ডায়াবেটিসের বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো দীর্ঘ সময় ধরে আপনার শরীরে নীরবে লুকিয়ে থাকতে পারে। এমনকি রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর না–ও টের পেতে পারেন আপনি। তাই থাকতে হবে সতর্ক।

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ২৫ বা ২৬ মিলিমোলে ওঠার পরও কিছু টের পাননি বা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন দেখে অনেকেই অবাক হোন। হঠাৎ দেখা রিপোর্টটিকে মনে হয় অবিশ্বাস্য। সুস্পষ্ট লক্ষণের অভাবে বিলম্বিত হয় রোগনির্ণয়, তৈরি হয় জটিলতা, কখনো কখনো রক্তের সুগার অনেক বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি করে প্রাণঘাতী সংকট।

কেন এমন হয়

১.

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা যদি ধীরে ধীরে বাড়ে, তাহলে এই বাড়তি সুগারের সঙ্গে আস্তে আস্তে খাপ খাইয়ে নেয় শরীর। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়ে না, অনেক সময় দীর্ঘকাল ধরে প্রি–ডায়াবেটিস বা বর্ডার লাইনেই রয়ে যায় এবং মাসের পর মাস ধরে কোনো লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। শরীরও এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে থাকে। তাই লক্ষণগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়।

২. কিছু মানুষ রক্তে উচ্চমাত্রার শর্করার প্রভাবের প্রতি কম সংবেদনশীল। আবার কেউ কেউ মৃদু বা সাধারণ লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, পিপাসা ইত্যাদিকে উপেক্ষা করেন। ভাবেন, বয়স বা কাজের চাপের কারণে এটি হচ্ছে বা গরমে স্বাভাবিকভাবেই বেশি পিপাসা পাচ্ছে।

৩. দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ শর্করা ক্রমেই স্নায়ুর ক্ষতি করতে থাকে। ফলে একধরনের অনুভূতিহীনতা দেখা দেয়। বিশেষ করে যেসব স্নায়ু ক্ষুধা, তৃষ্ণা বা ব্যথা শনাক্ত করতে সাহায্য করে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুভূতি কমে যায় বলে উপসর্গ বুঝতে পারেন না। এটি সতর্কতা লক্ষণগুলোর প্রতি ব্যক্তির অনুভূতিকে ‘অসাড়’ করে তুলতে পারে, এমনকি একজন ডায়াবেটিক রোগীর কোনো লক্ষণ ছাড়াই নীরবে হার্টঅ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।

৪. মস্তিষ্ক গ্লুকোজের ওপর নির্ভর করে। দীর্ঘ সময় ধরে সুগার বেশি থাকলে তার সঙ্গে মস্তিষ্ক সামঞ্জস্য করে, ফলে ক্লান্তির মতো লক্ষণগুলোকে আর অস্বাভাবিক মনে হয় না।

কিছু বিষয় অবহেলা করবেন না

উচ্চমাত্রার শর্করার প্রাথমিক বা মৃদু লক্ষণগুলো হলো—

তৃষ্ণা বা পিপাসা বৃদ্ধি, বারবার গলা, ঠোঁট শুকিয়ে আসা।

ঘন ঘন প্রস্রাব, রাতে উঠে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা।

শুষ্ক মুখ।

ক্লান্তি বা তন্দ্রাভাব।

ঝাপসা দৃষ্টি।

ক্ষুধা বৃদ্ধি, খিদে পেলে চোখে অন্ধকার দেখা।

মাথাব্যথা।

বারবার সংক্রমণ, বিশেষ করে প্রস্রাবের সংক্রমণ।

 গুরুতর লক্ষণ, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে—

বমি বমি ভাব বা বমি।

পেটে ব্যথা।

গভীর বা দ্রুত শ্বাস নেওয়া।

অ্যাসিটোনের গন্ধযুক্ত শ্বাস।

তন্দ্রা, বিভ্রান্তি, এমনকি অচেতন হয়ে পড়া।

২৫-২৬ মিলিমোলের মতো সুগারের মাত্রায় এ লক্ষণগুলো জীবনের জন্য হুমকিও হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা না করা হয়। এ সংকটগুলোকে বলে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস এবং হাইপারঅসমোলার কোমা। এ সময় রক্তে পিএইচ ও ঘনত্ব বিপজ্জনক মাত্রায় পরিবর্তিত হয়, ইলেকট্রোলাইটগুলো ওলটপালট হয়ে যায় এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আরও পড়ুনডায়াবেটিস প্রতিহত করার পাশাপাশি ডার্ক চকলেট যেভাবে ওজন কমাবে২৮ মার্চ ২০২৫অন্য লক্ষণ

অনেক সময় ওপরে বর্ণিত ডায়াবেটিসের লক্ষণের বাইরে অন্যান্য রোগের প্রবণতা দিয়েও ডায়াবেটিস প্রকাশ পেতে পারে। যেমন কারও বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ হচ্ছে বা পায়ে ঘা হয়েছে কিন্তু সারছে না, জিবে ঘা, দাঁতের সমস্যা, চোখের সমস্যা বা ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, তখন পরীক্ষা করে দেখা যায়, রক্তে সুগার অনেক বেশি। ডায়াবেটিস হলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় বলে নানা ধরনের জীবাণু আক্রমণ করে। ফলে ঘন ঘন অসুস্থতার শিকার হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কেন এমন হচ্ছে অনুসন্ধান করতে গিয়ে রক্তে উচ্চ শর্করা ধরা পড়ে।

নারীদের ক্ষেত্রে যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ, সাদা স্রাব ও চুলকানি, গর্ভপাত বা গর্ভস্থ শিশুর আকস্মিক মৃত্যু ইত্যাদিও হতে পারে রক্তে শর্করা বাড়ার লক্ষণ।

আবার ডায়াবেটিস যথাসময়ে শনাক্ত না হওয়ার কারণে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, ফলে হঠাৎ হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক বা পায়ের আলসারে আক্রান্ত হন রোগী। তখন জানা যায় যে তাঁর ডায়াবেটিস ছিল এবং তা বেশ অনিয়ন্ত্রিতই ছিল। হাসপাতালে নানা রোগবালাইয়ের কারণে আসা রোগীদের একটি বড় সংখ্যার এভাবেই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।

হঠাৎ রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা ধরা পড়লে অনেকেই ঘাবড়ে যান। কেউ কেউ ভাবেন, নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে এই উচ্চ শর্করা নতুনভাবে দেখা দিয়েছে, না দীর্ঘদিন ধরে আছে, বোঝার উপায় হলো রক্তের এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা। এটি নির্ধারিত মাত্রার বেশি থাকলে বুঝতে হবে ডায়াবেটিস অন্তত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিদ্যমান, যা তিনি বুঝতে পারেননি।

ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তির বছরে অন্তত একবার চেকআপ করানো উচিত

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় আরেক মামলা দায়ের

গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ জন নেতাকর্মি ও সমর্থকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং পাঁচ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় মোট আসামি ৫ হাজার ৪৪৭ জন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মতিয়ার মোল্লা বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলাটি দায়ের করেন। 

গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী (লেকু), জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতীশ রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি।

আরো পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলা: গ্রেপ্তার ৫ জন আদালতে

শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অবরোধ

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশ স্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। সরকারি কাজে বাধাদান ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।

এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় এসব মামলা করা হয়। ১৩টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ হাজার ৬৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ২৬ জুলাই হামলায় নিহত রমজান মুন্সীর ভাই জামাল মুন্সী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। গত ১৯ জুলাই রাতে ৪ যুবকের নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। ৪ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি ও জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় ২টি, কোটালীপাড়া থানায় ১টি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাড়ায় পাঁচ জনে। আহত হয় সাংবাদিক ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক মানুষ। 

ঢাকা/বাদল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ