শরীয়তপুরে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। বুধবার দুপুরে অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জাজিরার নাওডোবা এলাকায় আসেন। তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা, স্থানীয় জনসাধারণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুনপদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে ভাঙন, স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক২২ ঘণ্টা আগে

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, নদীভাঙনের কারণ নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে ড্রেজার (খননযন্ত্র) চালানোর ফলে পদ্মা নদীর আশেপাশের এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছি। তবে জেলা প্রশাসনের লোকজন ড্রেজার শ্রমিকদের ধরেন। তাঁদের ধরে লাভ নেই। আমরা বলেছি ড্রেজারগুলো আটকাতে হবে এবং এসব ড্রেজার জব্দ করে মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা বন্ধ করা না গেলে বাঁধ দিলেও সমস্যার সমাধানে আসবে না।’

প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ডকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে নদীভাঙন রোধ করা হবে বলে জানান ফাওজুল কবির। অবৈধ ড্রেজার পরিচালনায় জেলা প্রশাসক জনস্বার্থবিরোধী অনুমতি দিয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উপদেষ্টা।

ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের কথা জানিয়েছেন অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ভাঙনকবলিত জায়গায় ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে পাউবো ও সেতু বিভাগের সমীক্ষার পর ফলাফল ও নকশা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।

এ সময় দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক এনায়েত উল্লাহ, প্রধান প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন, পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান।

শরীয়তপুর পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত বছর নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর গত শনিবার সকালে আবার বাঁধের ২০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। এরপর ওই স্থানে ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো।

বাঁধের অংশ ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জাজিরার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার। এর মধ্যে আলম খার কান্দি গ্রামের ১৫ ব্যক্তি তাঁদের ১৩টি বসতঘর ও দুটি দোকান সরিয়ে নিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

চারঘাটে পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের একজন নারী একটি ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল ‘নদী আমাদের মা, মায়ের বুক ভাঙা চাই না।’ এ রকম আরও বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার, ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষেরা।

জেলার চারঘাট উপজেলা সদরে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙনকবলিত পাঁচটি গ্রামের মানুষের উদ্যোগে আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এই আয়োজন হয়।

গ্রামবাসীর ভাষ্য, চারঘাট উপজেলার গোপালপুর, রাউথা, পিরোজপুর, সাহাপুর এবং বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর, আতারপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে আগামীতে ভাঙনের ঝুঁকি আছে। এই আশঙ্কায় ভাঙনকবলিত গ্রামবাসী এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছিলেন চারঘাটের পিরোজপুর গ্রামের শাহানাজ বেগম (৪০। তিনি বললেন, ‘আমার বাড়ি নদীর পাড়ের ওপরে ঝুলি আছে। যকুন তকুন ভাইঙ্গি পড়বি।’

একই এলাকা থেকে এসেছেন পারভীনা খাতুন (৩৫)। সঙ্গে তাঁর শিশু ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, নদী একেবারে পায়ের তলায় এসে গেছে। তাঁদের আর পেছনে সরার জায়গা নেই।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইদ। তিনি বলেন, পিরোজপুর, গোপালপুর, সাহাপুর এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে নদীভাঙন অব্যাহত আছে। এলাকার অন্তত ৫০০ মানুষের ঘরবাড়ি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার বাস্তুহারা মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা এলাকায় ফিরতে পারছেন না। এই ভাঙনকবলিত এলাকায় এবার যদি বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে জনগণ আবার রাজপথে নামবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অচল করে দেওয়া হবে। তাঁদের অফিস করতে দেওয়া হবে না।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহীন আলী, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির রহমান, পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সালেক আদিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শাহীনুর রহমান, ভাঙনকবলিত এলাকার শিক্ষক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চারঘাটে পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন