ঈদে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪ পশু কোরবানি
Published: 10th, June 2025 GMT
দেশে এবার ঈদুল আজহায় ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। এই হিসাব সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের।
এই ঈদে গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি। ছাগল-ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি এবং অন্যান্য প্রাণী (উট, দুম্বা ইত্যাদি) কোরবানি হয়েছে ৯৬০টি। মঙ্গলবার রাতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে পশু কোরবানির এই হিসাব করা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলার তিনটি গ্রাম (ছোট, মাঝারি ও বড়) থেকে অন্তত ১ শতাংশ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, গত ঈদুল আজহায় ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি পশু কোরবানি দেওয়া হয়। সে হিসাবে এ বছর পশু কোরবানি কমেছে, সংখ্যার হিসাবে যা ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৪।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব বিবেচনায় নিলে গত চার বছরের মধ্যে এই ঈদে পশু কোরবানি সবচেয়ে কম হয়েছে। অধিদপ্তরের গত ৯ বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৫) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে কম কোরবানি হয়েছিল ২০২১ সালে। ওই বছর ৯০ লাখ ৯৩ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হয়। অবশ্য তখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা মহামারির প্রকোপ ছিল। সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর এক কোটি ছয় লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো.
মন্ত্রণালয় বলেছে, এবার কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি। এর কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এ বছর কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই কোরবানির পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া অবিক্রীত এই পশু সামনে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে দরকার হবে।
কোরবানি বেশি রাজশাহীতে, কম সিলেটেপ্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর পশু কোরবানি সবচেয়ে কম হয়েছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি পশু কোরবানি হয়েছে। সিলেটের পর সংখ্যার দিক থেকে কোরবানি কম হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এই বিভাগে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৬২টি পশু কোরবানি হয়েছে।
এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে, ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি। ঢাকা বিভাগে পশু কোরবানি হয়েছে ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, রংপুর বিভাগে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪টি এবং বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৭৮৩টি পশু কোরবানি হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন মো. রুহুল আমিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা হয়তো ভালো না, যার কারণে এবার কোরবানি কম হয়েছে। সাধারণত রাজনৈতিক নেতারা কোরবানির জন্য বড় আকারের গরু কেনেন। আবার অনেক নেতা একাধিক গরু কোরবানি দেন। আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অনেক নেতা এখন পলাতক। এর প্রভাব কোরবানির পশু বিক্রির ক্ষেত্রে পড়তে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তেহরানে রয়েছেন ৪০০ বাংলাদেশি, স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। এঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এসব তথ্য জানান। ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। তাঁদের মধ্যে বড় সংখ্যক বাংলাদেশি ইরানিদের বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আরেক দল বাংলাদেশি ওখানকার সমুদ্র অঞ্চলে মাছ ধরাসহ ছোটখাটো কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই। কিছু বাংলাদেশি ইরানের ডিটেনশন সেন্টারে (আটককেন্দ্র) আছেন। এর বাইরে কিছু বাংলাদেশি আছেন পেশাজীবী, যাঁরা গণমাধ্যম ও চিকিৎসাসেবা খাতে কাজ করছেন। কিছু বাংলাদেশি ইরানে ভ্রমণে গেছেন। কিছু গেছেন পড়তে।
রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, তেহরানে থাকা বাংলাদেশিরা নিরাপদ স্থানে যেতে চান। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। ইতিমধ্যে ১০০ জন যোগাযোগ করেছেন। সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকসহ দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, গতকাল সোমবার রাতে ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রদূতের নির্ধারিত বাসভবন ছেড়ে গেছেন। তিনি এখন নিরাপদে অন্য একটি স্থানে অবস্থান করছেন। কারণ, ইসরায়েলি আক্রমণে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি ভবন এবং রাষ্ট্রদূতের ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এতটুকু বলতে পারি এ দুটোতে (বাংলাদেশের চ্যান্সারি ভবন, যেটা অফিস এবং রাষ্ট্রদূতের ভবন) নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি।’
পররাষ্ট্রসচিব জানান, সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তেহরান ছাড়াও আশপাশের দেশের শহরগুলোতে খোঁজখবর রাখছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানকার বাংলাদেশিদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখনকার সিদ্ধান্ত হলো, তেহরান থেকে যতটুকু দূরত্বে গেলে নিরাপদে থাকতে পারা যায়, তাঁরা যেন ততটা নিরাপদ স্থানে সরে যান। এই মুহূর্তে ইরান ত্যাগ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিমান যোগাযোগ বন্ধ এবং স্থলপথে যাওয়া হয়তো সম্ভব, কিন্তু তা নিরাপদ হবে না। এ জন্য তাঁদের তেহরান থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাঁদের জন্য ভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরে তাঁরা যদি পাকিস্তানে যেতে চান বা তুরস্কে যেতে চান, তখন তাঁদের পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে দূতাবাসের কর্মকাণ্ড কীভাবে চলছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দূতাবাস যুদ্ধাবস্থায়ও সেবামূলক কাজ করছে। বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। দূতাবাস প্রতিনিয়ত যুদ্ধের আপডেট (হালনাগাদ তথ্য) জানাচ্ছে। পাশাপাশি অন্য দেশ কীভাবে তাদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে, সেসব তথ্য নিয়মিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছে দূতাবাস।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া দূতাবাসে থাকা অর্থ দিয়ে করা হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেল কাজ না করায় পরে টাকা পাঠানো বেশ কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব জানান, অর্থ প্রেরণ কষ্টসাধ্য। স্থানান্তরের জন্য যে অর্থ লাগবে আমরা পাঠানোর চেষ্টা করছি। ওখানে ব্যাংকিং চ্যানেল কাজ করে না। সে জন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে। অর্থ পাঠানোর চ্যালেঞ্জের সমাধান নিয়ে রুহুল আলম বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অতিরিক্ত টাকা পাঠাব। আমাদের কিছু টাকা মিশনের কাছে আছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা যতটা সম্ভব বন্ধুরাষ্ট্রগুলো থেকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ইরানের কাছ থেকেও আমরা সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যতগুলো চ্যানেল খোলা আছে, সবগুলোতে চেষ্টা করছি। তবে মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো কিছু এত স্মুথলি (মসৃণভাবে) হয় না।’