বন্দরের দায়িত্ব বিদেশিদের দিতে ড. ইউনূসের এত আগ্রহ কেন
Published: 21st, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির কাছে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, মোহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় ডিপি ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর সেরা। শেখ হাসিনাও এই বন্দর ইজারা দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। তার (শেখ হাসিনা) তো একটা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ থাকতে পারে, কিন্তু মোহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থটা কী? তিনি কেন এতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তা প্রশ্নের দাবি রাখে।
শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এই সভার আয়োজন করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর। ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, হাসিনা সরকার এলএনজি আমদানিনির্ভর দেশ তৈরি করে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারেরও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো এলএনজি আমদানি চুক্তি করেছে। স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এখন বিদেশি কোম্পানির হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সবদিক থেকেই দেখা যাচ্ছে সরকার উল্টোপথে হাঁটছে।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম হতে গেলে নিজেদের জাতীয় সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তারা সক্ষমতা তৈরি করতে পারছে না কেন? বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর না করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ডিপি ওয়ার্ল্ড কীভাবে তাদের সক্ষমতা অর্জন করেছে সেই সম্পর্কে জানতে হবে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি কিংবা আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে করা চুক্তিগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে আনু মোহাম্মদ বলেন, শেখ হাসিনার আমলে প্রাণ প্রকৃতি বিনাশকারী ও দেশবিরোধী কী কী ক্ষতিকর চুক্তি হয়েছে তা জাতির সামনে উন্মুক্ত করতে হবে। ক্ষতিকর চুক্তি বাদ দিতে হবে। ড.
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, রামপাল, রূপপুরের মতো বড় ধরনের প্রকল্পের বিষয় কথা বললে একসময় বলা হতো শেখ হাসিনা কখনও দেশের স্বার্থের বাইরে কোনো চুক্তি করেন না। এখন মোহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরেও তার আস্থাভাজনরা তেমনই বলছেন। এটা উদ্বেগজনক। এসব নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, তাদের প্রতিহত করতে হবে, এমন মনোভাব দেখা যায় প্রেস সচিবের। মোহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে যেন কেউ প্রশ্ন না তোলে, এমন মনোভাবও অগ্রহণযোগ্য।
বিদেশি বিনিয়োগ এলে সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না এ প্রবণতা সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন, কী উদ্দেশ্য বিদেশি বিনিয়োগটি এলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আশীর্বাদ হবে না, অভিশাপ হবে তা দেখতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয় না।
আনু মুহাম্মদ জানান, আগামী ২৭ ও ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা ও বিদেশি কোম্পানির ভূমিকা নিয়ে বামধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় মঞ্চ গঠিত হবে। তারা ঢাকা টু চট্টগ্রাম লংমার্চ করবেন। এই উদ্যোগ সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা। তিনি বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করা হয়নি। এটি ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় শেখ হাসিনার আমলে ২০২৩ সালে, সরকারের সঙ্গে সরকার (জিটুজি) আলোচনার মাধ্যমে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্দর নিয়ে একই নীতি অনুসরণ করছে। শুধু বিদেশি অপারেটর আনলেই দক্ষতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয় না। অবকাঠামো, জনবল ও সুশাসনের ঘাটতি থাকলে তারাও ব্যর্থ হয়।
লেখক ও গবেষক ড. মাহা মির্জা বলেন, কৌশলগত খাতে বেসরকারিকরণ টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকার। বরং আয়বৈষম্য, শ্রমবাজার সংকোচন এবং সামাজিক অসন্তোষ বেড়েছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লা বাহার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ইউন স ইউন স র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশজুড়ে গ্যাস সংকট চরমে
এমনিতেই দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে সরবরাহ আরও কমে যায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সাগরে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে আজ দিনভর বাসাবাড়ি ও শিল্পে ভোগান্তি চরম আকার নেয়। তবে এদিন সন্ধ্যা থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুই এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। গত সোমবার দেওয়া হয় প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার থেকে টার্মিনালগুলোতে এলএনজি আমদানি করা কার্গো যুক্ত হতে পারছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনালে মজুত এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করে লাইনে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সরবরাহ কমতে শুরু করে। বুধবার সন্ধ্যায় সরবরাহ কমে ২০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসে। বৃহস্পতিবারও দিনভর ২০-২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে এলএনজি টার্মিনালগুলো।
দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৮১ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ কমায় মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশজুড়ে সংকট বিরাট আকার ধারণ করে।
আজ সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, বিকেলের মধ্যে দুই টার্মিনালে দুটি কার্গো জাহাজ যুক্ত হয়েছে। সন্ধ্যায় এলএনজি সরবরাহ বেড়ে ৬০ কোটি ঘনফুট হয়েছে। সকাল নাগাদ তা ১০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা করেন।
ভোগান্তি
ঢাকার গোপীবাগ এলাকার ঝর্ণা রায় বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তাঁর বাসায় গ্যাস নেই। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও তাঁর স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে জানান, তাদের এলাকাতেও গ্যাস নেই। চুলা জ্বলছে না। জানতে চাইলে সন্ধ্যায় ঝর্ণা বলেন, সকাল থেকে চুলায় গ্যাস ছিল না বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে একটু চাপ বেড়েছে, তাও চুলা জ্বলার মতো গ্যাস আসেনি। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা রফিকুল জানান, বুধবার রাত থেকেই গ্যাসের চাপ কম ছিল। বৃহস্পতিবার সারাদিন চুলা জ্বলেনি। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে হয়েছে।
ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর অঞ্চলের শিল্পকারখানাগুলোতেও বুধবার থেকে গ্যাসের সংকট বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ কারখানায় বৃহস্পতিবার দিনভর উৎপাদন বন্ধ ছিল। অনেকে উৎপাদন ধরে রাখতে ডিজেলসহ অন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করেন।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকার গৃহিণী সানজিদা আক্তার জানান, গ্যাস না থাকায় তিনি চুলা জ্বালাতে পারেননি। তাই সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারও আনতে হয় হোটেল থেকে।
হোটেলগুলোতে দেখা যায় খাবার কিনতে যাওয়া মানুষের দীর্ঘ সারি। এ অবস্থা শুধু বহদ্দারহাটের নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার চিত্রও ছিল এমন। গ্যাসের অভাবে সংকটে পড়ে চট্টগ্রামের কারাখানাগুলোও।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম খান বলেন, তাদের গ্যাস সরবরাহ ২৮ কোটি ঘনফুট ১৬ কোটিতে নেমেছে। এ জন্য সংকট হচ্ছে।
গ্যাসের সংকট দেখা দেয় কুমিল্লাতেও। আজ ভোর থেকে সরবরাহ একেবারে কমে যায়। গ্যাস সংকটে বৃহস্পতিবার বিপাকে পড়েন চাঁদপুর জেলার ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহক। বুধবার সকাল থেকে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। আজ সকাল থেকে একবারে বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার গৃহিণী লাবণী বলেন, সকালে (বৃহস্পতিবার) চুলা ধরাতে গিয়ে দেখি খুবই কম গ্যাস আসছে। সকাল ৯টার দিকে গ্যাস আসা পুরো বন্ধ হয়ে যায়।