সম্প্রতি সিনেমাপাড়ায় একটি সংবাদ নিয়ে বেশ কথা উঠেছে। কথাটি উঠেছে বুবলী ও সজলের শুটিং নিয়ে। তারা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত একটি বনে শুটিং করছিলেন। নীরবে শুটিং করে চলে এলে বোধ করি তেমন কথা হতো না। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে অন্য জায়গায়। শুটিং চলাকালে বন্যহাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণেই ক্ষেপেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শুটিংয়ের অনুমতি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। ‘গারো পাহাড়ে নতুন সিনেমার শুটিং, বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বন্যহাতির দল’ শিরোনামের খবর শেয়ার দিয়ে জয়া ফেসবুকে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এই আরেক উপদ্রব বনের ভেতর। বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মন চাইলেই লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন শুরু করা যায়? মাইকের শব্দ, গানবাজনা– এগুলো কি অ্যালাউ করা ঠিক এ রকম সেন্সিটিভ জায়গায়?’
একবার অবশ্য ‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে বন বিভাগ মামলার আবেদন করে বসে। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। শালিক পাখিকে খাঁচায় বন্দি রাখা, মেরে খাওয়া কিংবা শাপলা পাতা মাছ ধরার দৃশ্য আইন লঙ্ঘনের নজির বলে অভিযোগ করা হয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ৩৮-১, ৩৮-২, ৪০ ও ৪৬ ধারায় মামলা করা হয়। এটা ২০২২ সালের কথা।
একই বছর একটি নাটকে খাঁচাবন্দি টিয়া পাখি দেখানো হয়। নাটকটির নাম ‘শেষ গল্পটা তুমিই’। খাঁচাবন্দি টিয়া পাখির দৃশ্য দেখানো হয় ৪৫ সেকেন্ড। পরিচালকের বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হয়। বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট নাটকটির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী আইন ভাঙার অভিযোগ আনে।
২০২১ সালে এক মোবাইল ফোন কোম্পানির বিরুদ্ধেও বিজ্ঞাপনচিত্রে খাঁচাবন্দি টিয়া পাখি দেখানোর কারণে মামলা করে বন বিভাগ। কোম্পানিটি বিজ্ঞাপনচিত্র পরে সরিয়ে নেয়। সম্প্রতি ভারতের কন্নড় অভিনেতা ঋষভ শেঠির বিরুদ্ধেও বন পোড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ঋষভ শেঠি ২০২২ সালে কান্তারা সিনেমা দ্বারা অনেক আলোচিত হন। তিনি এর মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি সিনেমা পরিচালনাও করেন। তিনি কান্তারা চ্যাপ্টার ওয়ান বানাচ্ছেন। ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় বলা হয়েছে, এই সিনেমায় কর্ণাটকের গোভিগুদ্দা এলাকায় বনের ভেতর বেশির ভাগ শুটিং করা হয়। এতে বনের অংশ পোড়ানো হয়। এ নিয়ে স্থানীয়রা পরিবেশের ক্ষতি বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে পুলিশ স্টেশনে অভিযোগও করেন। সিনেমাটি করতে শুধু চারণভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুটিংয়ে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। এতে বন্যহাতিরা আতঙ্কিত হয়ে গ্রামে আক্রমণ শুরু করে। শুটিং টিমের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে শুটিং টিমের একজন আহতও হন। গ্রামবাসী শুটিং সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
বনে শুটিং চলাকালে বন্যপ্রাণীরা নানাভাবে উত্ত্যক্ত হয়। এর ফলে বন্যপ্রাণীদের আচরণ ও বাসস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ রকম আচরণে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। শুটিংয়ের কারণে বন্যপ্রাণীর আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। বিশেষ করে শুটিং এলাকার পশুপাখির এমন পরিবর্তন দেখা যায়। বন্যপ্রাণীরা তাদের বিচরণক্ষেত্র থেকে অন্যত্র চলে যায়। বিচরণ এলাকার এমন পরিবর্তনের কারণে পশুপাখির স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। এর ফলে বন্যপ্রাণীর প্রাচুর্য, স্বভাব ও বাসস্থান মারাত্মক প্রভাবিত হয়। শুটিংয়ের কারণে আগুন জ্বালানো বা গাছ কাটার মতো ঘটনা ঘটলে বনের বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হয়।
পশুপ্রেমী অভিনেত্রী জয়া আহসান এসব কারণেই হয়তো চটেছেন। আশা করি, বন বিভাগের হুঁশ হবে।
ড.
ও গবেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
মনের ক্ষত সারাতে এসব কাজ করতে পারেন
জীবনে আপনি যত খারাপ অনুভূতির সম্মুখীনই হোন না কেন, সব সময়ের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে ভালোবাসা। অন্যের কথায় নিজেকে ছোট ভাবতে নেই। প্রত্যেক মানুষই অনন্য। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের মনের ক্ষত আপনি নিজেই সারিয়ে তুলতে পারবেন। মনের ক্ষত সারানোর কিছু উপায় জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।
কারণ বিশ্লেষণঠিক কোন কারণে মনটা বেশি আহত হয়েছে, তা বুঝতে চেষ্টা করুন। আবেগের মুহূর্তে গোটা পৃথিবীকেই অন্য রকম দেখায়। ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন কেন কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই মনের ক্ষতের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কেবল অন্যের তির্যক কথা। কারও কোনো কথা আপনার জীবনে বড়সড় প্রভাব ফেলছে কি না, তা ভেবে দেখুন। অবশ্যই মনে রাখবেন, চমৎকার সুন্দর এই পৃথিবী অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে যে কারও সঙ্গে। অনেক মানুষ তাঁর ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ অন্যের ওপর প্রকাশ করে ফেলেন। যাঁর কারণে আপনি কষ্ট পেলেন, তিনি যদি আপনার আপনজন হয়ে থাকেন, তাঁর ওই আচরণের কারণ উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন। আর খুব কাছের কেউ না হলে অন্যের আচরণকে অতটা গুরুত্ব দিতে নেই।
ক্ষমা করুন, নিজেকেওকাছের মানুষদের ক্ষমা করে দিন। তাতে আপনার নিজের মনের ক্ষত সারানো সহজ হবে। আবেগের বশে আপনি কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকলে সেটিও আপনার মন খারাপের কারণ হতে পারে। নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনজনের কাছে ছোট্ট একটি শব্দে দুঃখ প্রকাশ করলে তাতেও মনের আঘাত সামলানো সহজ হয়।
ভাবনাগুলো ভাগ করে নিনকী কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, তা নিয়ে আলাপ করতে পারেন খুব কাছের কোনো মানুষের সঙ্গে। যাঁর সঙ্গে সমস্যা হয়েছে, তাঁর সঙ্গেই আলোচনা করতে পারেন। সমাধানে আসতে পারেন। কিংবা ধরা যাক, অফিসে কোনো সমস্যা হয়েছে, যা নিয়ে আপনি অশান্তিতে আছেন। সে বিষয়ে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাতে বিষয়টির সমাধান না হলেও আপনার মনের কষ্ট কমবে।
এমন কিছু কথা থাকতে পারে, যা আপনি কাউকেই বলতে পারছেন না, সেসব নিজের মতো করে লিখে রাখুন