অস্ট্রেলিয়ান প্রতিবেদক লরেন টমাসি যখন নিজ শহরে ফিরে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি পরিস্থিতির সম্প্রচার করছিলেন, তখন তাঁর হাতে স্পষ্টভাবে টিভি মাইক্রোফোন দেখা যাচ্ছিল; সেই মুহূর্তে রাবার বুলেট তাঁর ওপর আঘাত হানে। ব্রিটিশ আলোকচিত্রী নিক স্টার্নের পর টমাসি হলেন দ্বিতীয় সাংবাদিক, যিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন অভিযানে সৃষ্ট বিক্ষোভ প্রচারের সময় অ-প্রাণঘাতী গুলিতে আহত হন। কিন্তু তিনিই প্রথম ক্যামেরায় ধরা পড়েন এবং সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র কী হতে যাচ্ছে, তা না জানার কোনো কারণ নেই। এখন যে কেউ অনলাইনে সেই ক্লিপটি দেখতে পারেন। যখন আপনি তাঁর চিৎকার শুনতে পাবেন এবং আলোকচিত্রী আতঙ্কিত জনতার ছবি তোলার জন্য দ্রুত সরে যেতে দেখবেন, তখন তা নয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন, তখন সবাই এ পরিস্থিতির আশঙ্কা করেছিল।

নির্বাসন-সংশ্লিষ্ট স্কোয়াড বা দলগুলো সেসব ডেমোক্র্যাট-ভোটার সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, যারা তাদের প্রতিরোধ করতে নৈতিকভাবে বাধ্য মনে করবে। এতে এমন সহিংস সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যা রাষ্ট্রীয় রক্ষীবাহিনী পাঠানোর অজুহাত তৈরি করে; শেষ পর্যন্ত ফেডারেল ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সংঘর্ষে রূপ নেয়, যা মার্কিন গণতন্ত্রকে দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে।
এখন ক্যালিফোর্নিয়ায় এমন কিছু ঘটতে পারে, যেখানে রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসম অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট নিজের স্বার্থে ‘একটি সংকট তৈরি’র চেষ্টা করছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, যে কোনো বিক্ষোভকারী সহিংসতার মধ্য দিয়ে তৎপর হলে কেবল তার হাতের খেলার ঘুঁটি হবেন। হঠাৎ এই প্রেসিডেন্ট পদ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে পরিণত হতে পারে– এই ধারণা এখন আর আগের মতো বাড়াবাড়ি বলে মনে হয় না।

ইতোমধ্যে বিশ্ব দুটি বিশাল ইগোর সংঘর্ষ দেখেছে– কে জিতবে সে সম্পর্কে কার্যকর কিছু শিখেছে, যাদের একজনের কাছে সব অর্থ এবং অন্যজনের কাছে সব নির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, মার্কিন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোতেও ঠিক রাশিয়ানদের মতোই প্রেসিডেন্ট এখনও এজেন্ডা নির্ধারণ করতে পারেন।
আপনি বাঘের ওপর সওয়ার হতে পারেন না। এখান থেকে এটিই শিক্ষা, একবার জনপ্রিয়তাবাদ বা পপুলিজমের ক্ষমতার বলয় আঁকড়ে ফেললে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিও নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন না; তিনি তাঁর নিজের স্বার্থে এটি ব্যবহার করবেন, অথবা বিশৃঙ্খলার ওপর তাঁর নিজস্ব এজেন্ডা চাপিয়ে দেবেন। এমনকি যখন প্রতিহিংসাপরায়ণ হোয়াইট হাউসের কাছে এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকেও ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকে, তখনও তা নয়।

সপ্তাহান্তে ইলন মাস্ক খানিক দোষী সাব্যস্ত যৌন পাচারকারী জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের কথিত সম্পর্কের ব্যাপারে বিস্ফোরক টুইটগুলো মুছে ফেলেন এবং সোমবারের মধ্যে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস বিক্ষোভ নিয়ে ট্রাম্পের বার্তাগুলো বিশ্বস্ততার সঙ্গে শেয়ার করতে শুরু করেন। এদিকে তাঁর বাবা কৌশলে এই বিস্ফোরণের জন্য পাঁচ মাস ধরে হোয়াইট হাউসের জন্য দিনরাত কাজ করার পর ‘ক্লান্ত’ থাকার পেছনে মাস্ক জুনিয়রের ওপর দোষ চাপান।

তবে পাঁচ মাস পর এটি স্পষ্ট, ট্রাম্পের জাতীয় ঋণকে অচিহ্নিত ও সম্ভাব্যভাবে অস্থিতিশীল উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার পূর্বাভাসের ফলে ডজের বা রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বিভাগের যে কোনো সঞ্চয় একেবারে কমে যাবে। অন্য কথায়, স্টেরয়েডের ওপর মার্গারেট থ্যাচারের মতো মার্কিন সমতুল্য হওয়ার আশা করা যে কোনো প্রযুক্তিবিদ লিজ ট্রুসের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অনেক এসপ্রেসো কফি পান করার পর এবং তার সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় সৈন্যদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এক ধরনের উপলব্ধি ঘটে বিলিয়নেয়ার ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মাইকেল মরিটজ যেভাবে বলেছেন, তারা যা প্রকাশ করেছেন তার ওপর তাদের ‘কোনো প্রভাব’ নেই।

ব্রিটেনে এমন অনেক মানুষের আগমন ঘটেছে, যারা রিফর্ম পার্টিতে গোপনে কারা আসা-যাওয়া করত তাদের ব্যাপারে মোটেও চিন্তা করত না, যদিও তাদের জরিপ মতে তারাই রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করতে শুরু করেছে। অন্যরা কেবল আশা করে না, রিফর্ম স্থায়ীভাবে এমন একটি রক্ষণশীল দলকে প্রতিস্থাপন করলে তাদের জীবনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে, যা থেকে তাদের আলাদা করা ইতোমধ্যে কঠিন বলে মনে হচ্ছে।
কেউ কেউ ইতোমধ্যে হিসাব করে দেখছেন, তারা তাদের উত্থানকে তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকটি ভয়াবহ দিন যা দেখিয়েছে তা হলো একবার পপুলিজম মাঠে যথেষ্ট শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেলে বিশৃঙ্খলা জিতে যায়। দেরিতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। এমনকি গৃহপালিত জন্তুদের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও উপায় নেই। আপনি যা করতে পারেন তা হলো প্রথমেই তাকে ঘরে একটি কক্ষ দিতে অস্বীকার করা। অন্তত ব্রিটেনে এ ব্যাপারটি এখনও খুব বেশি দেরি হয়নি।

গ্যাবি হিনস্লিফ: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক; 
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র জন য ক ষমত র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও