নির্জন দুপুর পেরিয়ে বৃষ্টিস্নাত বিকেলে চন্দ্রিমা উদ্যানে জমে উঠেছিল তারুণ্যের এক অনন্য মিলনমেলা। নগরের ব্যস্ততার বাইরে সবুজ ছায়াঘেরা পরিবেশে, বকুল গাছের তলায় বসেছিল তরুণ লেখকদের বৈঠক।

শুক্রবার (২০ জুন) বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম (বিটিসিএলএফ) এর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ঢাকাস্থ সদস্যদের ‘ইছামতী টিম’ আয়োজন করে এই দ্বি-মাসিক সাহিত্য আড্ডার।

সাহিত্য আড্ডায় অংশ নেন সংগঠনের নিয়মিত সদস্য ও আমন্ত্রিত তরুণ লেখকরা। আড্ডার শুরুতে পরিচয়পর্ব এবং লেখালেখি সংক্রান্ত আপডেট বিনিময়ের মধ্য দিয়ে জমে ওঠে আলোচনা।

আরো পড়ুন:

‘পার’ এর সাহিত্য আলোচনা-‘বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি; শিল্পী, লেখকদের

‘একবার নারী হন, হে প্রভু’

এরপর শাখার উপদেষ্টা লাইজু আক্তার ‘কেন লেখালেখি করব’ শীর্ষক একটি প্রাঞ্জল, অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা উপস্থাপন করেন, যা তরুণদের ভাবনায় জাগায় নতুন ঢেউ।

আড্ডায় জাপানি কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামির জনপ্রিয় উপন্যাস ‘South of the Border, West of the Sun’ বইটি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। উপন্যাসের চরিত্র, প্রেক্ষাপট ও লেখকের স্টাইল নিয়ে চলে গভীর বিশ্লেষণ।

এই আড্ডা শুধুই সাহিত্যচর্চার পরিসর নয় বরং আত্মপ্রকাশ ও বিকাশের একটি প্রাণবন্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করছে। একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে মত প্রকাশ, সহমর্মিতা ও বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে তোলার এমন প্রয়াস তরুণদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানজিদ শুভ্র বলেন, “আমাদের সাহিত্য আড্ডাগুলো তরুণদের জন্য এমন একটি জায়গা তৈরি করছে, যেখানে তারা নতুন ভাবনা ও মতামত তুলে ধরতে পারে নির্ভয়ে। এখানে সবাই সহযাত্রী। আমরা চাই, লেখালেখি তাদের জীবনের অভ্যাস হয়ে উঠুক।”

আড্ডার একপর্যায়ে সদস্যদের মাঝে বই বিনিময় হয়, যা পাঠাভ্যাস তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ সময় বিগত সময়ের ‘মাসিক সেরা লেখক’ হিসেবে মোসা.

আফরিনা আক্তারকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কনিষ্ঠ সদস্য হিমেল আহমেদকে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়।

উপদেষ্টা লাইজু আক্তার বলেন, “লেখার পাশাপাশি গঠনমূলক মতামত ও বই বিনিময়ের যে সংস্কৃতি এখানে গড়ে উঠছে, তা তরুণদের সাহিত্যপথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।”

ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকায় প্রতি দুই মাস অন্তর এবং চট্টগ্রামে প্রতি মাসে এ ধরনের সাহিত্য আড্ডা আয়োজন করা হয়। এছাড়া ফেনী, বরিশাল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে সদস্যরাও নিয়মিত সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছে। ভবিষ্যতে আরো বিস্তৃত পরিসরে, আন্তঃশাখা সাহিত্য আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ঢাকা/শুভ্র/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণিসম্পদ খাতে ভর্তুকি দরকার: উপদেষ্টা 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, দেশের সামগ্রিক পুষ্টিচিত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় গড় হিসাবের ওপর নির্ভরতা একটি ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’। ধনী মানুষের আয় দিয়ে গরীব মানুষকে বিচার করবেন না। কৃষিতে আমরা ভর্তুকির কথা শুনি। কৃষির উপখাত হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত কোন ভর্তুকি পায় না। এ খাতেও ভর্তুকি দরকার।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’-শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় দিনের বিষয় ছিল ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ: পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণি ও মৎস্য খাত’।

বিএজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, “ওপরের কয়েক শতাংশ মানুষের ভোগক্ষমতার গড় তুলে ধরা হলে বাস্তবে গরিব মানুষের প্রকৃত খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিঘাটতি আড়াল হয়ে যায়। ফলে নীতি-নির্ধারণে ভুল ধারণা তৈরি হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক পুষ্টি–চাহিদা অজানাই থেকে যায়। দেশীয় প্রাণিসম্পদ শুধু উৎপাদনশীলতার জন্য নয়, গ্রামীণ খাদ্য চাহিদা, সংরক্ষণ সুবিধা, নারী কর্মসংস্থান ও কৃষির ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।”

উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে শিল্প হিসেবে দেখা হলেও উৎপাদনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এখনও গ্রামীণ সাধারণ মানুষের হাতেই হচ্ছে। শিল্পায়ন প্রয়োজন, তবে দেশীয় প্রজাতির সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

বিশেষ করে সংকর জাত তৈরির সময় যেন দেশীয় জাতের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে না যায় সেদিকেও তিনি কঠোর সতর্কবার্তা দেন।

পুষ্টিহীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জিরো হাঙ্গার মানে শুধু পেট ভরে খাওয়া নয়, পুষ্টিমান নিশ্চিত করাও জরুরি। আমরা বছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ১৩৭টি বলি। কিন্তু এই গড় হিসাব ধনী–গরিবের প্রকৃত খাদ্যাভ্যাসের বৈষম্যকে আড়াল করে দেয়। ফলে দরিদ্র মানুষের প্রকৃত ভোগ্যচিত্র অদৃশ্য থেকে যায়।”

গ্রামীণ খাদ্য ব্যবস্থার বৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “উৎপাদনকারী জেলার মানুষও অনেক সময় নিজ এলাকার দেশীয় মাছ খেতে পারেন না।”

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সুনামগঞ্জে দেশীয় মাছের স্বাদ অত্যন্ত ভালো হলেও অনেক সুনামগঞ্জবাসী এখন একুয়াকালচারের পাঙ্গাস খেতে বাধ্য হচ্ছেন।”

এসব বাস্তব তথ্য সাংবাদিকদের তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

একই সঙ্গে একুয়াকালচারের ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করে উপদেষ্টা বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত ফিড ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এসব বিষয়ে এখনই নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”

মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, “দেশীয় জাতের মাছ, মাংস ও প্রাণিসম্পদ বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ, যেগুলো রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। পৃথিবীর অনেক দেশের যেসব প্রাণিসম্পদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, সেগুলোর অনেকগুলোই আমাদের দেশে টিকে আছে।”

স্বাগত বক্তব্যে সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, “আমরা বিএজেএফ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও নীতিগত অঙ্গীকার চাই। এর মধ্যে নদীর মাছ ফেরত আনা, অযাচিত বালাইনাশক ব্যবহার কমানো, চাষের মাছের গুনগত মান রক্ষা, খামারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চাই।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, “নদীর মাছ কমার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা চাষের ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে আনার কৌশল বাস্তবায়ন করছি। নিরাপদ মাছ উৎপাদন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, “দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদনে জেনেটিক উন্নয়ন, ফডার প্রযুক্তি ও আধুনিক গবেষণার ফলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণের সক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে।”

আরো বক্তব্য করেন বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর সাবেক মহাপরিচালক ও লাল তীর লাইভস্টকের নির্বাহী পরিচালক ড. কাজী ইমদাদুল হক, এসিআই এগ্রিবিজনেসেস-এর গ্রুপ উপদেষ্টা ড. ফা হ আনসারী এবং আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। সম্মেলনে ব্লু ইকোনমি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী।

বিএজেএফ আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা, করপোরেট ব্যক্তিত্ব, কৃষিবিদ, গবেষক এবং কৃষি, পরিবেশ, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেন। 

ঢাকা/এএএম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ