আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থাগুলো এখন কেবল মুদ্রিত বই প্রকাশ করে না, সঙ্গে রাখে অডিও বুক, ই-বুকের মতো ডিজিটাল বই। এর মধ্যে মুদ্রিত বই ও ই-বুক পড়তে হয়, কিন্তু অডিও বুক পড়তে হয় না। শুধু কানের মধ্যে হেডফোনের জ্যাক গুঁজে দিলেই হলো। এ কারণে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে অডিও বুকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পাবলিশার্স উইকলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে গত বছর অডিও বুকের বিক্রি বেড়েছে।
সদ্য প্রকাশিত অডিও পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএ) বিক্রয় জরিপ সার্ভে বলছে, ২০২৪ সালে অডিও বুক বিক্রি দ্বিগুণ অঙ্কের প্রবৃদ্ধির ঘরে ফিরেছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর অডিও বুকের বিক্রি ১৩ শতাংশ বেড়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এই মাধ্যমের বই বছরে ১০ শতাংশ করে বাড়ছিল, তবে ২০২৩ সালে তা সামান্য কমে ৯ শতাংশ হয়েছিল।
তবে সর্বশেষ জরিপে বলা হচ্ছে, গত বছর তথ্য সরবরাহকারী এপিএ সদস্যদের মোট বিক্রি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ কোটি ডলারে। এই বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি ছিল ডিজিটাল অডিও, যার বিক্রি ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট আয়ের ৯৯ শতাংশ। এই বিক্রি জরিপটি পরিচালনা করেছে টোলুনা হ্যারিস ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং এতে অংশগ্রহণ করেছে অডিবল, হ্যাচেট অডিও, হারপারকলিন্স, ম্যাকমিলান, পেঙ্গুইন র্যানডম হাউস, সাইমন অ্যান্ড শুস্টারসহ অন্যান্য প্রকাশনা সংস্থা।
পাবলিশার্স উইকলি বলছে, বিক্রয় পরিসংখ্যান প্রকাশের পাশাপাশি, এপিএ ২০২৫ সালের ভোক্তা জরিপের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকও প্রকাশ করেছে। ভোক্তা জরিপ পরিচালনা করেছে এডিসন রিসার্চ। প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী আমেরিকানদের নিয়ে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় অডিও বুক শুনেছেন। তবে অডিও বুকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্বেগজনক কারণ হলো পাইরেসি বৃদ্ধি।
জরিপে দেখা গেছে, অডিও বুক শ্রোতাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ইউটিউবে অডিও বুক শুনেছেন, যা ২০২৩ সালের ২৭ শতাংশ থেকে বেড়েছে। ইউটিউবে অধিকাংশ অডিও বুকই পাইরেটেড কপি এবং বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। আর ইউটিউব ব্যবহারের পেছনে এটাই ছিল অন্যতম প্রধান কারণ। এপিএ জানিয়েছে, তারা পাইরেসি রোধে নানা সমাধান নিয়ে কাজ করছে।
জরিপে ইউটিউব ব্যবহারের আরেকটি দিক উঠে এসেছে—অ্যাক্সেসিবিলিটি বা সহজপ্রাপ্যতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অডিও বুক তাঁদের পছন্দের প্ল্যাটফর্মে পাওয়া। ৬৩ শতাংশ মানুষ লাইব্রেরির অ্যাপের মাধ্যমে অডিও বুক শোনাকে প্রাধান্য দেন।
অন্যান্য বছরের মতোই সাধারণ কথাসাহিত্য (জেনারেল ফিকশন) আয়ের দিক থেকে শীর্ষে আছে। যার বিক্রয় ২০২৩ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রোমান্স ঘরানার বইয়ের বিক্রি একলাফে ৩০ শতাংশ বেড়েছে, সায়েন্স ফিকশন বা ফ্যান্টাসি বিক্রি বেড়েছে ২১ শতাংশ। উভয় ঘরানাতে গত বছর মুদ্রিত বইয়ের বিক্রিতেও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
অডিও বুক বিক্রিতে প্রাপ্তবয়স্কদের সাহিত্যে বেশি ছিল। বিপরীতে শিশু-কিশোর বিভাগে তুলনামূলক কম ছিল। তবে প্রতিবেদন বলছে, গত বছরে শিশু-কিশোর ও তরুণ বিভাগে ২৬ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। ভবিষ্যতে অডিও বুকের জনপ্রিয়তা কেমন বাড়তে পারে, এমন ভোক্তা জরিপে বলা হয়েছে, অডিও বুক শুনতে আগ্রহী নন ব্যক্তির সংখ্যা ২০২৩ সালের ৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৮ শতাংশ হয়েছে।
সূত্র: পাবলিশার্সউইকলি ডটকম
গ্রন্থনা: রবিউল কমল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল র প বল শ র স গত বছর প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২%
বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল–জুনে দেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।
তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, যা ওই প্রান্তিকের রপ্তানি দক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ (পরে কমে হয়েছে ২০ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক আরোপ। তখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর না হলেও তা ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এবারে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, এ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চীনের শুল্ক এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। সময়মতো পণ্য পাঠানোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা ইত্যাদি কারণে রপ্তানির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে পণ্য পাঠানো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা রপ্তানির গতি শ্লথ করে দেয়।গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কমেছেবিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল–জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কিছুটা কমেছে। এই প্রান্তিকে দেশ থেকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়। তার মানে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।
গত ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের গরমিলের বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। এরপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমে যায়।
রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন আরও বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৫৭ থেকে সাড়ে ৬১ শতাংশ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই–সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর–ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপরের দুই প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে হয় যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৯০ ও ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।