প্রবেশপত্রে ভুল তথ্যের প্রতিবাদে সাভারের আশুলিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল বুধবার সকালে তারা বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে মিছিল ও মানববন্ধন পালন করেন। এ সময় তারা কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের গাফিলতিতে তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন। 

বিক্ষোভকারীরা জানায়, যেসব বিষয়ে ওই কলেজে তাদের ক্লাস নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে পড়ানোর অনুমোদন কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই। এ কারণে তাদের চলতি এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে পরিসংখ্যান, সমাজকর্ম ও ভূগোল বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এসব বিষয় তাদের পড়ানো হয়নি। তারা এসব পরীক্ষা হলে গিয়ে কী লিখবেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের গাফিলতিকে এজন্য দায়ী করে তারা বলেন, এই ভুলে ২৮৬ জন শিক্ষার্থীর জীবন এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে। যারা এসব ঘটনায় জড়িত, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ড আমাকে আশ্বস্ত করেছে, যে পরীক্ষার্থী যে বিষয়ে কলেজে পড়াশোনা করেছেন, সেই বিষয়েই পরীক্ষা দিতে পারবেন। এতে কোনো প্রকার সমস্যা হবে না। বোর্ড ইতোমধ্যেই প্রবেশপত্রে সংশোধন করেছে।’ এসব তথ্য জানিয়ে তিনি আন্দোলন বন্ধ করে ঘরে ফিরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ লিয়াকত আলী জানান, প্রবেশপত্রে যে ভুলের কারণে এ সমস্যাটি হয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে চিঠি শিক্ষাবোর্ডে পাঠিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ে পড়েছেন, সেই বিষয়েই পরীক্ষা দিতে পারবেন। সুতরাং বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে

অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।

১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’

এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।

পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।

পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।

আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)

সম্পর্কিত নিবন্ধ