বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 2nd, June 2025 GMT
নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখতে জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং একই সঙ্গে তা সাশ্রয়ী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিগতভাবে আমরা বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ, যা অনেক বেশি। এটি ক্রমে কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি করতে পারলে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরেই দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে সংকট চলমান। প্রায় সব সময়ই বাজেট বরাদ্দে উপেক্ষিত থেকেছে জ্বালানি খাত। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকেছে গত সরকার। তবে এবার দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাতের বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩ কোটি টাকায়। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাতে এবার ২ হাজার ১৭৮ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন বরাদ্দ ২ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজস্ব উদ্যোগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। ২০২৫-২৬ থেকে ২০২৭-২৮ অর্থবছরের মধ্যে বাপেক্সের মাধ্যমে ২৭০ কিলোমিটার ভূতাত্ত্বিক জরিপ, ৭০০ কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, ৭০০ কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ পরিচালনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মধ্য মেয়াদে নিজস্ব রিগ দিয়ে ৬৯টি কূপ খনন ও ৩১টি কূপ সংস্কার করবে বাপেক্স।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যয় সাশ্রয়ী ও টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ইআরএল-২ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হলেও জ্বালানির তুলনায় বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ অনেক বেশি। চলতি বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমে হয়েছে ২১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। এবার এ খাতে ২০ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মানে, সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বরাদ্দ কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। এবার উন্নয়ন বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মেট্রোপলিটন এলাকায় বিতরণ লাইন এবং সাবস্টেশনগুলো ভূগর্ভস্থ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এটি বিতরণব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল ও কার্যকর করবে। নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে সাশ্রয়ী দামে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ যুগোপযোগী করে নতুন একটি নীতিমালা তৈরির কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি (এলএনজি) করে দুই পর্যায়ে শুল্ক দিতে হয় পেট্রোবাংলাকে। এবার আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এলএনজি আমদানি খরচ কমবে। বর্তমানে যে দামেই আমদানি করুক, নির্ধারিত মূল্যের (ট্যারিফ ভ্যালু) ওপর শুল্ক দেয় বিপিসি। জ্বালানি তেলের কেনা দামের ওপর (ইনভয়েস ভ্যালু) আমদানি শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এতে বিপিসির খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে জ্বালানি তেল আমদানিতে শুল্কহার কমানো হয়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ ও পরিশোধিত বিভিন্ন জ্বালানি তেলের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে শুল্ক আদায় একই রকম থাকতে পারে। তাতে বিপিসির খরচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি খরচ একই রকম থাকলেও বেসরকারি খাতে আমদানি খরচ কমবে। বেসরকারি খাত আগে থেকেই কেনা দামে শুল্ক দেয়। তাই শুল্কহার কমায় তাদের আমদানি খরচ কমবে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি শুল্ক-কর নিয়ে তার দায় ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিত। বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো ও এলএনজির শুল্ক প্রত্যাহার ইতিবাচক। জ্বালানি তেল থেকেও রাজস্ব আদায় যাতে না বাড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তা প্রকল্প বাস্তবায়নে অপ্রতুল। জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাজেটে দিকনির্দেশনা নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট ন শ চ ত কর পর শ ধ ত উপদ ষ ট আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যবিপ্রবিতে বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পাঠদান, গবেষণা, অনলাইন ক্লাস ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক আবহাওয়া বা সামান্য বাতাস হলেই ক্যাম্পাস এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বন্ধের দিনে এ ভোগান্তি আরো চরম আকার ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
স্নাতকের শেষ দিনে জবি শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী আয়োজন
জকসুতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়া করেছে প্রশাসন: ছাত্রদল
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের দিনে একাডেমিক ভবন ও জেনারেল ল্যাবগুলোতে জেনারেটর সেবা চালু না থাকায় গবেষণা কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো ক্যাম্পাস অন্ধকারে ঢেকে যায়। এতে তাদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।
এ বিষয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আসিফ ইসলাম বলেন, “গত ২-৩ বছরের তুলনায় এ বছর যবিপ্রবিতে লোডশেডিং উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে আগাম নোটিশ দিলেও বাস্তবে অনিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিশেষ করে রাত ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ১–২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনা ও বিশ্রাম উভয়ই ব্যাহত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলাকালে সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিস্মিত হন। আশ্চর্যের বিষয়, অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যুৎ চলে গেলেও, শেষ মুহূর্তে হঠাৎ ফিরে আসে—যা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। অনুষ্ঠানটি জেনারেটরের সাহায্যে সম্পন্ন হলেও, আবাসিক হলগুলোতে তখনো বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।”
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. রাহিয়া ভূঁইয়া ইরা বলেন, “ক্লাস চলাকালে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোযোগ ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তীব্র গরমে শ্রেণিকক্ষ দ্রুত অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। ফলে পড়াশোনায় মনোসংযোগ ব্যাহত হয়।”
তিনি বলেন, “অনেকে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এমনকি কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই বিঘ্নিত করছে না, বরং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ মূলত পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের হাতে। আমাদের নিজস্ব সাবস্টেশন থাকলেও বিদ্যুতের উৎস সেখান থেকেই আসে। ফলে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।”
তিনি বলেন, “যেহেতু বিদ্যুতের লাইনগুলো গ্রামের মধ্য দিয়ে আসে, তাই সামান্য বাতাস বা গাছপালা পড়ে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংযোগ ঠিক না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয় না।”
“সব ভবনে জেনারেটর নেই। যেসব ভবনে জেনারেটর আছে, সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে আমরা ব্যাকআপ দিয়ে থাকি,” যোগ করেন প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী