Samakal:
2025-08-05@07:16:03 GMT

ছোট উদ্যোগ, বড় দিগন্ত

Published: 20th, June 2025 GMT

ছোট উদ্যোগ, বড় দিগন্ত

প্রকল্পের বরাদ্দ ৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সময় পাঁচ বছর। এই স্বল্প অর্থ ও সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য আমকে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপান্তরে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে, মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের জুনে। বাস্তবায়নে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। যদিও এটি ডিএইর ৩২টি চলমান প্রকল্পের মধ্যে বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, তবুও কার্যক্রম ও সাফল্যের বিচারে এখন কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল।

বাংলাদেশে আম চাষ বহু পুরোনো চর্চা। গ্রীষ্মকালের শুরুর ফলটি এতদিন মূলত দেশের বাজারেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই প্রকল্পের হাত ধরে এখন সেই আমই পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াসহ বিশ্বের ৩৬টি দেশে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৯২ টন আম রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আম রপ্তানির তালিকায় এ বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীন। দেশটিতে এরই মধ্যে তিন টন আম রপ্তানি হয়েছে। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আম রপ্তানির পরিমাণ ৭১০ টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববাজারে ‘ক্ষীরসাপাতি’, ‘গোপালভোগ’, ‘ফজলি’, ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ ও ‘আম্রপালি’র মতো দেশি জাতের আমের কদর বাড়ছে। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণে ইউরোপীয় মান অনুসারে চাষ, প্যাকিং ও রপ্তানির জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই শিখছেন কৃষকরা।

প্রকল্পটির আওতায় দেশের ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে ২৭৬০টির বেশি উত্তম কৃষি চর্চা (জিএপি) ভিত্তিক আম প্রদর্শনী প্লট। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি আমচাষি, রপ্তানিকারক, পরিবহনকারী ও বাজারজাতকারীদের। শুধু প্রশিক্ষণ নয়, কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে হ্যান্ড স্প্রেয়ার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, গার্ডেন টিলার, ম্যাংগো প্লাকারসহ নানা আধুনিক কৃষিযন্ত্র।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার মাঠে এখন নিয়ম মেনে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে রোপণ হচ্ছে আমগাছ। চাষিরা এখন জানেন, কখন আম তুললে তা রপ্তানিযোগ্য হয়, কতটুকু পেকে গেলে তা ইউরোপে রপ্তানির মানে পড়ে, কোন জাত রপ্তানির জন্য উপযুক্ত।
এই প্রকল্পের অনন্য একদিক হলো– নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। গ্রেডিং, প্যাকিং, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শুধু উৎপাদন নয়, কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে।
প্রকল্পের অধীনে তৈরি হচ্ছে আম প্রক্রিয়াজাতকরণের ছোট প্লান্ট, ওয়াশিং-গ্রেডিং-কুলিং শেড এবং অনলাইনভিত্তিক বাজার সংযোগ প্ল্যাটফর্ম। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের সুপারশপ ও পাঁচতারকা হোটেলেও মানসম্পন্ন এই আম সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। নওগাঁর আমচাষি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরা আগে জানতাম না রপ্তানির জন্য আলাদা মানদণ্ড আছে। এখন জানি এবং সে অনুযায়ী চাষ করি।’

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের পাশে আছি। তাদের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করছি।’ আম রপ্তানিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আম রপ্তানির ক্ষেত্রে দু-তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিমান ভাড়া যদি স্থিতিশীল থাকে ও বিমানের যদি সংকট না হয়, তাহলে আরও বড় পরিসরে আম রপ্তানি করা যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড.

জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মাঠপর্যায়ের নিবিড় কার্যক্রম থাকলে কম বাজেটেও বিশাল পরিবর্তন আনা সম্ভব। আম রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে কৃষকের দৃষ্টিভঙ্গি, চাষাবাদের ধারা এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান। এ বিষয়ের সরকারের উদ্যোগ আরও বড় করা দরকার। যেন ‘ফলের রাজা’ আম কেবল গাছ হিসেবেই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, আরও কৃষক বা উদ্যোক্তাকে এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। বিশেষ করে যেসব এলাকায় আগে কখনও রপ্তানিমুখী চাষ হয়নি, সেখানেও চাষ বাড়ানো যেতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি আরবে এক দিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সৌদি আরবে এক দিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটিতে সম্প্রতি মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের হার বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশটিতে এক দিনে এত বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বলেছে, গত শনিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান এলাকায় সোমালিয়ার চারজন ও ইথিওপিয়ার তিনজন নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সৌদিতে হাশিশ (গাঁজার মতো একধরনের মাদকদ্রব্য) চোরাচালানের অভিযোগ ছিল।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া অন্য ব্যক্তি হলেন সৌদি আরবের নাগরিক। মাকে হত্যার দায়ে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এএফপির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে ২৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে মাদক–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ ছিল।

এই হারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে থাকলে চলতি বছর দেশটিতে ২০২৪ সালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর দেশটিতে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের’ কারণেই মূলত সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। এ অভিযানের সময় যাদের আটক করা হয়েছিল, এখন বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।

প্রায় তিন বছর বন্ধ রাখার পর ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে মাদক–সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আবার শুরু করে সৌদি আরব।

সৌদি আরবে ২০২২ সালে মাদক-সম্পর্কিত অপরাধে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

অধিকারকর্মীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই ধারাবাহিকতা সৌদি আরবের ‘উন্মুক্ত ও সহনশীল সমাজ’ গঠনের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করছে। অথচ এটাই ছিল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘোষিত ভিশন ২০৩০ সংস্কার কর্মসূচির মূল ভিত্তি।

তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ড অপরিহার্য এবং সব ধরনের আপিলপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই এই ধরনের সাজা কার্যকর করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদক–বিতর্ক পেছনে ফেলে ফিরছেন লোহান
  • সৌদি আরবে এক দিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
  • ইউক্রেনে সামরিক ড্রোন কেনাকাটায় ঘুষ কেলেঙ্কারি, আইনপ্রণেতাসহ কয়েক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার