কুড়িগ্রাম সীমান্তে ফের ভারতীয় ড্রোন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
Published: 31st, May 2025 GMT
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তের আকাশে শুন্যরেখা থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এক কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে অবৈধভাবে পাঁচটি ড্রোন উড়িয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
শুক্রবার (৩০ মে) রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী ও বারবান্দা সীমান্তের গ্রামের ওপরে ভারতীয় কাকড়িপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প থেকে এ ড্রোনগুলো উড়ানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফিরোজ মিয়া।
ফিরোজ মিয়া জানান, গত ২৭ মে বড়াইবাড়ী সীমান্তের ১০৬৭ মেইন পিলার দিয়ে আসামের ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বিএসএফ কর্তৃক পুশইন করার পর থেকে ভারত বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে নজদারি করছে। গত ২৭ মে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকেও পাঁচটি ড্রোন উড়িয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছিল বিএসএফ।
এরপর শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশের বড়াইবাড়ী ও বারবান্দা গ্রামের আকাশে ভারতের ৪-৫টি ড্রোন অবৈধভাবে উড়ছিল। এসময় বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের ওপরও ড্রোনগুলো উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে বিএসএফ।
তিনি বলেন, “ভারতের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিকার চাচ্ছি। কেন বাংলাদেশের সাথে ভারত এরকম বৈরী আচরণ করছে!”
বড়াইবাড়ী সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক মিয়া জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় আমাদের গ্রামসহ বিজিবি ক্যাম্পের ওপর দিয়ে ভারত অন্যায়ভাবে ড্রোন উড়িয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের এসব ড্রোন উড়ানো বন্ধে সরকার যেন পদক্ষেপ নেয়। তা না হলে সীমান্তের বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বিএসএফ।
এ বিষয়ে জানতে বড়াইবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আঞ্জু মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামালপুর ৩৫ বিজিবি এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ রাতে ড্রোন উড়িয়ে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিজিবিও ড্রোন উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে পুশইন উত্তেজনার মধ্যে রৌমারী সীমান্তের বড়াইবাড়ী সীমান্ত এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করেছিল বিএসএফ। একই দিন রাত ১০টা ৪৩ মিনিটে সাহেবের আলগা বিওপি এলাকায় তিনটি ড্রোন উড়িয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
ঢাকা/বাদশাহ্/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বডি ক্যামেরা পাচ্ছে বিএসএফ
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের পাঁচ হাজারের বেশি বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো বিএসএফ সদস্যদের শরীরে লাগানো থাকবে। এর মাধ্যমে সীমান্তে চোরাচালান, অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ, পুশ ব্যাকের দৃশ্যে রেকর্ড করা যাবে। কর্তব্যরত কর্মীদের ওপর অপরাধীদের আক্রমণের ঘটনাও রেকর্ড করা যাবে।
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সরকারি সূত্র ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু নির্বাচিত সীমান্ত চৌকিতে বায়োমেট্রিক যন্ত্রও বসানো হচ্ছে। এই ডিভাইসগুলোতে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যান নেওয়া যাবে। এই তথ্যগুলো পরে ‘ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে’ প্রদান করা হবে।
গত বছর ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ফ্রন্টে বিএসএফের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দুটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ‘ব্যাপক পর্যালোচনা’ করার পর সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফ সদর দপ্তরের এই দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
আরো পড়ুন:
বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘোষণা অভিনেতার স্ত্রীর
ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে ৬ জনের প্রাণহানি
সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বিএসএফ জওয়ানদের কাছে দুটি ব্যাচে প্রায় পাঁচ হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরা পাঠানো হচ্ছে। এই ক্যামেরাগুলো নাইট-ভিশন সক্ষম এবং প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টার ফুটেজ ধারণ করতে পারে।
তারা বলেন, বিএসএফ বাহিনী যখন অবৈধ বাংলাদেশিদের বিতাড়িত করে অথবা দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়, তখন তথ্য ও প্রমাণ রেকর্ড করতে এই ক্যামেরাগুলো সহায়ক হবে। এর ফলে মানব পাচার এবং অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাদক, গবাদি পশু এবং জাল ভারতীয় মুদ্রা (এফআইসিএন) পাচারের মতো সীমান্তবর্তী অপরাধ বন্ধ করা যাবে।
সূত্র জানিয়েছে, উভয় দেশের অপরাধীরা বিএসএফ সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করলেও রেকর্ডিংগুলো প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। বিএসএফের দাবি বাংলাদেশ এবং তাদের বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দ্বিপাক্ষিক ফোরামে বারবার দাবি করে আসছে যে ভারতীয় পক্ষ তাদের নাগরিকদের অস্বাভাবিক শক্তি প্রয়োগ করে এবং অন্যায্যভাবে হত্যা করছে, অন্যদিকে বিএসএফ সর্বদা বলে আসছে যে তারা সৈন্যদের জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ উপায় হিসাবে অ-প্রাণঘাতী বা প্রাণঘাতী গুলি চালায়।
এই ঘটনাগুলো এখন এই দেহ ক্যামেরাগুলো দ্বারা রেকর্ড করা হবে এবং তদন্তের প্রয়োজনে প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে, বলে আশাবাদী বিএসএফ।
অন্যদিকে দ্বিতীয় অনুমোদিত প্রস্তাব হিসেবে সীমান্ত পারাপারের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নির্বাচিত এবং ‘দুর্বল’ বিএসএফ বিওপিতে বায়োমেট্রিক্স ডেটা রেকর্ডিং মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে, যা ভারতীয় ফ্রন্টে বিএসএফ কর্তৃক ধরা পড়া অবৈধ বাংলাদেশিদের আঙুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান ধারণ করবে।
বিএসএফ জানিয়েছে, অনুপ্রবেশকারী এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশের চেষ্টার বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ-ভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করতে এই বায়োমেট্রিক তথ্য এফআরও-এর সঙ্গে ভাগ করা হবে।
পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব রাজ্যকে তাদের অধিক্ষেত্রে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিদের পরীক্ষা করে তাদের বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিএসএফ এই সীমান্ত থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী ১ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশিকে আটক করেছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় বিভিন্ন রাজ্য পুলিশ বাহিনী ৩ হাজার ৫৩৬ জনেরও বেশি পুরুষ ও নারীকে ধরেছে অথবা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।
গত বছরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান ছিল ২ হাজার ৪২৫ জন (আগত) এবং ১ হাজার ৪৯ জন (বহির্গামী)।
তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের দুষ্কৃতীদের দ্বারা বিএসএফ সদস্যদের ওপর ৭৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এই সীমান্তে ৩৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ