ময়মনসিংহ হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ থমকে গেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উধাও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রু (এলঅ্যান্ডটি) ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভয়েন্টস সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড। এখনও বাকি প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ।

ময়মনসিংহ নগরের কিসমত এলাকায় ৬ দশমিক ১ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন হাই-টেক পার্কটি দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। ২০১৭ সালে দরপত্র আহ্বান করা হলেও ২০২২ সালের জুন মাসে কাজ শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১ বছর বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনেও কাজ শেষ করতে না পেরে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে ভারতীয় কোম্পানিটি।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। যে স্থানে একসময় প্রায় আড়াইশ শ্রমিকের কর্মব্যস্ততা ছিল, সেখানে এখন বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীসহ ভারী যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। রোদে-বৃষ্টিতে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এসব মূল্যবান নির্মাণসামগ্রী প্রকল্পের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলছে। তাছাড়া পুরো প্রকল্পে কাজ করছেন মাত্র ৩০-৪০ জন শ্রমিক। অথচ দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করার জন্য প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ শ্রমিক প্রয়োজন।

কাজ থমকে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে কথা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি এবং প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে চলে যাওয়ায় পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ছয়-সাত মাস কাজ বন্ধ থাকার পর এখন আবার অল্প কিছু শ্রমিক কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছর সময় পেলে কাজ সম্পন্ন করে হস্তান্তর করতে পারব।’

এই অচলাবস্থা কেবল প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাই-টেক পার্কের কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত পার্কটি বাস্তবায়িত হোক। এটি চালু হলে আমাদের এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’

কথা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী স্বরুপ কুমার পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইটি বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে আইটি পার্কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারতাম। এ ছাড়া পার্কটি চালু হলে এখানে বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতো।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো.

সাহিদুজ্জামান উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, প্রকল্পটি চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে হলেও কাজটি শেষ করা দরকার। আইটি খাতে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই প্রকল্প দ্রুত শেষ করা অপরিহার্য।

কাবে নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে তা জানতে যোগাযোগ করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের যুগ্ম সচিব ও ১২ আইটির প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল মুমিন খানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারতে চলে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। ১ বছর সময় বাড়লে কাজটি শেষ করতে পারবেন বলে আশা তাঁর। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারাও কাজে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মাত্র একজন উপসহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল) দিয়ে ১৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প দেখভাল করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে, নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, দেশের ১২টি জেলায় ১২টি আইটি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যান্য জেলার কাজ ধীরগতিতে এগোলেও সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কাজ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লাখ বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এর মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসবে বাংলাদেশে। সাততলা এই ভবনে প্লাগ অ্যান্ড পে, ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবিশন, স্টার্টআপ ফ্লোরসহ বেশ কয়েকটি ফ্লোর থাকবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটির বাংলাদেশি প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই প্রকল্পে নতুন এসেছি। আমার আগে যিনি ছিলেন তিনি ভারতে চলে গেছেন। এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কথাবার্তা চলছে। অনেক দিন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। পুনরায় ধাপে ধাপে কাজ শুরু হয়েছে। পুরোদমে ১ বছর কাজ হলে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা রাখি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ প রকল প র ক জ বন ধ প রক শ শ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির