হোটেল বয় থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিল্লাল, মাসে আয় লাখ লাখ টাকা
Published: 22nd, June 2025 GMT
একসময় হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন শেরপুরের নকলার বিল্লাল হোসেন। বেতন ছিল মাসে ১০ হাজার টাকা। সেই বিল্লালের এখন মাসিক আয় কয়েক লাখ টাকা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও তৈরি করে এই আয় করেন।
বিল্লাল এখন ফেসবুকে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাঁর পেজের নাম ‘থটস অব বিল্লাল’, অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। ছন্দে ছন্দে কথা বলে বানানো ভিডিও তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করেন। সেসব ভিডিওর লাখ লাখ ভিউ হয়। সেই ভিউর ভিত্তিতেই তিনি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করেন।
উপজেলার হুজুরীকান্দা গ্রামের মৃত কৃষক আবুল কালামের ছেলে বিল্লাল। নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এসএসসি পাস করেছেন ২০১৩ সালে, এইচএসসি ২০১৫ সালে। এরপর তিনি বিএসসিতে ভর্তি হন। খরচ চালাতে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। পরে ২০১৯ সালে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ভর্তি হন।
পরের বছর চাকরির খোঁজে কক্সবাজারে গিয়ে বিল্লাল একটি হোটেলে কাজ পান। মাস শেষে পেতেন ১০ হাজার টাকা। করোনার প্রকোপ শুরু হলে চাকরি হারান তিনি। এরপর তাঁর মনে হয়, তিনি বিদেশে যাবেন। এক দালালকে ৬০ হাজার টাকাও দেন। তবে তিনি প্রতারণার শিকার হন। ২০২১ সালে আবার কক্সবাজারে গিয়ে একটি হোটেলে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। সেই সময় তিনি হোটেলের অতিথিদের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া ও আদবকেতা শেখার চেষ্টা করতেন।
হোটেলে চাকরির সময়টায় বিল্লাল মন দিয়ে পত্রিকা পড়তেন। ইউটিউবে রান্নার রেসিপি দেখতেন। নিজে রান্না করে নতুন স্বাদের খাবার তৈরির চেষ্টা করতেন। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ‘থটস অব বিল্লাল’ নামের ফেসবুক পেজ খুলে তিনি ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন। ভিডিওতে থাকত নিজের রান্না, জীবনের কথা ও মানবিক নানা গল্প। যখন থেকে বিল্লাল ছন্দে ছন্দে ছোট ছোট ভিডিও বা রিলস তৈরি করা শুরু করলেন, তখন থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল।
২০২৪ সালের আগস্টে বিল্লাল হোটেলের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি কনটেন্ট তৈরির কাজে মন দেন। মাত্র কয়েক মাসে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ৩ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০ লাখের কাছাকাছি। বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে ফেসবুক থেকে তাঁর আয় ছিল আট লাখ টাকা। ডিসেম্বরে তাঁর আয় দাঁড়ায় ১৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৪ লাখ ৬৭ হাজার, মার্চে ৪ লাখ ১৪ হাজার ও এপ্রিলে ৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।
ভিডিও তৈরির কাজে বিল্লালকে সহযোগিতা করেন রাকিবুল হাসান। তিনিও হোটেলে কাজ করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এখন বিল্লালের সঙ্গেই আছেন। মাসে বেতন পান ৫০ হাজার টাকা। বিল্লালের পেজে গিয়ে দেখা গেল, অসহায় অনেক মানুষের গল্প তিনি তুলে ধরেছেন। ফলোয়ারদের কেউ কেউ তাঁদের জন্য সাহায্য পাঠালে তিনি সেগুলো পৌঁছে দেন। ভিডিও প্রকাশ করে সেই কথাও সবাইকে জানিয়ে দেন।
বিল্লাল তাঁর সফলতার জন্য মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এসব কাজ শুরুর জন্য তাঁর একটি স্মার্টফোনের দরকার ছিল। তাঁর মা একটি বাছুর বিক্রি করে তাঁকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা দেন। সেই টাকায় তিনি একটি স্মার্টফোন কেনেন। এই ফোন দিয়েই বদলে যেতে থাকে বিল্লালের জীবন। বিল্লাল স্বপ্ন দেখেন, আরও বড় পরিসরে কিছু করার। তাঁর চাওয়া, গ্রামের ছেলেরা যেন তাঁকে দেখে উৎসাহ পান, তাঁরা যেন প্রতিজ্ঞা করেন—‘আমিও পারব’।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আ. লীগ ক্ষমতায় এলে দেইখ্যা নেব’, ওসিকে ভারতীয় নম্বর থেকে হুমকি
সুনামগঞ্জের ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোখলেছুর রহমান আকন্দকে ভারতীয় একটি মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। রবিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে রাইজিংবিডিকে বিষয়টি জানিয়েছেন ওসি।
তিনি বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৩৪ মিনিটে ভারতীয় একটি মোবাইল একটি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল আসে। যেটা আমার অপরিচিত নম্বর ছিল। তাই আমি গুরুত্ব দেইনি। পরে ওই নম্বর থেকে অনেকবার ফোন ও মেসেজ আসে। একপর্যায়ে আমি ফোন রিসিভ করে কে বলছেন- জানতে চাই। তখন ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলে, মোখলেছুর রহমান বলছেন? ওসি ছাতক থানা। আমি উত্তর দেই হ্যাঁ। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করি, কে বলছেন? সে তখন উত্তর দেয়, আমার পরিচয় পরে দেব, আওয়ামী লীগ হারায় নাই, ১০ বছর পরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে, তখন দেইখ্যা নেব। এ কথা শুনে আমি ফোন কেটে দেই। বুঝতে পারি, তার উদ্দেশ্য ভালো নয়।’’
ওসি বলেন, ‘‘এরপর একাধিকবার সে আমাকে মেসেজ দিয়েছে, ‘নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করেন’, ‘আওয়ামী লীগ হারাইয়া যায় নাই’ , ‘আওয়ামী লীগ ১০ বছর পরে হইলেও ফিরবে’, ‘বিষয়টা মাথায় রাইখেন’। আমি তখন তাকে মেসেজ দিয়ে জানালাম, পরিচয় দিয়ে মেসেজ দেবেন দয়া করে। এরপর সে মেসেজ দেয়, ‘দিন ঘুরলে বাংলাদেশের যেখানেই থাকেন ধরা হবে। মাইন্ড ইট।’’
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় সাবেক ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৫
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পাশাপাশি এ ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন বলে জানান মোখলেছুর রহমান আকন্দ।
ঢাকা/মনোয়ার/রাজীব