‘চিন্তা করো না, ভালো আছি’ বলে পদ্মায় গোসলে গিয়ে ছেলের মৃত্যু, বাক্রুদ্ধ মা
Published: 26th, June 2025 GMT
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল মা রওশন আরার। তখনো ছেলে তাঁকে বলেছিলেন, ‘চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।’ এরপর বিকেলেই সেই ছেলের পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না মা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাঁর কান্না থামছে না।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের মেদীআশুলাই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কলেজপড়ুয়া ছেলে রিয়াজে রাব্বি তামিমের (২১) জন্য বিলাপ করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রওশন আরা। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রওশন আরা বলেন, ‘ছেলেকে সকালে ফোন দিয়ে কী করো, জানতে চেয়েছিলাম। তখন সে বলে, “মা, আমি সকালে নাশতা খেয়ে কলেজে এসেছি।” ওষুধ খেয়েছে কি না, জানতে চাইলে তখন সে বলে, “মা, আমি ওষুধ খেয়েছি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।” এই বলে সংযোগ কেটে দেয়। এরপর আর ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। সে যে নদীতে যাবে, তা–ও কিছু বলে যায়নি।’
রিয়াজে রাব্বি ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল বুধবার ফরিদপুর সদরের শহরতলির ডিক্রির চর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁদের একজন তামিম। অন্যজন হলেন একই বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ মারুফ (২১)। মারুফের বাড়ি নোয়াখালী সদরের উত্তর শরীফপুর গ্রামে। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা নদীর আনুমানিক ২০ ফুট নিচ থেকে ওই দুই ছাত্রকে উদ্ধার করেন। পরে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনেরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কালিয়াকৈরের মেদীআশুলাই গ্রামে বাড়ির পাশে একটি মাঠে রাব্বির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাব্বি ছিলেন সবার ছোট। বাবা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে চাকরি করেন।
রিয়াজে রাব্বির ২৫ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে ২৩ জুন গাজীপুর থেকে ফরিদপুরে যান উল্লেখ করে বাবা শওকত হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা কম হতো। ওর আম্মু সময় সময় খোঁজ নিত, প্রতিদিন ছেলের সঙ্গে কথা বলত। ২৫ জুন বিকেলে তামিমের এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে, “আঙ্কেল তামিম তো পানিতে পড়ছিল। হাসপাতালে ভর্তি আছে অবস্থা খুব একটা ভালো না।” এর কিছু সময় পর কলেজের এক শিক্ষক ফোন করে বলেন, “আপনি কি তামিমের আব্বু? আপনার ছেলে তো পানিতে পড়েছিল, সে তো আর নেই”।’
রিয়াজে রাব্বির বন্ধু রুমমেট মাহমুদুল হাসান বলেন, বুধবার ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলা শেষে দুপুরে ধলা মোড়ে পদ্মা নদীতে গোসল করতে যান তাঁরা ছয় বন্ধু। গোসল শেষে সবাই তীরে উঠে আসেন। এ সময় আব্দুল্লাহ আল মারুফের জামাকাপড়ে ময়লা লাগে। পরে তিনি ওই ময়লা ধুতে আবার নদীতে থাকা ড্রেজারের পাইপের ওপর যান। এ সময় পা পিছলে নদীতে পড়ে গেলে তাঁকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই বন্ধু তামিম ও আজমির হোসেন। কিন্তু অতিরিক্ত স্রোতের কারণে মারুফ ও তামিম পানিতে ডুবে যান। আজমির কোনোরকমে তীরে ওঠেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনপদ্মায় গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
সেই অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েই আবার খেপে উঠলেন শামার জোসেফ
শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ানদের পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বলতে তাদের বিপক্ষে বোলিংটা উপভোগ করেন। ছোট টেস্ট ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্ট ৫ ইনিংসে বোলিং করেছেন।
তাতে দুইবার ৫ উইকেট আর একবার নিয়েছেন ৪ উইকেট, ৯ টেস্টের ক্যারিয়ারের ৩৩ উইকেটের ১৭টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর পরিসংখ্যানের কথা রাখুন তো! শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললে কিছু একটা হবে হবে বলে মনে হয়। ওটাই তো আসল!
এর বড় কারণ ১৮ মাস আগের ব্রিসবেন টেস্ট। ভাঙা আঙুল নিয়ে বোলিং করে ৬৮ রানে নেন ৭ উইকেট। এভাবেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর জয় এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের পর ব্রিজটাউনে কাল আবার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন শামার জোসেফ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালও তিনি উপহার দিয়েছেন ব্লকবাষ্টার পারফরম্যান্স। স্যাম কনস্টাস, উসমান খাজা, ক্যামেরন গ্রিনকে ফিরিয়েছেন। এরপর বো ওয়েবস্টারকে যেভাবে (মিডল স্টাম্পে পড়া বল বেরিয়ে গিয়ে অফ স্টাম্প ভেঙেছে) বোল্ড করেছেন, তার মূল্য কয়েকটি উইকেটের সমান। নিজেই দিন শেষে বলেছেন—এটি তাঁর করা ক্যারিয়ারের সেরা বলের একটি।
জোসেফ কাদের আউট করেছেন, আরেকবার চোখ বোলান। ১০ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলতে যাওয়া এই দলটাতে চোটের কারণে নেই স্টিভ স্মিথ। বাদ পড়েছেন একসময় যাকে পরবর্তী স্মিথ হিসেবে ধরা হতো সেই মারনাস লাবুশেন।
স্মিথ-লাবুশেনহীন দলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান কনস্টাস, খাজা ও গ্রিনের সঙ্গে তিনি অলরাউন্ডার ওয়েবস্টারকে ফিরিয়েছেন। মানে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা তিনি গড়তেই দেননি। সে কারণেই তো প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে দলটি গুটিয়ে গেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন ম্যাচে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। কৃতিত্ব জেইডেন সিলসও পাবেন অনেকটা। ৫ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে জশ ইংলিশ, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্সের উইকেট আছে।
শুরু থেকেই কাল অস্ট্রেলিয়া দিশেহারা পথিক ছিল। দলে ফেরা কনস্টাসকে শুরুতেই বোকা বানান কনস্টাস। কয়েকটি আউট সুইং করার পর একটি বল ভেতরে ঢুকতেই এলবিডব্লুর শিকার হন এই ওপেনার। শামার জোসেফ তাঁকে কীভাবে আউট করেছেন তিনি বলেছেন এভাবে, ‘আমি মনে করি ওকে ঠিকঠাকভাবে ফাঁদে ফেলেছিলাম। কয়েকটা আউট সুইং দিয়ে শুরু করি, তারপর হঠাৎ বলটা ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিই।’
গ্রিন তো উইকেটে বেশিক্ষণ থাকবেন না এটাই নিয়ম হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন নম্বর তিন কাল করেছেন ৩ রান। এরপর ইংলিশকে আউট করেন সিলস। ২২ রানে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে খাজা ও হেড ৮৯ রানের জুটি গড়ে টেনে তোলেন। ৪৭ রানে খাজা আউট হলে পরের ৬৯ রানে ৭ উইকেট হারায় দলটি। দলে পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন হেড। তাঁকে আউট করেছেন জাস্টিন গ্রিভস।
ব্রিজটাউনে যে যন্ত্রণা অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে, সেটি পাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দলটি ৫৭ রানেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে এখনো পিছিয়ে ১২৩ রানে। মিচেল স্টার্ক দুটি, হ্যাজলউড ও কামিন্স একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঅস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৬.৫ ওভারে ১৮০ (হেড ৫৯, খাজা ৪৭; সিলস ৫/৬০, শামার জোসেফ ৪/৪৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৫৭/৪ (কিং ২৩*, কার্টি ২০; স্টার্ক ২/৩৫, কামিন্স ১/৮)।