বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল মা রওশন আরার। তখনো ছেলে তাঁকে বলেছিলেন, ‘চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।’ এরপর বিকেলেই সেই ছেলের পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না মা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাঁর কান্না থামছে না।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের মেদীআশুলাই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কলেজপড়ুয়া ছেলে রিয়াজে রাব্বি তামিমের (২১) জন্য বিলাপ করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রওশন আরা। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রওশন আরা বলেন, ‘ছেলেকে সকালে ফোন দিয়ে কী করো, জানতে চেয়েছিলাম। তখন সে বলে, “মা, আমি সকালে নাশতা খেয়ে কলেজে এসেছি।” ওষুধ খেয়েছে কি না, জানতে চাইলে তখন সে বলে, “মা, আমি ওষুধ খেয়েছি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।” এই বলে সংযোগ কেটে দেয়। এরপর আর ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। সে যে নদীতে যাবে, তা–ও কিছু বলে যায়নি।’

রিয়াজে রাব্বি ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল বুধবার ফরিদপুর সদরের শহরতলির ডিক্রির চর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁদের একজন তামিম। অন্যজন হলেন একই বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ মারুফ (২১)। মারুফের বাড়ি নোয়াখালী সদরের উত্তর শরীফপুর গ্রামে। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা নদীর আনুমানিক ২০ ফুট নিচ থেকে ওই দুই ছাত্রকে উদ্ধার করেন। পরে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজনেরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কালিয়াকৈরের মেদীআশুলাই গ্রামে বাড়ির পাশে একটি মাঠে রাব্বির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাব্বি ছিলেন সবার ছোট। বাবা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে চাকরি করেন।

রিয়াজে রাব্বির ২৫ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে ২৩ জুন গাজীপুর থেকে ফরিদপুরে যান উল্লেখ করে বাবা শওকত হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা কম হতো। ওর আম্মু সময় সময় খোঁজ নিত, প্রতিদিন ছেলের সঙ্গে কথা বলত। ২৫ জুন বিকেলে তামিমের এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে, “আঙ্কেল তামিম তো পানিতে পড়ছিল। হাসপাতালে ভর্তি আছে অবস্থা খুব একটা ভালো না।” এর কিছু সময় পর কলেজের এক শিক্ষক ফোন করে বলেন, “আপনি কি তামিমের আব্বু? আপনার ছেলে তো পানিতে পড়েছিল, সে তো আর নেই”।’

রিয়াজে রাব্বির বন্ধু রুমমেট মাহমুদুল হাসান বলেন, বুধবার ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলা শেষে দুপুরে ধলা মোড়ে পদ্মা নদীতে গোসল করতে যান তাঁরা ছয় বন্ধু। গোসল শেষে সবাই তীরে উঠে আসেন। এ সময় আব্দুল্লাহ আল মারুফের জামাকাপড়ে ময়লা লাগে। পরে তিনি ওই ময়লা ধুতে আবার নদীতে থাকা ড্রেজারের পাইপের ওপর যান। এ সময় পা পিছলে নদীতে পড়ে গেলে তাঁকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই বন্ধু তামিম ও আজমির হোসেন। কিন্তু অতিরিক্ত স্রোতের কারণে মারুফ ও তামিম পানিতে ডুবে যান। আজমির কোনোরকমে তীরে ওঠেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুনপদ্মায় গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’

প্রকাশ্যে গুলি করে চট্টগ্রামে একের পর এক খুনের ঘটনায় উঠে আসছে তাঁর নাম। হত্যা মামলায় তাঁকে আসামিও করেছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার। পুলিশ তাঁকে হন্য হয়ে খুঁজলেও থেমে নেই তাঁর অপরাধ। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ রায়হানের বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ীকে রায়হান বলেন, ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব।’

হুমকি পাওয়া ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. একরাম। তিনি পাথরের ব্যবসা করেন। আজ সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে তাঁকে ফোন করেন সন্ত্রাসী রায়হান। পরে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো খুদে বার্তায় তাঁকে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার হুমকি দেন।

কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে ব্যবসায়ী একরাম বলেন, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মলে ঘুরতে দেখে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না এবং বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ তাঁকে হুমকি দেন। ওই হুমকির ঘটনায় তিনি পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। এরপর মামলা তুলে নিতে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে হুমকির বিষয়ে থানায় মামলা কিংবা জিডি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ী একরাম।

নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। —আমিনুর রশিদ, সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম), চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।

একরামের স্ত্রী রুমা আক্তার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হুমকির পর রাতে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে বলার সঙ্গে সঙ্গে সোয়াত টিমসহ পুলিশের দল বাসার সামনে পাহারায় রয়েছে। ভয়ে আমার স্বামী এখন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলে সঙ্গে পুলিশ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনরাউজানে যুবদলকর্মী আলম খুনেও আলোচনায় ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের নাম২৬ অক্টোবর ২০২৫

বেপরোয়া ছোট সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ছোট সাজ্জাদ ১৫ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর বাহিনীর দেখভাল করছেন রায়হান।

পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর আগেও হুমকির বিষয়ে মামলা করেছিলেন ওই ব্যবসায়ী।’

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

আরও পড়ুন‘আমি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব’০৮ আগস্ট ২০২৫একের পর এক খুনে রায়হানের নাম

চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী জনসংযোগে অংশ নেওয়া ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করা হয় ৫ নভেম্বর। এর তিন দিন আগে সরোয়ারকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে। নিহত সরোয়ারের বাবা জানান, রায়হান সরোয়ারকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’

এর আগে গত ২৫ অক্টোবর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতলে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে। এই হত্যা মামলায় রায়হানকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, রাজনৈতিক এই হত্যাকাণ্ডে রায়হান ভাড়াটে হিসেবে কাজ করেছেন। জীবিত অবস্থায় মুঠোফোনে আলমগীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আলমগীরকেও রায়হানের নাম উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—তিন দিন আগে হুমকি পেয়েছিলেন সরোয়ার০৬ নভেম্বর ২০২৫

পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে রায়হান তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন।

গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকেও মুঠোফোনে হুমকি দেন রায়হান। তিনি ওই দোকানিকে বলেন, ‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব। ...আকবর সি বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’

চাঁদা না পেয়ে গত ১ আগস্ট চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করার অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। মো. ইউনুস নামের ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। পুলিশ জানায়, রায়হানের নামে গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • রওশন জাহান: বোন, শিক্ষক ও সহযোদ্ধা
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’