ঈদযাত্রায় বাবা ও দুই ছেলে নিহত, স্তব্ধ পুরো গ্রাম
Published: 3rd, June 2025 GMT
একসঙ্গে রাখা হয়েছে তিনটি খাটিয়া। অদূরেই পারিবারিক কবরস্থানে খোঁড়া হচ্ছে তিনটি কবর। মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ, স্তব্ধ গ্রামবাসীও। সড়ক দুর্ঘটনায় শেরপুরে বাবা ও দুই ছেলের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাসাইল উপজেলার করটিয়া বাইপাসে আজ মঙ্গলবার সকালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। তাঁরা হলেন শেরপুরের চরমোচারিয়া ইউনিয়নের কামারের চর গ্রামের আমজাদ মণ্ডল (৫৫) এবং তাঁর দুই ছেলে রাহাত মণ্ডল (২৬) ও অতুল মণ্ডল (১৪)। আহত হয়েছেন আমজাদ মণ্ডলের স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৩৫) ও ছেলে রাহাতের স্ত্রী মরিয়ম (১৮)। নিহত আমজাদ ঢাকায় ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন।
আরও পড়ুনঈদযাত্রায় সড়কে ৩ সদস্যকে হারিয়ে পরিবারটির সামনে এখন ‘শুধুই অন্ধকার’৪ ঘণ্টা আগেনিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, আমজাদ মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার মাদারটেক এলাকায় সপরিবার বসবাস করতেন। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সকাল ছয়টার দিকে মাইক্রোবাসযোগে শেরপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাসাইল উপজেলার করটিয়া বাইপাসে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসটি ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আমজাদ মণ্ডল ও তাঁর দুই ছেলে রাহাত ও অতুল নিহত হন। আহত হন আমজাদের স্ত্রী মাকসুদা বেগম ও ছেলে রাহাতের স্ত্রী মরিয়ম আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, স্বজন ও গ্রামবাসী মরদেহের অপেক্ষায় আছেন। বাড়ির ভেতর চলছে আহাজারি। মানসিক ভারসাম্যহীন মা বুঝতে পারছেন না, ছেলে ও দুই নাতি আর ফিরে আসবেন না। ছোট ভাই ও দুই ভাতিজাকে হারিয়ে কিছুক্ষণ পরপর মূর্ছা যাচ্ছিলেন সফর উদ্দিন মণ্ডল। এ সময় তাঁদের স্বজন ও গ্রামের নারী–পুরুষ বাড়িতে ভিড় করছিলেন।
সফর উদ্দিন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ করার জন্য আমার ভাই ও তার পরিবার আসছিল। কোরবানির জন্য গরু কিনবে বলে জানিয়ে ছিল। ওরা বাড়ি আসলে গরু কিনতে হাটে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটা দুর্ঘনায় সব শেষ হয়ে গেছে।’
কিছুক্ষণের মধ্যে আসে মরদেহ। গ্রামে একাধিক খাটিয়া না থাকায় পাশের দুই গ্রাম থেকে খাটিয়া এনে মরদেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অদূরেই পারিবারিক কবরস্থানে খোঁড়া হচ্ছিল একে একে তিনটি কবর। কামারের চর গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, ঈদ করতে পরিবার নিয়ে বাড়ি আসছিলেন আমজাদ মণ্ডল। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব শেষ। একসঙ্গে তিনটি কবর খোঁড়া হচ্ছে। রাতেই নিহত ব্যক্তিদের দাফন করা হবে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত আমজাদ মণ্ডলের ছোট বোন মোর্শেদা বেগম বলেন, ‘হঠাৎ পুলিশের ফোনে আসে। সেখান থেকে জানানো হয়, আমার ভাই ও তার দুই ছেলে আর নেই। প্রতিবছর আমার ভাই এসে আমাদের সঙ্গে ঈদ করত। এবার সব উলট–পালট হয়ে গেল। আল্লাহ আমাদের এই কষ্ট কেমনে দিলা। আমগর তো আর ঈদ করা অইলো না। ভাইরে ছাড়া কেমনে ঈদ পার করমু।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জলাবদ্ধতা, ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা
কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও এর চেয়ে কম। কয়েকটি স্থানে নালার স্লাব খুলে রাখা হয়েছে। ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। কখনো কখনো দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এ চিত্র দেখা যায়।
ভোগড়া এলাকায় কথা হয় গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মহাসড়কে পানি জমে থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢাকা-বাইপাস সড়কে টোল আদায় করায় ধীরগতির কারণে যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা এই যানজট নিরসন করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র চার দিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরবেন কর্মজীবী মানুষেরা। রোববার সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়ক দিয়ে যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে চলমান বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে এবং শিল্পকারখানা একসঙ্গে ছুটি হলে যানজটের শঙ্কা করছেন যাত্রী ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এলাকাবাসী ও ট্রাফিক পুলিশ জানায়, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে গাজীপুরের ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী ও মহাসড়কের যাত্রীরা। বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। এ জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে, বৃষ্টি না কমলে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হবে ঘরমুখী মানুষদের।
শিল্প–অধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ কর্মী। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কারখানা ছুটি হবে ৪ থেকে ৬ জুনের মধ্যে। একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে এবং যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ–খ্যাত ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় ও ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা ধরেই মূলত রাজধানী ও গাজীপুরের লোকজন বাড়ি ফেরেন। ঈদের আগের চাপ এড়িয়ে চলার জন্য অনেকেই পরিবার-পরিজনকে আগেই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে জলাবন্ধতার কারণে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। গাজীপুর মহনগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায়