে পশ্চিমে কাছারিঘাটের দিকে। গত ২২ মার্চ এই রাস্তা ধরে হাঁটতে গিয়ে কালাহুজাগাছ দেখি। সাদা ছোট ছোট ফুলে ছেঁয়ে আছে। ছবি তুলে ফেলি ঝটপট। এরপর ১৫ মে টাউন হল–সংলগ্ন জোবেদা কমিউনিটি সেন্টারের পূর্ব পাশে দেখি আরেকটি কালাহুজাগাছ। পুরো গাছ ফলে ভরে আছে।
আমাদের গ্রামের বাড়ির জেলার তারাকান্দা উপজেলার আউটধারে। বাড়ির পশ্চিম দিকে একটি উঁচু গাছ ছিল। মার্চ–এপ্রিল মাসে সাদা ছোট ছোট ফুলে গাছটি ছেয়ে থাকত। মে–জুন মাসে ফল পেকে হলদে-কালো রঙের হতো। পাখি খেত সে ফল। তখন ভাবতাম, যে ফল পাখি খেতে পারে, মানুষ কেন পারবে না? ঝড়ে একবার গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। সেই ডাল থেকে পাকা ফল খেয়েছি, মিষ্টি।
ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল মোড়ে, কাচিঝুলি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের পেছনে, কিশোরগঞ্জে সরকারি গুরুদয়াল কলেজের সামনে নরসুন্দা নদীর তীরে বেশ কয়েকটি কালাহুজাগাছ রয়েছে। সম্প্রতি গিয়েছিলাম নরসিংদী সরকারি কলেজে। পলাশ থেকে ভেলানগর যাওয়ার পথে অনেক কালাহুজাগাছে ফল ধরতে দেখেছি।
কালাহুজা মাঝারি থেকে বড় আকারের একটি গাছ। বৈজ্ঞানিক নাম Ehretia acuminata। এটি Boraginaceae পরিবারের। অন্যান্য স্থানীয় নাম কাঠগোয়া, খরচোনা, চাউলমুঠি, জলডুঙ্গা, তিতপল্লা, তিনাডুলি ইত্যাদি। ইংরেজিতে Brown Cedar, Kodowood, Koda Tree, Silky Ash পরিচিত।
কালাহুজার কাণ্ড খাঁজকাটা, বাকল খাড়া ফাটলযুক্ত, মলিন ও ধূসর। পাতার বিন্যাস একান্তর ও সরল, ডগা পর্যন্ত সরু। পাতার কিনারা সূক্ষ্ম দাঁতের মতো খাঁজযুক্ত, ৮ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার লম্বা। পাতার উভয় পাশ মসৃণ ও সবুজ। ওপরে সামান্য লোমযুক্ত। পাতার উভয় অংশে মধ্যশিরা ও পার্শ্বশিরাগুলো আলাদা।
ফুল সুগন্ধি, অবৃন্তক। বৃন্ত ছাড়া ফুলের ব্যাস প্রায় চার মিলিমিটার। দক্ষিণ গোলার্ধে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে এই গাছে ফুল ফোটে। বৃতি পেয়ালাকৃতির, বৃত্যংশ ৫টি। দলমণ্ডল মূলীয় অংশে নলাকার, পাপড়ি ৫টি, অত্যন্ত ছোট। ফলও খুব ছোট, গোলাকার, মসৃণ ও রসালো। ব্যাস চার থেকে পাঁচ মিলিমিটার। কালাহুজার ফলে বীজ থাকে চারটি। এই ফল দিয়ে আচারও বানানো যায়।
পাহাড়ি বন, শহরতলি ও গ্রামের ঝোপে দেখা যায় এই উদ্ভিদ। আদি নিবাস এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।
কালাহুজার কাঠ শক্ত, তবে হালকা। আসবাব তৈরি ও খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজের অঙ্কুরোদ্গম তুলনামূলক সহজ। আগে ফল থেকে মাংসল অংশ সরাতে হবে। এরপর বপন করলে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম হবে।
২০২১ সালের আগস্টে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ন্যাচারাল প্রোডাক্টস অ্যান্ড রিসোর্সেস–এ প্রকাশিত এক গবেষণানিবন্ধ থেকে জানা যায়, কালাহুজা উদ্ভিদে প্রদাহবিরোধী, ডায়াবেটিসবিরোধী, পেশির খিঁচুনি প্রতিরোধী ও ব্যথানাশক উপাদান রয়েছে।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার
গাজীপুরে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রায়ই রাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে ডাকাতের কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এসকল ডাকাত সদস্যদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত এক মাসে কালিয়াকৈর থানা ও মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ি অভিযান চালিয়ে ২০ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। একইসঙ্গে ছয়টি পিকআপও জব্দ করেছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সুমন হোসেন ও সোহাগ নামে দুজন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ি। এসময় তাদের দখলে থাকা একটি পিকআপ জব্দ করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের ডাকাতি মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এরআগে, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের তিন গ্রেপ্তার করা হয়। উপজেলার মৌচাক ফকিরবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকমাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে। বিশেষ করে কালিয়াকৈর-মাওনা আঞ্চলিক সড়ক ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে তাদের উৎপাত বেশি।
সড়কে পুলিশ টহল থাকলেও ডাকাত সদস্যরা বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে এরপর সুযোগ বুঝে ডাকাতি করে। এছাড়াও মাওনা কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি করে তারা। পুলিশ এরপর থেকেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে।
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আব্দুস সেলিম বলেন, “ডাকাতের উপদ্রব বেড়েছে। তবে আমরা ডাকাতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। গত ১ মাসে আমাদের পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ১৫ জন ডাকাত সদস্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পাঁচটি পিকআপ জব্দ করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, “রাতে আমাদের টহল পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা গত এক মাসে ২০ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
ঢাকা/রেজাউল/এস