মাত্র ১৫ বছর বয়সে শাবনূরের বিয়ে হয় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহরের রুবেল মিয়ার সঙ্গে। ফেরি করে শিশুদের খেলনাসহ হরেক পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন রুবেল। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ১০ বছর আগে মারা যান তিনি। রেখে যান এক বছর বয়সী ছেলে। ছেলের পড়ালেখা ও খেয়ে–পরে বাঁচতে ভ্যানগাড়ি নিয়ে পথে নামেন শাবনূর।

ভ্যানে কোনো যাত্রী বহন করেন না শাবনূর (২৭)। সারা দিন তিনি জামালপুর শহর ঘুরে কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, পুরোনো লোহা, কাচের বোতল ও বিভিন্ন ভাঙারি কেনেন। পরে সন্ধ্যায় এসব পণ্য ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। দিন শেষে জোটে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এই দিয়ে চলছে মা–ছেলের সংসার। ছেলেটির বয়স এখন ১০ পেরিয়েছে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে সে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শাবনূরের সঙ্গে কথা হয় জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায়। জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেই রুবেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। স্বামী দরিদ্র মানুষ ছিলেন। কোনো জমিজমা ছিল না। তবে সংসারে সুখ ছিল। কারণ, প্রতিদিন ফেরি করে ভালো আয় করতেন স্বামী। এই দিয়ে ভালো চলছিল। স্বামীর মৃত্যুতে শিশুসন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন তিনি। সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি জামালপুর শহরে চলে আসেন। তখন অনেকেই বিয়ে করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিয়ে করলে সন্তানের কী হবে, সেটা ভেবে আর বিয়ে করেননি তিনি।

কিছুদিন আগেও জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায় সন্তানকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাবনূর। কিন্তু ভাড়া দিতে না পারায় সম্প্রতি একই এলাকায় বাবার বাড়ির একটি ছাপরায় উঠেছেন। তাঁর বাবাও একজন হতদরিদ্র।
প্লাস্টিকের বোতল ও কাগজ বিক্রি করে যে টাকা পান, তা দিয়ে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনেন। শাবনূর বলেন, জিনিসের দাম বাড়ায় আর কুলাতে পারছেন না। ভাঙারি বিক্রি করে তেমন আয় হয় না। মাঝেমধ্যে ধারদেনাও করতে হয়।

নিজের নয়, একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা হয় শাবনূরের। নিজের কোনো জমি নেই। মাথা গোঁজার মতো কোনো স্থায়ী আশ্রয়ও নেই। তবু নতুন আশা বুকে নিয়ে প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বের হন। সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে সন্তানকে সময় দেন।

শাবনূর আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘ছেলের পড়ার খরচ জোগাড় করতেই অবস্থা খারাপ। ঠিকমতো ভাতই তো জুটে না। মাছ–গোশত কিনার টেহা (টাকা) পামু কুথায়? ভ্যানগাড়ি ঠেলে ভাঙারি কিনতে কষ্ট হয়। ছেলের মুখে এক মুঠ ভাত তুলে দিতেই এত কষ্ট করি। এহন আর ভ্যান ঠেলতে পারি না। অন্য কোনো কাম করতে পারলে ভালা হইতো।’

শাবনূর তাঁর সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলে জানান জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি বলেন, ‘ওই নারীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে আমি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। শত কষ্ট হলেও তিনি সন্তানকে মানুষ করতে চান।’ তিনি সবাইকে শাবনূরের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ বন র র

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ