প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সমালোচনার মুখে তা বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সামাজির সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ শুল্ক-করে কিছু পরিবর্তন এনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। 
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। গত ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট এবং ভবন কেনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছিল। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়। এ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এলো।

অনুমোদিত বাজেট নিয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান  উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।  
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যারা আগে টাকা দেখায়নি (অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে) তাদের এখন কী হবে? তাদের জন্য যেটা আছে, সেটা হচ্ছে তারা রেগুলার ট্যাক্স দেবে। মার্জিনাল ট্যাক্স ৩০ শতাংশ প্লাস ১০ শতাংশ অতিরিক্ত দেবে। এটা কালো টাকা বলে আমরা মনে করি না। ফলে কেউ কিন্তু এটা নিয়ে আপত্তিও করে নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবন বা ফ্ল্যাটে স্কয়ার ফুট অনুযায়ী কর দিয়ে যারা কালো টাকা সাদা করত, রেগুলার ট্যাক্সের থেকে অনেক কম ট্যাক্স দিয়ে তারা পার পেত। সেটা আমরা পাঁচ গুণের মতো বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপরও যেহেতু একটা বড় দাবি এসেছিল, এবার আমরা এটা বিলোপ করে দিয়েছি।’ 

সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ল
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকার পরিবর্তে এবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অবসরভাতা ও সঞ্চয়পত্রের সুদ এতে অন্তর্ভুক্ত নেই।  

শুল্ক-করে যেসব পরিবর্তন
অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক-করের পরিবর্তন নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব ধরনের আয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে করহার ২০ শতাংশ হবে। অন্য সব পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ২৭ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব আয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে করহার ২৫ শতাংশ।
এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ হবে। সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে কমিয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর সাড়ে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝুট থেকে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত বিউটি পার্লারের স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর এবং বলপয়েন্ট কলমের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা। হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব সরক র উপদ ষ ট কর র প বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

কালেটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল, বাজেটে শুল্ক–করে নানা পরিবর্তন

ফ্ল্যাট ও ভবনে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। আজ রোববার আগামী অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় কালোটাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয়েছে।

আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে ২ জুন ঘোষিত বাজেটে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট–সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট কার্যকর করা হবে।

এবারের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করাই বড় পরিবর্তন। ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট এবং ভবন কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। এলাকাভেদে আয়তন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, পৌর এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ১০০ থেকে ২ হাজার টাকা করহারের প্রস্তাব হয়েছে। এ ছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে, অর্থাৎ সাদা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এ সুযোগ নেননি।

এদিকে আজ অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক-করের পরিবর্তন নিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এবার দেখা যাক, শুল্ক-করে কী কী বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আয়কর

১. পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব ধরনের আয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে করহার ২০ শতাংশ হবে।

২. অন্য সব পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ২৭ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে বিবেচ্য আয়বর্ষে সব আয় ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করলে করহার ২৫ শতাংশ।

৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ হবে।

৪. সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট

১. রিফাইন্ড পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর সাড়ে ৭ শতাংশের পরিবর্তে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

২. ঝুট থেকে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তুলার উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

৩. নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত বিউটি পারলারের স্থান ও স্থাপনাভাড়ার ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

৪. বলপয়েন্ট কলমের আমদানি পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা।

৫. হার্টের রিং ও চোখের লেন্স আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।

শুল্ক

১. সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ইনভয়েস মূল্যের ভিত্তিতে শুল্কায়ন–ব্যবস্থা চালু করতে চায় সরকার। এ জন্য ক্রুড পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৩ শতাংশ এবং অন্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ককে কমিয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

২. সৌরশক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিকে আরও সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে সোলার ইনভার্টারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।

৩. দেশে মানসম্পন্ন টায়ার উৎপাদনের জন্য টায়ার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল টেকনিক্যাল স্পেসিফায়েড ন্যাচারাল রাবারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালেটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল, বাজেটে শুল্ক–করে নানা পরিবর্তন