Prothomalo:
2025-08-07@09:20:34 GMT

রাঙা বউয়ের সন্ধানে

Published: 22nd, June 2025 GMT

দুর্লভ ও বিরল পাখির খোঁজে ১১ জানুয়ারি ২০২৫ রাতে হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের উদ্দেশে ফটিকছড়ির বাসে চড়লাম। সকালে হাজারিখিল পৌঁছে দ্রুত গাইড নাহিদুল ইসলামের গেস্টহাউসে নাশতা সারলাম। এরপর পাখির খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। পাক্কা দুই ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে একটি নতুন ও একটি দুর্লভ পাখিসহ ১৮ প্রজাতির পাখির ছবি তুললাম। এরপর পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।

পাহাড়টি মোটামুটি উঁচু। কয়েক বছর আগে পরিচিত একজন পক্ষী আলোকচিত্রী এখান থেকে পা পিছলে পড়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। পা ঠিক হতে বেশ সময় লেগেছিল। আমার হাঁটুতে সমস্যা, তাই পাহাড়ে উঠতে ভয় লাগছিল। কিন্তু নতুন পাখি পাওয়ার আশা এবং সঙ্গী ইমরুল হাসান ও ডা.

আশিকুর রহমানের অনুরোধে পাহাড়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাখি খোঁজার সময় কিছুটা বিশ্রাম পাওয়ায় কষ্ট কম হলো। যাত্রাপথে আরও ছয় প্রজাতির পাখি দেখলাম।

প্রায় ৫০ মিনিট হাঁটার পর চমৎকার এক জায়গায় এসে পৌঁছালাম। পাহাড়টি এখানে বেশ খাড়া। নাহিদ আমাকে ফোল্ডিং টুল পেতে বসতে বলে তামাটে লাল দুর্লভ পাখিটি খোঁজা শুরু করল। কয়েক দিন ধরে এখানেই ওটিকে দেখা যাচ্ছে। পাখিটি আমাদের তিনজনের জন্যই নতুন। মাত্র সাত মিনিট খোঁজার পর একটি স্ত্রী পাখিকে সেগুনপাতার আড়ালে পোকামাকড় খুঁজে বেড়াতে দেখা গেল। ১ মিনিট ২২ সেকেন্ডে ১৯টি ক্লিক করলাম। এরপর হঠাৎ সেটি উড়ে গেল।

খানিকক্ষণ পর অতি সুন্দর এক নতুন পাখির দেখা মিলল। ওটির ছবি তুলে পাহাড়ের আরও ওপরে উঠতেই দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে আবারও তামাটে লাল পাখিটিকে দেখা গেল। এবার ৯ মিনিট সময় দিল। পাহাড়ের একবারে চূড়ায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পাখি খুঁজে ফিরতি পথে কিছুটা নামতেই আমাদের মাথার ঠিক ওপরে আবার ওটির দেখা পেলাম। কিন্তু লতাগুল্মের আড়ালে থাকায় কাছে পেয়েও ভালো ছবি তোলা গেল না। সর্বশেষ বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে শেষবারের মতো দেখলাম আকাশমণিগাছের বাকলের ভেতর থেকে রস খেতে। এবার খোলা জায়গায় পেয়ে কিছু ভালো ছবি তোলা গেল, তবে পাখিটি বেশ উঁচুতে ছিল। আড়াই মিনিটে ৪৯টি ছবি তুলে পাহাড় থেকে নামা শুরু করলাম।

অভয়ারণ্যের পাহাড়ে লাগানো আকাশমণিগাছের রস খেতে ব্যস্ত রাঙা বউ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর সাঁওতালপাড়া ফাঁকা

একটি হামলার পর ফাঁকা হয়ে গেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের একটি সাঁওতালপাড়া। পাড়াটিতে মোট ১২টি বাড়ি থাকলেও সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কেবল এক বৃদ্ধা ছাড়া কোনো বাড়িতে আর কেউ নেই। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র।

বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পুলের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১২টি পরিবার এই পাড়ায় ঘর তৈরি করেন। এর মধ্যে সাতটি সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবার। পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বারনই নদী। নদীর পড়েই মো. বাবলু নামের এক বিএনপিকর্মীর জমি। এই জমির সামনের জায়গায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারগুলো বসবাস করায় তিনি আগে থেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। যদিও এই জায়গা পাউবোর।

গত বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে বাবলুর সঙ্গে পাড়াবাসীদের হাতাহাতি হয়। এরপর দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় পাড়াটিতে। এর পরপরই লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

যশোরে সাংবাদিকের ছেলে ছুরিকাহত

বগুড়া সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ককে কুপিয়ে আহত

সোমবার সকালে পাড়ায় গিয়ে শুধু হিমেন রবিদাসের বাড়িতে  তাঁর শাশুড়ি অমলা দাসীকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন ১৫ দিন আগে। হাঁটতে পারেন না বলে এখানেই রয়েছেন। অমলা বলেন, ‘‘কয়দিন আগে গণ্ডগোল হয়েছে। তারপর তো কেউ বাড়ি নেই। আমি চলতে পারি না, তাই আছি।’’ 

পাড়ার পরবর্তী বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুৎ বিল ঝুলছে, কোথাও দরজা তালাবদ্ধ, কোথাও দরজা খোলা, তবে কেউ নেই। কোনো ঘরে বিছানায় মশারি টানানো, মেঝেতে পচে যাওয়া ভাত, আবার কোথাও টিনের ঘরে হামলার চিহ্ন রয়েছে স্পষ্ট।

পুলের ওপর দিয়ে একজন ভ্যানচালক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে কয়েকজন পাড়াবাসী মদ খাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের জমির মালিক বাবলু তাদের নিষেধ করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরে, এরপর বাবলুকে মারধর করা হয়। এরপর বাবলু লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা হামলা করেন।

ওই এলাকায় পাওয়া যায় বিএনপিকর্মী বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগমকে। তিনি জানালেন, তার স্বামী বাজারে গেছেন। তিনি শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে, খুব অত্যাচার করে। মদ খেতে নিষেধ করায় আমার স্বামীকে মেরেছে। পরে আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে আসে। কিন্তু কাউকে মারেনি। ওরাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।’’ ঘরবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ডলি দাবি করেন, ‘‘ওরাই নিজেরাই ভেঙেছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ এসে বলেছে, সাঁওতালরা থাকবে, কেউ কিছু বলবে না। এতই যদি দরদ হয়, তাহলে এদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে দিক।’’ 

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় এই পাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ি এলাকায় থাকতেন। কৃষিকাজের জন্য বাগসারা এলাকায় আসতেন। দূরত্বের কারণে স্থানীয় তিন কাউন্সিলরের পরামর্শে তারা পাউবোর এই জায়গায় ঘর তোলেন। হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন চলে গেছেন।

শ্যামল বলেন, ‘‘ঘটনার দিন বাবলু পাড়ার এক নারীকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছিলেন। নিষেধ করায় তিনি ওই নারীকে মারেন। তখন আমাদের যুবকরাও তাকে একটু মারে। এরপর বিকেলে বাবলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের তিনজনকে মারে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই বাবলু আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের কাছে হাঁসুয়া, বল্লম, ছোরা ছিল।’’ 

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমার নিজের বাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা, ২৫টি কবুতর লুট হয়েছে। কেউ কিছু নিয়ে পালাতে পারেনি। হরি আর তার বাড়িওয়ালি ১২ হাজার টাকাসহ বস্তায় জিনিসপত্র ভরে পালাতে গেলে পথ থেকে সেটাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা এখনো ভয়ে আছি।’’ 

সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ 

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। মামলা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ এখনো মামলা করেনি। মামলা না করলে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’’ 
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘তুমি কাজ করবে নাকি?’, একটা প্রশ্ন বদলে দিল জীবনের গল্প
  • কান দিয়ে পানি পড়লে কী সার্জারির দরকার আছে?
  • জন্মের পর হাসপাতালে নবজাতককে রেখে পালিয়ে যান দম্পতি, অতঃপর
  • নষ্ট করতে বলার পরও মোবাইল ফোন রেখে দিয়েছিলেন প্রেমিক, সেই ভুলে ফাঁস স্বামী খুনের রহস্য
  • নড়াইলে তিন বছরের শিশুকে হত্যায় সৎ মায়ের যাবজ্জীবন
  • ছয় বছর পর আবার সভাপতি হচ্ছেন সৌরভ
  • ছবি পোস্ট করে কটাক্ষের শিকার, ক্ষুব্ধ শ্রীময়ী
  • প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন
  • এশিয়া কাপের প্রিলিমিনারি স্কোয়াডে সোহান-সৌম‌্য-সাইফ
  • হামলার পর সাঁওতালপাড়া ফাঁকা