Prothomalo:
2025-11-17@11:03:13 GMT

রাঙা বউয়ের সন্ধানে

Published: 22nd, June 2025 GMT

দুর্লভ ও বিরল পাখির খোঁজে ১১ জানুয়ারি ২০২৫ রাতে হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের উদ্দেশে ফটিকছড়ির বাসে চড়লাম। সকালে হাজারিখিল পৌঁছে দ্রুত গাইড নাহিদুল ইসলামের গেস্টহাউসে নাশতা সারলাম। এরপর পাখির খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম। পাক্কা দুই ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে একটি নতুন ও একটি দুর্লভ পাখিসহ ১৮ প্রজাতির পাখির ছবি তুললাম। এরপর পাহাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।

পাহাড়টি মোটামুটি উঁচু। কয়েক বছর আগে পরিচিত একজন পক্ষী আলোকচিত্রী এখান থেকে পা পিছলে পড়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। পা ঠিক হতে বেশ সময় লেগেছিল। আমার হাঁটুতে সমস্যা, তাই পাহাড়ে উঠতে ভয় লাগছিল। কিন্তু নতুন পাখি পাওয়ার আশা এবং সঙ্গী ইমরুল হাসান ও ডা.

আশিকুর রহমানের অনুরোধে পাহাড়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাখি খোঁজার সময় কিছুটা বিশ্রাম পাওয়ায় কষ্ট কম হলো। যাত্রাপথে আরও ছয় প্রজাতির পাখি দেখলাম।

প্রায় ৫০ মিনিট হাঁটার পর চমৎকার এক জায়গায় এসে পৌঁছালাম। পাহাড়টি এখানে বেশ খাড়া। নাহিদ আমাকে ফোল্ডিং টুল পেতে বসতে বলে তামাটে লাল দুর্লভ পাখিটি খোঁজা শুরু করল। কয়েক দিন ধরে এখানেই ওটিকে দেখা যাচ্ছে। পাখিটি আমাদের তিনজনের জন্যই নতুন। মাত্র সাত মিনিট খোঁজার পর একটি স্ত্রী পাখিকে সেগুনপাতার আড়ালে পোকামাকড় খুঁজে বেড়াতে দেখা গেল। ১ মিনিট ২২ সেকেন্ডে ১৯টি ক্লিক করলাম। এরপর হঠাৎ সেটি উড়ে গেল।

খানিকক্ষণ পর অতি সুন্দর এক নতুন পাখির দেখা মিলল। ওটির ছবি তুলে পাহাড়ের আরও ওপরে উঠতেই দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে আবারও তামাটে লাল পাখিটিকে দেখা গেল। এবার ৯ মিনিট সময় দিল। পাহাড়ের একবারে চূড়ায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পাখি খুঁজে ফিরতি পথে কিছুটা নামতেই আমাদের মাথার ঠিক ওপরে আবার ওটির দেখা পেলাম। কিন্তু লতাগুল্মের আড়ালে থাকায় কাছে পেয়েও ভালো ছবি তোলা গেল না। সর্বশেষ বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে শেষবারের মতো দেখলাম আকাশমণিগাছের বাকলের ভেতর থেকে রস খেতে। এবার খোলা জায়গায় পেয়ে কিছু ভালো ছবি তোলা গেল, তবে পাখিটি বেশ উঁচুতে ছিল। আড়াই মিনিটে ৪৯টি ছবি তুলে পাহাড় থেকে নামা শুরু করলাম।

অভয়ারণ্যের পাহাড়ে লাগানো আকাশমণিগাছের রস খেতে ব্যস্ত রাঙা বউ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম