যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে ভারতীয় তরুণকে কেন মেঝেতে ফেলে হাতকড়া পরানো হলো
Published: 10th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিওয়ার্ক বিমানবন্দরে এক ভারতীয় তরুণকে মাটিতে ফেলে পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবি দেখার পর নড়েচড়ে বসেছে নিউইয়র্কের ভারতীয় কনস্যুলেট। সেখানকার ভারতীয় কনস্যুলেট জানিয়েছে, এই বিষয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। কিন্তু যোগাযোগের পর কী জানা গেছে, এখনো তা অজানা।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের নিওয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে কুনাল জৈন নামের এক অনাবাসী ভারতীয় ওই ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে দেখা যায়, পুলিশ এক তরুণকে মাটিতে ফেলে পিছমোড়া করে হাতকড়া পরাচ্ছে।
কুনাল বলেন, সম্ভবত ওই তরুণকে নিওয়ার্ক থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল। তরুণটির পরনে ছিল কালো পোশাক। তিনি কাঁদছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করছিল, যেন তিনি অপরাধী।
কুনাল জৈন পরপর একাধিক পোস্ট করেন। ভিডিও ও ছবি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘তরুণটি স্বপ্ন ধাওয়া করে এসেছিলেন। কারও ক্ষতি করেননি। এক অনাবাসী হিসেবে নিজেকে অসহায় লাগছিল। আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এ এক মানবিক ট্র্যাজেডি।’
ভারতীয় দূতাবাস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ট্যাগ করে অন্য এক পোস্টে কুনাল লেখেন, ‘অসহায় এই ছেলেটির মা–বাবা জানতেও পারবেন না, তাঁদের ছেলের কী দশা হয়েছে। আমার সঙ্গে একই ফ্লাইটে তাঁর ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে উড়োজাহাজে তোলা হয়নি। তাঁকে দেখে দিশাহারা মনে হচ্ছিল। নিউ জার্সি কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে কী করেছে, সেই খোঁজখবর করা উচিত।’
ভিডিওতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘পোর্ট অথরিটি পুলিশ’ লেখা জামা ও টুপি পরা অবস্থায় দেখা গেছে। পোর্ট অথরিটি পুলিশ বিভাগ নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সিতে ট্রানজিট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তারা বিমান ও সমুদ্রবন্দর, বাস ও রেল টার্মিনাল, সেতু, টানেল ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা কাজ করে।
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব খুবই কঠোর। বহু দেশের বিরুদ্ধে সরকার ইতিমধ্যে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভারত থেকে অবৈধভাবে সে দেশে যাওয়া কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও থেকে যাওয়া অভিবাসীদের সে দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সেসব নাগরিককে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরেও হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে দেশে প্রতিবাদ হলেও ভারত সরকার কঠোর কোনো মনোভাব গ্রহণ করেনি। সংসদে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনের উল্লেখ করেছিলেন। পরে নারী ও শিশুদের বিমানযাত্রার সময় হাতকড়া না পরিয়ে নিয়ে আসার কথা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছিল।
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নতুন করে ট্রাম্প প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছে, মনে করা হচ্ছে, ওই তরুণের প্রত্যাবর্তন তারই অংশ। কিন্তু সেটা যে মানবিকভাবেও করা যায়, কুনাল তাঁর ভিডিওতে সেটাই বলতে চেয়েছেন। এই বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ভারতীয় দূতাবাস নতুন কোনো আলোকপাত করতে পারেনি। তরুণটির পরিচয়ও জানা যায়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র সরক র হ তকড়
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’