বিশ্বের ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর লগইন রেকর্ডস বা পাসওয়ার্ড বেহাত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনলাইনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রকাশনা সাইবারনিউজের গবেষকরা এ দাবি করেছেন।

তারা বলছেন, ‘ইনফোস্টিলার’ নামে একটি ম্যালওয়ার (ক্ষতিকর সফ্টওয়্যার) দিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে এসব লগইন রেকর্ডস। এই ধরনের ম্যালওয়ার গোপনে মানুষের ব্যবহৃত ডিভাইস থেকে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড চুরি করে হ্যাকারদের কাছে পাঠায়। পরে হ্যাকাররা এসব তথ্য সরাসরি ব্যবহার করে অথবা ডার্ক ওয়েবের ফোরামে বিক্রি করে দেয়।

গবেষকরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তাদের সমস্ত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন ও ডিজিটাল সুরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সাইবারনিউজে গবেষণা দলের একজন সদস্য ও ইউক্রেনীয় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বব দিয়াচেঙ্কো বলেন, সাইবার অপরাধীরা যখন ডেটাসেটগুলোকে দূরবর্তী একটি সার্ভারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে; তখন বিষয়টি আমরা জানতে পারি। আমরা ফাইলগুলো ডাউনলোড করতে সক্ষম হয়েছি এবং যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য ফাঁস হয়েছে- তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। এতে অবশ্য কিছুটা সময় লাগবে; কারণ প্রচুর ডেটা রয়েছে।

ডিয়াচেঙ্কো আরও বলেন, ইনফোস্টিলার লগে আমরা যে তথ্য দেখেছি তার মধ্যে অ্যাপল, ফেসবুক ও গুগল লগইন পেইজের ইউআরএল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সাইবারনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে গুগল, ফেসবুক ও টেলিগ্রাম একাউন্টের ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে গিটহাবের মতো ডেভেলপার অ্যাকাউন্ট। এছাড়া কিছু সরকারি পোর্টালের লগইন তথ্যও এতে রয়েছে। বেশির ভাগ তথ্য সুসংগঠিতভাবে সাজানো। সেখানে ওয়েবসাইটের লিংক, ব্যবহারকারীর নাম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে, যাতে হ্যাকাররা সহজেই তা ব্যবহার করতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ তথ্য চুরির ঘটনা এতটাই পেশাদার, পরিকল্পিত ও গোছানোভাবে করা হয়েছে যে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এটিকে শুধু একটি সাধারণ হ্যাকিং বা চুরি বলছেন না। বরং বৈশ্বিক সাইবার অপরাধের ব্লুপ্রিন্ট বা নীলনকশা বলে অভিহিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৩০টি বড় ডাটাসেট সংগ্রহ করা হয়েছে। যার প্রতিটিতে লাখ থেকে হাজার হাজার কোটি লগইন নথি রয়েছে। সেখান থেকে মোট ১ হাজার ৬০০ কোটির বেশি লগ ইন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
সাইবারসিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গুরুত্বপূর্ণ সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। শক্তিশালী ও ভিন্ন ধরনের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (টু-এফএ) চালু করা। পাশাপাশি একটি ভালো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহার করা এবং তথ্য ফাঁস হয়েছে কিনা ডার্ক ওয়েব মনিটরিং টুল ব্যবহার করে পরীক্ষা করা।

গুগল এরই মধ্যে মানুষকে গতানুগতিক পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে পাসকির মতো আরও সুরক্ষিত বিকল্প সুইচ করার পরামর্শ দিয়েছে। এফবিআই জনসাধারণকে এসএমএস বা ই-মেইলের মাধ্যমে আসা লিংকগুলোয় ক্লিক করা এড়িয়ে চলতে সতর্ক করছে। বিশেষ করে যেগুলোয় লগইন তথ্য চাওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প সওয় র ড ব যবহ র কর প সওয় র ড স রক ষ প সওয

এছাড়াও পড়ুন:

জিমেইল ব্যবহারকারীদের জন্য গুগলের জরুরি সতর্কতা

বিশ্বজুড়ে জিমেইলের ১৮০ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর জন্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত নতুন নিয়ম চালু করেছে গুগল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে জিমেইল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ সীমিত বা অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গুগলের তথ্যমতে, সম্প্রতি জিমেইলের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, জিমেইল ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট কিছু আপডেট বাধ্যতামূলকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবহারকারীকে গুগলের পক্ষ থেকে ই–মেইল ও লগইন স্ক্রিনের মাধ্যমে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এসব বার্তায় ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে বলা হচ্ছে। সময়মতো নির্দেশনা না মানলে ব্যবহারকারীরা তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার হারাতে পারেন। গুগল বলছে, এই উদ্যোগ মূলত বাড়তে থাকা স্প্যাম, ফিশিং ও ভুয়া ই-মেইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই নেওয়া হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক সন্দেহজনক মেইল প্রতিরোধ করা হলেও সাইবার অপরাধীদের প্রতারণার কৌশল আরও জটিল হয়ে উঠছে। তাই নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরও কঠোর ও সর্বজনীন করে তোলা হয়েছে। আর তাই ব্যবহারকারীদের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো হালনাগাদ করতে হবে।

লগইন পদ্ধতি

শুধু ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে লগইন এখন যথেষ্ট নয়। এর পরিবর্তে ওঅথ ২.০ নামের টোকেনভিত্তিক নিরাপদ লগইন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। গুগলের ভাষ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ আধুনিক অ্যাপ এই পদ্ধতি ইতিমধ্যে সমর্থন করে।

রিকভারি তথ্য হালনাগাদ

ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টে সংযুক্ত বিকল্প ই–মেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর হালনাগাদ করা থাকলে, যেকোনো জটিল পরিস্থিতিতে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার অনেক সহজ হয়। আর তাই ব্যবহারকারীদের অবশ্যই রিকভারি তথ্য হালনাগাদ করতে পারে।

টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু

ব্যবহারকারীদের গুগল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা ট্যাব থেকে ‘টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন’ চালু করতে হবে। এসএমএস, অথেনটিকেটর অ্যাপ বা ফিজিক্যাল সিকিউরিটি–কি, যেকোনো একটি মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যাপল, ফেসবুক, গুগলসহ অন্যান্য পরিষেবার ১৬০০ কোটি তথ্য ফাঁস
  • জিমেইল ব্যবহারকারীদের জন্য গুগলের জরুরি সতর্কতা