ডায়াবেটিসের লক্ষণ নেই, কিন্তু সুগার ২৫
Published: 8th, June 2025 GMT
ডায়াবেটিসের বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো দীর্ঘ সময় ধরে আপনার শরীরে নীরবে লুকিয়ে থাকতে পারে। এমনকি রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর না–ও টের পেতে পারেন আপনি। তাই থাকতে হবে সতর্ক।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ২৫ বা ২৬ মিলিমোলে ওঠার পরও কিছু টের পাননি বা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন দেখে অনেকেই অবাক হোন। হঠাৎ দেখা রিপোর্টটিকে মনে হয় অবিশ্বাস্য। সুস্পষ্ট লক্ষণের অভাবে বিলম্বিত হয় রোগনির্ণয়, তৈরি হয় জটিলতা, কখনো কখনো রক্তের সুগার অনেক বেড়ে গিয়ে সৃষ্টি করে প্রাণঘাতী সংকট।
কেন এমন হয়১.
২. কিছু মানুষ রক্তে উচ্চমাত্রার শর্করার প্রভাবের প্রতি কম সংবেদনশীল। আবার কেউ কেউ মৃদু বা সাধারণ লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, পিপাসা ইত্যাদিকে উপেক্ষা করেন। ভাবেন, বয়স বা কাজের চাপের কারণে এটি হচ্ছে বা গরমে স্বাভাবিকভাবেই বেশি পিপাসা পাচ্ছে।
৩. দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ শর্করা ক্রমেই স্নায়ুর ক্ষতি করতে থাকে। ফলে একধরনের অনুভূতিহীনতা দেখা দেয়। বিশেষ করে যেসব স্নায়ু ক্ষুধা, তৃষ্ণা বা ব্যথা শনাক্ত করতে সাহায্য করে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুভূতি কমে যায় বলে উপসর্গ বুঝতে পারেন না। এটি সতর্কতা লক্ষণগুলোর প্রতি ব্যক্তির অনুভূতিকে ‘অসাড়’ করে তুলতে পারে, এমনকি একজন ডায়াবেটিক রোগীর কোনো লক্ষণ ছাড়াই নীরবে হার্টঅ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
৪. মস্তিষ্ক গ্লুকোজের ওপর নির্ভর করে। দীর্ঘ সময় ধরে সুগার বেশি থাকলে তার সঙ্গে মস্তিষ্ক সামঞ্জস্য করে, ফলে ক্লান্তির মতো লক্ষণগুলোকে আর অস্বাভাবিক মনে হয় না।
কিছু বিষয় অবহেলা করবেন নাউচ্চমাত্রার শর্করার প্রাথমিক বা মৃদু লক্ষণগুলো হলো—
তৃষ্ণা বা পিপাসা বৃদ্ধি, বারবার গলা, ঠোঁট শুকিয়ে আসা।
ঘন ঘন প্রস্রাব, রাতে উঠে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা।
শুষ্ক মুখ।
ক্লান্তি বা তন্দ্রাভাব।
ঝাপসা দৃষ্টি।
ক্ষুধা বৃদ্ধি, খিদে পেলে চোখে অন্ধকার দেখা।
মাথাব্যথা।
বারবার সংক্রমণ, বিশেষ করে প্রস্রাবের সংক্রমণ।
গুরুতর লক্ষণ, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে—
বমি বমি ভাব বা বমি।
পেটে ব্যথা।
গভীর বা দ্রুত শ্বাস নেওয়া।
অ্যাসিটোনের গন্ধযুক্ত শ্বাস।
তন্দ্রা, বিভ্রান্তি, এমনকি অচেতন হয়ে পড়া।
২৫-২৬ মিলিমোলের মতো সুগারের মাত্রায় এ লক্ষণগুলো জীবনের জন্য হুমকিও হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যদি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা না করা হয়। এ সংকটগুলোকে বলে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস এবং হাইপারঅসমোলার কোমা। এ সময় রক্তে পিএইচ ও ঘনত্ব বিপজ্জনক মাত্রায় পরিবর্তিত হয়, ইলেকট্রোলাইটগুলো ওলটপালট হয়ে যায় এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুনডায়াবেটিস প্রতিহত করার পাশাপাশি ডার্ক চকলেট যেভাবে ওজন কমাবে২৮ মার্চ ২০২৫অন্য লক্ষণঅনেক সময় ওপরে বর্ণিত ডায়াবেটিসের লক্ষণের বাইরে অন্যান্য রোগের প্রবণতা দিয়েও ডায়াবেটিস প্রকাশ পেতে পারে। যেমন কারও বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ হচ্ছে বা পায়ে ঘা হয়েছে কিন্তু সারছে না, জিবে ঘা, দাঁতের সমস্যা, চোখের সমস্যা বা ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, তখন পরীক্ষা করে দেখা যায়, রক্তে সুগার অনেক বেশি। ডায়াবেটিস হলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় বলে নানা ধরনের জীবাণু আক্রমণ করে। ফলে ঘন ঘন অসুস্থতার শিকার হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কেন এমন হচ্ছে অনুসন্ধান করতে গিয়ে রক্তে উচ্চ শর্করা ধরা পড়ে।
নারীদের ক্ষেত্রে যোনিপথে ছত্রাক সংক্রমণ, সাদা স্রাব ও চুলকানি, গর্ভপাত বা গর্ভস্থ শিশুর আকস্মিক মৃত্যু ইত্যাদিও হতে পারে রক্তে শর্করা বাড়ার লক্ষণ।
আবার ডায়াবেটিস যথাসময়ে শনাক্ত না হওয়ার কারণে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, ফলে হঠাৎ হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক বা পায়ের আলসারে আক্রান্ত হন রোগী। তখন জানা যায় যে তাঁর ডায়াবেটিস ছিল এবং তা বেশ অনিয়ন্ত্রিতই ছিল। হাসপাতালে নানা রোগবালাইয়ের কারণে আসা রোগীদের একটি বড় সংখ্যার এভাবেই ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
হঠাৎ রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা ধরা পড়লে অনেকেই ঘাবড়ে যান। কেউ কেউ ভাবেন, নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে এই উচ্চ শর্করা নতুনভাবে দেখা দিয়েছে, না দীর্ঘদিন ধরে আছে, বোঝার উপায় হলো রক্তের এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা। এটি নির্ধারিত মাত্রার বেশি থাকলে বুঝতে হবে ডায়াবেটিস অন্তত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিদ্যমান, যা তিনি বুঝতে পারেননি।
ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তির বছরে অন্তত একবার চেকআপ করানো উচিতউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ক রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি