সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার দুই পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছে।
২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তাঁর বিশেষ দূত মারফত শক্ত ও স্পষ্ট বার্তা ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চান’ পৌঁছানোর পর ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৬ মাস ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ঘটবে। তিনি তাঁর উদ্যোগ ও ঘোষণার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে মানবিক বিপর্যয় থামাতে পারলে নোবেল পুরস্কার দাবি করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিশ্ববাসী যুদ্ধ বন্ধ বা শান্তি নয়, বরং যুদ্ধের বিস্তৃতি এবং বিশ্বকে অশান্ত করারই যত প্রয়াস দেখেছে।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করলে নতুন করে ৩৩ হাজার ৫১০ জন হতাহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, ৩০ জুন পর্যন্ত মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৬ হাজার ৫১৩ এবং আহত ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪২, যার ৯০ শতাংশই বেসামরিক মানুষ। তবে যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়, আইডিএফের নির্বিচারে হামলায় প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি ছিল– দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি। কিন্তু অদ্যাবধি যুদ্ধবিরতির কোনো আভাস দৃশ্যমান নয়। এদিকে প্রায় ৩০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ হতাহত, যার বেশির ভাগ বেসামরিক। দৃশ্যত এ যুদ্ধ বন্ধ করতেও তিনি ব্যর্থ।
দুটি যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস) চলমান অবস্থায়ই ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানে আক্রমণ করে। যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধ থামানোর পরিবর্তে ২১ জুন তেহরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে আক্রমণ করে, যার নাম দেয় ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৪ জুন রাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। তার আগেই ১২ দিনের যুদ্ধে উভয় পক্ষের ৯৬৫ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৯৮৪ জন আহত হন। এ ক্ষেত্রেও ট্রাম্প শান্তি স্থাপনে ব্যর্থ।
দুটি যুদ্ধ দীর্ঘদিন চলমান থাকায় হতাহতের ঘটনা ছাড়াও লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত ও উদ্বাস্তু। উপরন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসন ও ভিসানীতি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতি, বৈদেশিক সাহায্য নীতি, করনীতি ইত্যাদি প্রয়োগের ফলে নিজ দেশ এবং বিশজুড়ে এক অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজমান। বুধবার সমকালে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে মেডিকেল জার্নালে দ্য ল্যানসেট প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদেশে মানবিক সহায়তার জন্য মার্কিন তহবিলের বেশির ভাগ অংশ হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে, যার এক-তৃতীয়াংশই শিশু। গবেষণায় বলা হয়, এর ফলে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য যে ধাক্কা আসবে, তা বিশ্বব্যাপী মহামারি বা বড় সশস্ত্র সংঘাতের কারণ হতে পারে।
এ সত্ত্বেও ট্রাম্প তাঁর স্বভাবসূলভ ভাষায় দাবি করেছেন, ‘আমি বিশ্বে শান্তি এনেছি। আমার কমপক্ষে চার-পাঁচবার নোবেল পাওয়া উচিত ছিল!’ তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সফলতার পর বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ, বিশেষত ইসরায়েল-হামাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি এবং তার সরকারের বিভিন্ন বিতর্কিত নীতি ও আদেশ রহিত করে বিশ্বময় শান্তি ও অস্থিরতা প্রশমন করতে সক্ষম হলে তিনি ২০২৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দাবি করতে পারতেন।
এম এ হালিম: সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং দুর্যোগ, জলবায়ু ও মানবিকবিষয়ক বিশ্লেষক
halim_64@hotmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ য় ত ব গ রহণ র য ক তর ষ ট র ইউক র ন ইসর য় ল চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫১।
এদিকে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার মোট ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৬৮ দশমিক ৪৫। গত বছর এ হার ছিল ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
গত ১০ এপ্রিল চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম ছিল।