প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোথাও পাঠদান, কোথাও শিক্ষকদের কর্মবিরতি
Published: 28th, May 2025 GMT
তিন দফা দাবি আদায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ দেশে অনিদিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বুধবার (২৮ মে) ছিল ওই কর্মসূচি পালনের তৃতীয় দিন। এদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। কোথাও চলছে পাঠদান; আবার কোথাও চলছে সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোয় পাঠদান চলছে। শিক্ষকেরা নিয়মিতভাবে ক্লাস নিচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত রয়েছে। তারা মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে।
গোমস্তাপুর উপজেলার পশ্চিম আনারপুর সরকারি বিদ্যালয়ের চিত্র অন্যরকম। সেখানে শিক্ষকরা অফিসকক্ষে বসে কাজ করছিলেন। কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হচ্ছিল না। শিক্ষার্থীদের কেউ লিখছে, কেউ গল্প করছে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে শ্রেণিকক্ষে উঁকি দিচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
রাবিতে সংঘর্ষ: ৩ ছাত্র সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ-প্রতিবাদ
‘তপন বিহারী’ বৃত্তি পাচ্ছেন নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রুহুল আমীন জানান, সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ডাকা তিনদফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলার সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় দিনের কর্মবিরতি পালন করছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকেরা বৈষম্যের শিকার ও বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত। তাই অত্যন্ত যৌক্তিক তিন দাবিতে সকল শিক্ষক সমর্থন দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কর্মবিরতিতে থাকলেও শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি। প্রকৃতঅর্থে শ্রেণি পাঠদান থেকে বিরত রয়েছি। আমরা আশা করব, আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে সরকার।’’
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ১০ম গ্রেডে বেতন দাবি করে আসছিলেন তারা। তবে এখন তাদের আপসহীন অবস্থান অন্তত ১১তম গ্রেডে বেতন দিতে শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেয়ার জটিলতা দূর করা এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও রয়েছে তাদের দাবির তালিকায়।
দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে রয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জেছের আলী জানান, সহকারী শিক্ষকরা তাদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে মে মাসের শুরু থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। এখন তাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। তবে জেলার সব বিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। কতগুলো বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে তাও তার জানা নেই।
ঢাকা/শিয়াম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ শ ক ষকর সহক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতায় আরেক মামলা দায়ের
গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ জন নেতাকর্মি ও সমর্থকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং পাঁচ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় মোট আসামি ৫ হাজার ৪৪৭ জন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মতিয়ার মোল্লা বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলাটি দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী (লেকু), জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতীশ রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি।
আরো পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলা: গ্রেপ্তার ৫ জন আদালতে
শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অবরোধ
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশ স্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। সরকারি কাজে বাধাদান ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় এসব মামলা করা হয়। ১৩টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ হাজার ৬৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২৬ জুলাই হামলায় নিহত রমজান মুন্সীর ভাই জামাল মুন্সী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। গত ১৯ জুলাই রাতে ৪ যুবকের নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। ৪ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি ও জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় ২টি, কোটালীপাড়া থানায় ১টি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাড়ায় পাঁচ জনে। আহত হয় সাংবাদিক ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক মানুষ।
ঢাকা/বাদল/বকুল