যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কারোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম। আটলান্টিকের পারে রপ্তানি হওয়া গার্মেন্ট পণ্যের ৬০ শতাংশই যায় এ বন্দরনগরী থেকে। মোট রপ্তানির ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কারখানাও চট্টগ্রামে রয়েছে অর্ধশত। ৩৫ শতাংশের নতুন শুল্কারোপে এসব কারখানা মালিক উৎকণ্ঠায় আছেন। 

তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করা চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ কারখানাই এখন ক্রেতা হারাবে। প্রতিযোগী দেশগুলোর শুল্কহার কম থাকাতে ক্রেতারা এখন ঝুঁকবে সেসব দেশে। এলএনজি, গম, সয়াবিনসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে শতভাগ আমদানি করার প্রস্তাব সামনে এনে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করলে যুক্তরাষ্ট্র নমনীয় হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। অন্যথায় চট্টগ্রামের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন রপ্তানিকারকরা। 

ক্লিফটন গ্রুপের কর্ণধার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মোট রপ্তানি যদি ৯ বিলিয়ন হয়, এর ৫ বিলিয়নই করছে চট্টগ্রামের কারখানা। এখানকার ৬০ শতাংশ কারখানাই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত পণ্যেরও ৯৫ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানি করে শুল্ক ঘাটতি কমিয়ে আনে, তাহলে হয়তো ৩৫ শতাংশ শুল্কহার কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। 

গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭৬ কোটি ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রয়েছে প্রায় ৭৫৯ কোটি ডলারের। উৎপাদিত পণ্যের শতভাগ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে ফরচুন অ্যাপারেলস। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের এই প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ান ডাফ গ্রুপের। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি করা ৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাকের পুরোটা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে প্রতিযোগী দেশের শুল্কহারের চেয়ে বাংলাদেশের শুল্কহার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। এ কারণে ক্রেতা হারাবে বাংলাদেশ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম।

বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই রয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে নিকটতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ শতাংশের বেশি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করেছে। আর  বাংলাদেশের জন্য এ হার ৩৫ শতাংশ। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্কহারে ছাড় না পেলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব বলেন, ২০২৪ সালে ১৬৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটির তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ এ সময়ে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র দশমিক ২১ শতাংশ। অথচ ভিয়েতনাম গত বছরে ৩৩ দশমিক ৯৪ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বিদ্যমান শুল্কাহার বহাল থাকলে এবার আরও পিছিয়ে পড়ব আমরা। ক্রেতারা চলে যাবে ভারত, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া কিংবা  ভিয়েতনামে।

শুধু ভিয়েতনাম নয়; তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হিসেবে আছে ভারত, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। তারাও  উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে প্রতিবছর। ২০২৪ সালে ভারত ১৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। কম্বোডিয়া ২০২৪ সালে ৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। পাকিস্তান এ সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশটির রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। ইন্দোনেশিয়া গত বছর ৮ দশমিক ৭৩ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। 

জানতে চাইলে প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে চীনের হিস্যার পরিমাণ ২০২৪ সাল শেষে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ,  এর আগের বছরে যা ছিল ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ হিস্যা থাকলেও গত বছর এটি কমে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ আগের বছরের চেয়ে ২০২৪ সালে ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের বাজার প্রতিযোগী দেশে স্থানান্তর হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। চট্টগ্রামের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ইপিজেডে থাকা অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। শুল্কহার পুনর্বিবেচনা না করলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে। ক্রেতা হারালে একসময় বন্ধ করে দিতে হবে এসব কারখানা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প র স ড ন ট য ক তর ষ ট র র র প রব দ ধ ২০২৪ স ল র ব যবস ৯ দশম ক গত বছর দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী