Samakal:
2025-06-21@01:58:32 GMT

ছোট উদ্যোগ, বড় দিগন্ত

Published: 20th, June 2025 GMT

ছোট উদ্যোগ, বড় দিগন্ত

প্রকল্পের বরাদ্দ ৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সময় পাঁচ বছর। এই স্বল্প অর্থ ও সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য আমকে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপান্তরে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে, মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের জুনে। বাস্তবায়নে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। যদিও এটি ডিএইর ৩২টি চলমান প্রকল্পের মধ্যে বরাদ্দের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, তবুও কার্যক্রম ও সাফল্যের বিচারে এখন কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল।

বাংলাদেশে আম চাষ বহু পুরোনো চর্চা। গ্রীষ্মকালের শুরুর ফলটি এতদিন মূলত দেশের বাজারেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই প্রকল্পের হাত ধরে এখন সেই আমই পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াসহ বিশ্বের ৩৬টি দেশে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৯২ টন আম রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আম রপ্তানির তালিকায় এ বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীন। দেশটিতে এরই মধ্যে তিন টন আম রপ্তানি হয়েছে। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আম রপ্তানির পরিমাণ ৭১০ টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
বিশ্ববাজারে ‘ক্ষীরসাপাতি’, ‘গোপালভোগ’, ‘ফজলি’, ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ ও ‘আম্রপালি’র মতো দেশি জাতের আমের কদর বাড়ছে। এই প্রকল্পের প্রশিক্ষণে ইউরোপীয় মান অনুসারে চাষ, প্যাকিং ও রপ্তানির জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই শিখছেন কৃষকরা।

প্রকল্পটির আওতায় দেশের ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে ২৭৬০টির বেশি উত্তম কৃষি চর্চা (জিএপি) ভিত্তিক আম প্রদর্শনী প্লট। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি আমচাষি, রপ্তানিকারক, পরিবহনকারী ও বাজারজাতকারীদের। শুধু প্রশিক্ষণ নয়, কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে হ্যান্ড স্প্রেয়ার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, গার্ডেন টিলার, ম্যাংগো প্লাকারসহ নানা আধুনিক কৃষিযন্ত্র।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার মাঠে এখন নিয়ম মেনে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে রোপণ হচ্ছে আমগাছ। চাষিরা এখন জানেন, কখন আম তুললে তা রপ্তানিযোগ্য হয়, কতটুকু পেকে গেলে তা ইউরোপে রপ্তানির মানে পড়ে, কোন জাত রপ্তানির জন্য উপযুক্ত।
এই প্রকল্পের অনন্য একদিক হলো– নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। গ্রেডিং, প্যাকিং, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শুধু উৎপাদন নয়, কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে।
প্রকল্পের অধীনে তৈরি হচ্ছে আম প্রক্রিয়াজাতকরণের ছোট প্লান্ট, ওয়াশিং-গ্রেডিং-কুলিং শেড এবং অনলাইনভিত্তিক বাজার সংযোগ প্ল্যাটফর্ম। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের সুপারশপ ও পাঁচতারকা হোটেলেও মানসম্পন্ন এই আম সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। নওগাঁর আমচাষি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরা আগে জানতাম না রপ্তানির জন্য আলাদা মানদণ্ড আছে। এখন জানি এবং সে অনুযায়ী চাষ করি।’

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের পাশে আছি। তাদের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করছি।’ আম রপ্তানিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আম রপ্তানির ক্ষেত্রে দু-তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিমান ভাড়া যদি স্থিতিশীল থাকে ও বিমানের যদি সংকট না হয়, তাহলে আরও বড় পরিসরে আম রপ্তানি করা যাবে। এ বিষয়টি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড.

জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মাঠপর্যায়ের নিবিড় কার্যক্রম থাকলে কম বাজেটেও বিশাল পরিবর্তন আনা সম্ভব। আম রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে কৃষকের দৃষ্টিভঙ্গি, চাষাবাদের ধারা এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান। এ বিষয়ের সরকারের উদ্যোগ আরও বড় করা দরকার। যেন ‘ফলের রাজা’ আম কেবল গাছ হিসেবেই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, আরও কৃষক বা উদ্যোক্তাকে এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। বিশেষ করে যেসব এলাকায় আগে কখনও রপ্তানিমুখী চাষ হয়নি, সেখানেও চাষ বাড়ানো যেতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বে বাংলাদেশি শরণার্থী পাঁচ বছর ধরে বাড়ছে

বিশ্বের নানা দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের শরণার্থী হওয়ার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশিদের শরণার্থী হওয়ার সংখ্যা বাড়ার হার ঊর্ধ্বমুখী। ২০২৪ সালে ২৮ হাজার ৪৭৩ জন বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। একই বছর ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। বাংলাদেশিদের সিংহভাগই ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের লোকজনের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এসব বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালির পাশাপাশি ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, সাইপ্রাস, বসনিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতেও নিবন্ধন করেছেন। আর উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পাপুয়া নিউগিনির মতো দেশগুলোতে শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন। এশিয়ার মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকংয়ের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও বাংলাদেশিরা নিবন্ধিত হয়েছেন। এমনকি ২০২৪ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়াতেও ৬ জন বাংলাদেশি নিজেকে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশিদের সিংহভাগই উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়ে নিজেদের শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে গেলে নিজ দেশে জীবনের ঝুঁকি থাকতে হয়। আবেদনকারী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই ওই সময়কালে (২০২০–২৪) দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। তবে যাঁরা শরণার্থী হয়েছেন, তাঁদের একটি অংশ প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে দেখা যায়, এদের বেশির ভাগই সুযোগসন্ধানী বা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েছেন। ২০২৩ সালে ২৪ হাজার ১২৬ বাংলাদেশি জাতিসংঘের কাছে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। এ ছাড়া ২০২২ সালে ২৩ হাজার ৯৩৫ জন, ২০২১ সালে ২২ হাজার ৬৭২ জন এবং ২০২০ সালে ১৮ হাজার ৯৪৮ জন বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী দাবি করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি ২০১৯ সালে শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশিদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৭৬৬, ২০১৮ সালে ২১ হাজার ২২ এবং ২০১৭ সালে ১৬ হাজার ৭৮০।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে এক শ্রেণির তরুণদের ভেতরে যেকোনো পন্থায় বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা তীব্র হয়েছে। আর এ সুযোগই নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্র। গত কয়েক বছর অব্যাহতভাবে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া, তিউনিসিয়া ও ইতালির উপকূল থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যুর খবর নিয়মিত ঘটনা। ইউরোপগামী পাচারের বিভিন্ন রুট থেকে প্রতিনিয়তই উদ্ধার করা হচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে সবশেষ ইউক্রেন–রাশিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশের লোকজনের অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনা। ইউরোপে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় দেশ ছেড়ে যাওয়া লোকজন নিজেদের গন্তব্য দেখছেন এখন যুদ্ধের মাঠে। মানব পাচারকারীরা ইউরোপগামী লোকজনকে পাচার করে রুশ বাহিনীতে যুক্ত হতে বাধ্য করছে।

২০২৩ সালে ৭৫ হাজার ৮৬৭ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এ ছাড়া ২০২২ সালে ৬১ হাজার ২৯৮ জন, ২০২১ সালে ৬৫ হাজার ৪৯৫ এবং ২০২০ সালে ৬৪ হাজার ৬৩৬ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৬২ হাজার ৮৬০ জন এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ৮৬০ জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

কূটনীতিকেরা বলছেন, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থী হিসেবে বিদেশে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অর্থনৈতিক কারণে দেশ ছেড়েছেন। করোনা মহামারির সময় দেশে আয়ের সুযোগ কমে যাওয়া ও বৈধ পথে বিদেশে যাওয়া সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিও এ প্রবণতা বাড়িয়েছে বলে তাঁদের মত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল প্রোগ্রাম, ভর্তি শেষ ২১ জুন
  • বিশ্বে বাংলাদেশি শরণার্থী পাঁচ বছর ধরে বাড়ছে
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল প্রোগ্রাম, ভর্তি আবেদন শেষ ২১ জুন
  • বিটিএস সদস্যরা সামরিক জীবনে কী করেছেন
  • সবার স্বার্থ রক্ষা করে ইরান-ইসরায়েল চুক্তি সম্ভব: পুতিন
  • সিপিএলে সাকিব