বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে মঙ্গলবার হইতে সূচিত বারিধারার কারণে ভোগান্তিতে নিপতিত দেশের লক্ষ মানুষ। বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীর দুর্ভোগ চরমে উপনীত। মাত্র এক বৎসরের ব্যবধানে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা পুনরায় প্লাবিত হইবার শঙ্কায় পড়িয়াছে।
ফসলি জমি ও আমনের বীজতলা নিমজ্জিত হওয়া; পুকুর ও খামারের মৎস্য ভাসিয়া যাওয়া; সড়কপথ জলমগ্ন হওয়ায় চলাচলে অসুবিধাসহ বহুমাত্রিক সংকট ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর দুইটি নদীর বেড়িবাঁধের কয়েক স্থান ভাঙিয়া যাইবার কারণে অনেক গ্রাম প্লাবিত এবং গত বৎসরের ন্যায় পুনরায় বৃহদাকার বন্যার আশঙ্কার উদ্ভব হইয়াছে।
গত বৎসর ফেনীর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর সরকারের তরফ হইতে বাঁধ সুরক্ষার অঙ্গীকার করা হইয়াছিল। অথচ ঐ ভয়াবহ বন্যার পরও গতানুগতিক বাঁধ সংস্কার পদ্ধতিমুক্ত হইতে পারেনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই বৎসরও দায়সারা প্রকারে বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ হইয়াছে বলিয়া সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আসিয়াছে। খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ বলিয়াছেন, এই প্রকার সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষুদ্রাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হইলেও গত বৎসরের আগস্টের ন্যায় বৃহদাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নহে। অথচ বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নাই।
কেবল ফেনীতেই নহে; সমগ্র দেশেই বাঁধ লইয়া অভিযোগের অন্ত নাই। অনিয়মের কারণে বৎসরে বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় বটে; উহা টেকসই হয় না। নির্মাণজনিত ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করিয়া বাঁধ নির্মাণের ফলে উহা মানুষকে বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগ হইতে সুরক্ষা দিতে অক্ষম।
সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেনীর বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ২০০৬ সালে সূচিত ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প ২০১০ সালে সমাপ্ত হইবার পর কয়েক বৎসর বন্যামুক্ত ছিল এলাকাবাসী। ২০১৩ সালে আকস্মিক বন্যায় বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙন ধরিবার পর প্রতি বৎসরই বাঁধ ভাঙিতেছে। অভিযোগ রহিয়াছে, দুষ্টচক্র প্রতি বৎসর বাঁধ মেরামতের নামে অর্থ লোপাট করিতেছে। ভাঙনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রভাবশালী মহল স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দিকে অগ্রসর না হইয়া অতি দ্রুততায় কোটি টাকা ব্যয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে, যাহাতে পরের বৎসর পুনরায় বরাদ্দপ্রাপ্তি সহজ হয়। এই ক্ষেত্রে প্রতিবারই নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশপ্রাপ্তির অভিযোগ রহিয়াছে।
আমরা বারংবার বলিয়া আসিয়াছি, বর্ষার পূর্বেই টেকসই বাঁধ নির্মাণ করিতে হইবে। তবে বর্তমান ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যেই দুর্ভোগের উদ্ভব, উহা হইতে তাৎক্ষণিক মানুষের মুক্তিও জরুরি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে গমন বিষয়ে সচেতন করিতে হইবে।
আমরা জানি, উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রকার দুর্যোগ মোকাবিলা করিয়া জীবন ধারণ করিয়া থাকেন। সরকার তাহাদের স্বস্তির বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে অনেক সময় উহা প্রতিপালিত হয় না। আমরা মনে করি, সংগ্রামী এই সকল মানুষের পাশে সরকারকে দাঁড়াইতেই হইবে। তাহাদের জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আবাসন নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনে তথাকার মানুষদের অধিক হারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় লইতে হইবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১
মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩
দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা/রতন/মাসুদ