ঢাবির শিক্ষার্থী শাকিলের আত্মহত্যা রাষ্ট্রীয় মদদে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড
Published: 10th, June 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবি করে আজ মঙ্গলবার পৃথক বিবৃতি দিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। বিবৃতিতে সংগঠন দুটি এই মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় মদদে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছে।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিবৃতিতে বলা হয়, এক বছরের পুরোনো একটি ফেসবুক কমেন্টকে কেন্দ্র করে শাকিল আহমেদের নামে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি ফেসবুকে বেশ কয়েকবার ক্ষমা চেয়েও মবের হাত থেকে রক্ষা পাননি। শাকিল মব ভায়োলেন্স এড়ানোর জন্যই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা ও সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ্ বিবৃতিতে বলেন, ‘শাকিল চিত্রকরের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত সবাইকে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শাকিলের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় মদদে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে মব তৈরি করে নানা ট্যাগ দিয়ে ভিন্ন মত ও পথের মানুষকে হত্যাযোগ্য করে তোলা হয়েছে।’
একই দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টও। ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক এবং সাধারণ সম্পাদক আকাশ আলী এক যৌথ বিবৃতিতে শাকিলের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পেছনে থাকা মব সৃষ্টিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুনআত্মহত্যার আগে ফেসবুকে পোস্ট ‘আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে’৫ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে ছাত্রসংগঠনটির নেতারা আরও বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতার ঘাটতি সুস্পষ্টভাবেই লক্ষণীয়। দেশের সর্বত্র যেকোনো ভিন্ন মতের ওপর হামলা হচ্ছে, মাজারে হামলা হচ্ছে, নারী নিপীড়ন হচ্ছে, ভিন্ন জাতিসত্তার ওপর নিপীড়ন হচ্ছে। এসব সংঘবদ্ধ সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা, বিচারহীনতাই এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটার প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ও তারেক রহমানকে জড়িয়ে নির্বাচনসংক্রান্ত অপতথ্য ছড়িয়েছে বেশি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন সরগরম রাজনীতি। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের কথা জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নির্বাচনসংক্রান্ত অপতথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে রিউমর স্ক্যানার। নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ পাঁচ মাসের নির্বাচনসংক্রান্ত ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণ করে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানটি দেখেছে, দল হিসেবে বিএনপি এবং ব্যক্তি হিসেবে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।
লন্ডন সফরের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা জানান। পরে ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের সঙ্গে পরে বিভিন্ন দলও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনায় যুক্ত হয়।
রিউমর স্ক্যানার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রচারিত অপতথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এই পাঁচ মাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক ৩৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে এপ্রিল মাসে এবং এরপর মে মাসে।
এই পাঁচ মাসে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে এমন ঘটনা শনাক্ত হয়েছে ১৯টি, পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা–সংবলিত অপতথ্য ১৮টি, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে একটিতে। এ ছাড়া হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যাক্ট–চেক করা হয়েছে একটি বিষয়ের।
অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে শীর্ষে ছিল ফেসবুক। এ ছাড়া টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডসেও অপতথ্য ছড়ানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ছাড়াও দেশের গণমাধ্যমও নির্বাচনসংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে এমন দুটি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পায় রিউমর স্ক্যানার।
নির্বাচনকেন্দ্রিক অপতথ্যের ধরনে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, মন্তব্যের মাধ্যমে ১৬টি এবং বিকৃত মন্তব্যের মাধ্যমে ১৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা এবং জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সংক্রান্ত ছয়টি করে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
ভুয়া ও বিকৃত মন্তব্যের সবচেয়ে বেশি ৫০ শতাংশের শিকার বিএনপি। দলটির নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে গত পাঁচ মাসে আটটি ভুয়া মন্তব্য ও সাতটি বিকৃত মন্তব্য প্রচার করা হয়। বিএনপির পর জামায়াতে ইসলামী ও অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে অপতথ্য বেশি ছড়ানো হয়।
এ ছাড়া বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ১৯টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টিই ছিল দলটির প্রতি নেতিবাচক। এসব অপতথ্যের মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি সাতটি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব অপতথ্যের বেশির ভাগ তাঁর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়া দলটির নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হয়।
বিএনপির পরে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির আমির শফিকুর রহমানকে নিয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়। জামায়াতের পরে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
গণমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড
পাঁচ মাসে গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা ও লোগো ব্যবহার করে ভুয়া ফটোকার্ডে ১৩টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ২৭টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে কালের কণ্ঠের নাম জড়িয়ে। এরপর যমুনা টিভি, কালবেলা ও জনকণ্ঠকে জড়িয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়।
রিউমর স্ক্যানার বলছে, মূলধারার গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার সুযোগে তাদের নাম জড়িয়ে এসব অপতথ্য ছড়ানো হয়। অনেকে আবার ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন। এতে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
এসব অপতথ্য প্রতিরোধের বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিহুর রহমান রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, গণমাধ্যমগুলো ভেরিফিকেশন লোগো ও ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক ব্যবহার করে এবং নিজস্ব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ভুয়া ফটোকার্ডগুলোর বিষয়ে মানুষকে জানাতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাক্ট–চেকিং প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়, এমন পদ্ধতি খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন তিনি।
অপতথ্য মোকাবিলায় সতর্কতা ও সচেতনতা ছাড়া তেমন কোনো কার্যকর উপায় নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও অসহনশীলতাই নির্বাচনকালীন অপতথ্য প্রচারকারীদের সবচেয়ে বড় পুঁজি হবে। তাই রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কোনো ধরনের উসকানিমূলক তথ্য যাচাই না করে গোলমাল তৈরি না করা উচিত।