ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। ছিলেন একে অপরের আত্মার বন্ধু। তিন বন্ধু মিলে এলাকায় প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করেছিলেন। খেলার জন্য জার্সি কিনতে গিয়েছিলেন নরসিংদী শহরে। মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফেরার পথে বাসচাপায় তিনজন নিহত হন। পরে জানাজা শেষে পাশাপাশি তিনটি কবরে তাদের দাফন করা হয়েছে।

নরসিংদীর শিবপুরে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। শিবপুরের ইটাখোলা-শিবপুর আঞ্চলিক সড়কের বান্দারদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের লাশ হস্তান্তর করা হয়।

নিহত তিনজন হলেন-শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের মির্জাকান্দি এলাকার মনির মোল্লার ছেলে মো.

সাইফুল ইসলাম (২৫), মো. বদু মিয়ার ছেলে মো. আশিক মিয়া (২৩) ও মো. বাবুল মিয়ার ছেলে মো. অপু মিয়া (২০)। সাইফুল মাছের ব্যবসা করতেন, আশিক ট্রাকচালকের সহযোগী ও অপু গাড়িচালক ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এলাকার একটি প্রীতি ফুটবল খেলার জার্সি কিনতে সোমবার রাতে তিন বন্ধু মিলে এক মোটরসাইকেলে করে নরসিংদী শহরে গিয়েছিলেন। জার্সি কিনে বাড়িতে ফেরার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইটাখোলা-শিবপুর আঞ্চলিক সড়কের বান্দারদিয়া পেট্রোল পাম্প এলাকায় অনন্যা পরিবহনের একটি বাস আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গেলে মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তারা সড়কে ছিটকে পড়েন। পরে পেছনে থাকা বাসটি তাদের চাপা দেয়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দ্রুত শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সাইফুল ইসলাম ও আশিক মিয়ার মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আহত অপু মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনিও মারা যায়।পরে তিনজনের লাশ থানায় আনা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর আজ মঙ্গলবার সকালে তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। তবে স্বজনেরা ‘কোনো অভিযোগ নেই’ উল্লেখ করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নেওয়ার আবেদন করলে বেলা আড়াইটার দিকে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। এলাকার কয়েক শ মানুষ লাশ দেখতে জড়ো হয়েছেন। একদিকে এলাকার ঈদগাহ মাঠে চলছে জানাজার প্রস্তুতি। অন্যদিকে স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি তিনটি কবর খোঁড়া হচ্ছে। 

দাফনের আগে নিহত আশিকের বাবা বদুরুদ্দিন বলেন, ‘ছেলে তো আর নাই। লাশ কাটাছেঁড়া হোক চাই না। আর অভিযোগ করেই-বা কী হবে? ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না।’ 

তিনি বলেন, তিনজন ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছে। মৃত্যুও একসঙ্গে হলো। পাশাপাশি তিনটি কবরে দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।

নিহত সাইফুলের বাবা মনির মোল্লা বলেন, গতকাল বিকেল চারটার দিকে নিজের মোটরসাইকেলে দুই বন্ধুকে নিয়ে নরসিংদী শহরে জার্সি কিনতে যান সাইফুল। রাতে বাড়িতে ফেরার পথে একটি বাস অন্য আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে চাপা দিলে তিনজন মারা যান। যেহেতু এটি দুর্ঘটনা, তাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এ জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নেওয়ার আবেদন করেছিলেন।

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসাইন বলেন, নিহত তিন তরুণের বাবা থানায় এসে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেন। দুপুরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নরস দ বন ধ ত ব ন হত দ ফন ময়ন তদন ত ছ ড় ই ত নজন র ল শ একসঙ গ এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল

একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।

আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে ১০ কারণে স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে বেশি ঝগড়া হয়
  • স্মার্ট সিটি হবে চট্টগ্রাম, একসঙ্গে কাজ করবে গ্রামীণফোন-চসিক
  • অনলাইন জীবন আমাদের আসল সম্পর্কগুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে
  • তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা হাসাহাসি করেন
  • প্রেমিকের সঙ্গে বাগদান সারলেন হুমা কুরেশি!
  • একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল